প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাকরি চান মাস্টার্স পাশ প্রতিবন্ধী ফারুক
প্রতিবন্ধী যুবক ফারুক আহমেদ (৩২)। মাস্টার্স পাশ করে চাকরির পেছনে ছুটেননি। ব্যতিক্রম কিছু করার তাগিদে গ্রামে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে নিজেই দায়িত্ব নেন প্রধান শিক্ষকের। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অল্পসময়ে বিদ্যালয়টি গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়াতে শুরু করে। কিন্ত করোনার প্রকোপে বিদ্যালয়টি বন্ধ হলে বেকার হয়ে যান ফারুক। এখন জীবিকার তাগিদে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাকরির আকুতি জানিয়েছেন তিনি।
ফারুকের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দার সাধুপাড়া গ্রামে। ছোটবেলায় পোলিও রোগে ফারুকের দুটো পা নিশ্চল হয়ে যায়। বয়স বাড়ার সাথে দু পায়ে ভর দিয়ে চলাফেরা শুরু করেন। এখন চলাচল করেন বিশেষ রিকশায়।
রোববার (২৪ এপ্রিল) বার্তা২৪.কমের সাথে কথা হয় ফারুকের। কথায় কথায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গল্পটা বের হয়ে আসে ফারুকের মুখ থেকেই। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মার্স্টাস পাশ করার পর পত্রিকায় আমাকে নিয়ে খবর ছাপা হয়। সেইসূত্রে বাড়িতে আসেন ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ লায়ন এমকে বাশার ও সাংবাদিক মোস্তফা মল্লিক। তাদের অনুপ্রেরণায় ২০১৭ সালে পৈত্রিক জমিতে টিনশেড ঘর তুলে এমআর শিক্ষা সংবাদ নামে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করি। বিদ্যালয়টিতে প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শাখা রয়েছে। প্রথম বছর প্রধান শিক্ষক সহ ৮ জন শিক্ষক ও ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিদ্যালয়টি। কয়েক বছরেই শিক্ষার্থী বেড়ে তিনগুণ হয়। গত বছর করোনায় বিদ্যালয় বন্ধ হলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। চলতি বছর শিক্ষার্থীদের বই দিলেও করোনায় পাঠদান বন্ধ হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী মাদরাসায় চলে যায়। এতে করে বিদালয়ের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়ে। শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকা থেকে শিক্ষকদের বেতন দাপ্তরিক খরচ হত। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষকদের বেতন বন্ধ। আমি নিজেও বেকার।
চলতি বছর ফারুকের চাকরির বয়সসীমা চলে গেছে। কয়েকমাস বন্ধ ধরে তার প্রতিবন্ধী ভাতা। টাকার অভাবে ব্যবসা করতে পারছেন না। পরিবার বিয়ের চেষ্টার করলেও ফারুক বেকার বলে কনে পক্ষ মুখ ফিরিয়ে নেয়।
ফারুক আহমেদ আরও জানান, প্রতিবন্ধী কোটায় প্রাইমারি, শিক্ষক নিবন্ধন ও খাদ্যপরিদর্শক পদে চাকরির আবেদন করা আছে। সেখান থেকে চাকরি পেলে নিজে বাঁচবো, বিদ্যালয়কেও বাঁচাতে পারবো। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি আমাকে চাকরি দিয়ে যেন মাথা উঁচু করে বাঁঁচার সুযোগ দেওয়া হয়।
ফারুকের বড় ভাই আব্দুল হামিদ বলেন, প্রতিবন্ধী হয়েও ফারুক টিউশনি করে মার্স্টাস পাশ করেছে। স্কুলে ব্যস্ত হওয়ায় চাকরির চেষ্টা করতে পারেনি। এখন বেকার ভাইয়ের জীবন কিভাবে কাটবে এটাই দুশ্চিন্তা। তবে আমার বিশ্বাস ফারুকের আকুতি সরকারের কাছে পৌঁছলে সে অবশ্যই চাকরি পাবে। কিন্তু, আকুতিটা পৌঁছাবো কিভাবে?