কুমিল্লায় আধাপাকা ধান কেটেছে আপন ভাই, থানায় মায়ের অভিযোগ
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলায় তুলাতুলি গ্রামে এক জাপান প্রবাসীর খেতের আধাপাকা ধান কেটে নিয়ে গেছে তারই আপন ভাই। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই প্রবাসীর মা।
অভিযুক্ত ইসমাইল দুই দফায় জাপান প্রবাসীর দুটি খেতের আধাপাকা ধান কেটে নিয়ে গেছেন। সর্বশেষ শনিবার (১ মে) দিবাগত রাতে ২০ শতকের একটি জমির ধান কেটে নেন তিনি। এর আগে গত ২০ এপ্রিল কেটে নেন আরও ৮ শতক জমির ধান।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা ঘটনাস্থালে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। ছেলের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগকারী বৃদ্ধা আমেনা বেগম ওই গ্রামের মৃত নরুল ইসলামের স্ত্রী। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ইসমাইল হোসেন খোকন ওই বৃদ্ধার মেঝ ছেলে। ভুক্তভোগী জাপান প্রবাসী ফরিদুল আলম তার বড় ছেলে। এছাড়া ধানকাটার ঘটনায় পুলিশের কাছে স্বাক্ষ্য দেওয়ায় এক কৃষি শ্রমিককেও মারধরের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অভিযুক্ত ইসমাইল হোসেন খোকনের স্ত্রী সালমা আক্তার বিউটি কুমিল্লা জেলা পরিষদের সদস্য ও মহিলা প্যানেল চেয়ারম্যান এবং দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে রয়েছেন। তার দাপটে একের পর অপকর্ম করছে খোকন। এর আগে চলতি বছরের ৩ মার্চ ছেলে খোকন ও পুত্রবধূ বিউটির বিরুদ্ধে সম্পত্তি জবরদখলের চেষ্টা ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন বৃদ্ধা আমেনা বেগম।
বৃদ্ধা আমেনা বেগম বলেন, গত ডিসেম্বরে আমার বড় ছেলে জাপান প্রবাসী ফরিদুল আলম ছুটিতে বাড়িতে এসে তার বন্টনকৃত জমিতে চাষাবাদ করে। এরই মধ্যে দুই দফায় আমার মেঝ ছেলে ও তার লোকেরা ফরিদুলের চাষাবাদ করা জমির আধাপাকা ধান জোরপূর্বক কেটে নিয়েছে। আমি এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে নির্যাতন করতে আসে। হুমকি দিয়ে বলেছে, বাড়াবাড়ি করলে মেরে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে। ইসমাইল ও তার স্ত্রী বিউটি রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে বেশ কয়েক বছর ধরে আমার উপর অত্যাচার করছে। গত কয়েক বছর আগে আমি বলেছিলাম আমার বয়স হয়ে গেছে, আমার স্বামীর রেখে যাওয়া সকল সম্পত্তি সন্তানদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দেব। এরপর থেকেই ইসমাইল ও তার স্ত্রী বিউটি আমার উপর অত্যাচার শুরু করে। তারা চায় সকল সম্পত্তি জবরদখল করতে।
কৃষি শ্রমিক মো.আলম বলেন, ফরিদুল ছুটিতে বাড়ি এসে তার ভাগের জমিতে ধান রোপন করেছে। আমি জমিগুলো দেখাশোনা করেছি। ইসমাইল জোরপূর্বক রাতের অন্ধকারে জমিগুলোর ধান কেটে নিয়ে গেছে। আমি পুলিশের কাছে সত্য বলাতে তারা আমাকে পিটিয়েছে। হুমকি দিয়ে বলেছে, পিটিয়ে গ্রাম থেকে বের করে দিবে।
রোববার (২ মে) বিকেলে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো.শাহ আলম বলেন, অভিযুক্ত ইসমাইল হোসেন খোকন খুবই বেপরোয়া একজন মানুষ। তিনি অন্যায়ভাবে জমির আধাপাকা ধানগুলো কেটে নিয়েছেন। আমি প্রথম ঘটনার পর সরেজমিনে গিয়ে তাকে বুঝিয়ে বলেছি, কিন্তু তিনি কারও কথাই মানেন না। এরই মধ্যে আরেকটি জমির ধান কেটে নিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ হয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত ইসমাইল হোসেন খোকন বলেন, জমিতে ধান আমি লাগিয়েছি, এজন্য কেটেছি। আমার মায়ের করা এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তারা (প্রবাসী ভাই) টাকা বেশি দেয়, এজন্য মা তাদের পক্ষে। আমার স্ত্রী ও আমি দুজনই শিক্ষকতা করি। এসব মিথ্যা অভিযোগ করে আমাদেরকে হেও করা হচ্ছে। আমার বড় ভাই গত ৩২ বছর ধরে জাপানে বসবাস করছে। গত ১৭ বছর ধরে সংসার আমি পরিচালনা করছি। আমরা মাকে কোন প্রকার নির্যাতন করিনি।