ঠাকুরগাঁওয়ে নদীর চরে ভূমিহীন কৃষকের সোনালী স্বপ্ন
ঠাকুরগাঁও শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গন নদী নাব্য হারিয়ে মরা খালে পরিণত হওয়ার পথে। বালু ও পলি জমে ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। কমে গিয়েছে পানির প্রবাহ। নদীর বুকে জেগে উঠেছে চর। স্থানীয় ভূমিহীন কৃষকরা সেই চরেই ফলাচ্ছেন সোনার ফসল।
টাঙ্গন ও সুক নদীর দু-ধারে কয়েক হেক্টর জেগে ওঠা চরে বোরো ধান চাষ করে দরিদ্র ভুমিহীন কৃষকেরা নিজেদের ভাগ্যে পরিবর্তন করেছেন। গত মৌসুমে কৃষকেরা বাজারে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর টাঙ্গান ও সুক নদীর দু-ধারে জেগে ওঠা চর এলাকায় ভূমিহীন অসহায় কৃষকেরা বোরো ধান চাষ করে। সেই সাথে এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখছেন চাষীরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৫৮ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে। বোরো ধানের উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪২৫ মেট্রিকটন এবং চাল উৎপাদন হতে পারে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫০ মেট্রিকটন। আর গত বছর আবাদ হয়েছিলো ৫৮ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫০মেট্রিক টন। এবং চাল উৎপাদন হয়েছিলো ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩০০ মেট্রিকটন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার আকচা, পাটিয়াডাঙ্গী, চরঙ্গী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া টাঙ্গন নদীর দু-ধারে চর পড়েছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভূমিহীনরা এ চরকেই চাষাবাদের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। নদীর চরে চাষ করে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও এসেছে অনেক ভুমিহীন কৃষকের। আর ধান গাছের সবুজ রঙে বদলে গিয়েছে নদীর চিত্রও।
চাষীরা জানান, নিজের জমি না থাকায় বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর চরে কয়েক বছর ধরে ধান চাষ করছে তারা। ধান চাষ করে ঘরে আর চালের অভাব থাকে না। সামান্য পরিচর্যা ছাড়া কোনও প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। সেচ দেওয়া লাগে না। অল্প খরচেই হয়ে যায়।
রহমান নামে এক কৃষক বলেন, আমাদের চাষাবাদ করার মত কোন জমি-জমা নেই। নদীর দু-ধারে জেগে ওঠা চরে বোরো ধান চাষ করলে কাউকে টাকা দেওয়া লাগে না। তাই নদীর চরে ধান চাষ করেছি।
কৃষক মান্নন বলেন, নদীর পানি যখন কমতে শুরু করে আমরা তখন বোরো ধান রোপন করি। খরচ খুবই কম হয়। এ বছর বিঘা খানেক জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। আশা রাখি ভালো ফলন হবে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন জানান, ভূমিহীন কৃষকেরা বালুচরে জমি আবাদ করে নিজেদের অবস্থার পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। আগে জমিগুলো পড়ে থাকত। এখন তাঁরা আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন।