কবিগুরুর জন্মবার্ষিকীতে এবারও নিস্তব্ধ শিলাইদহ
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬০তম জন্মবার্ষিকী আজ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনন্য পুরুষ, কথা-ছন্দ-সুরের মহানায়ক, কাব্যগীতির শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৬৮ সালের ২৫ বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রতিবছর এই জন্মবার্ষিকীতে ব্যাপক আয়োজন থাকলেও করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহের কুঠিবাড়ি এ বছরেও নিস্তব্ধ। সেখানে নেই কোনো আয়োজন, নেই আলোচনা, নেই কোনো সংগীতের মূর্ছনা, তাল-লহরী, নেই রবীন্দ্রপ্রেমীদের আনাগোনা।
পঁচিশে বৈশাখ বিশ্বকবির এই জন্মজয়ন্তীতে সকাল থেকেই রবীন্দ্রপ্রেমী, ভক্তসহ দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে থাকতো। এছাড়াও আলোচনা অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ, নৃত্যশিল্পী, কণ্ঠশিল্পীসহ সংবাদকর্মীদের ভিড়ে লোকারণ্য থাকতো গোটা কুঠিবাড়ির আঙিনা। গেলো বছর বৈশ্বিক মহামারী করোনা প্রাদুর্ভাবে কোন অনুষ্ঠান হয়নি। এবারও খুলছে না প্রধান ফটক। নেই কোন আয়োজন।
শিলাইদহ কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান মোখলেসুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান জাতীয় পর্যায়ের হয়ে থাকে। সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এখানে জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে নানান অনুষ্ঠানের আয়াজন করা হয়। মহামারি করোনাভাইরাস দুর্যোগে কোনো অনুষ্ঠানের নির্দেশনা নেই। তাই গেলো বছরের মতো এবারও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত এই শিলাইদহে কোনো অনুষ্ঠানই হচ্ছে না।
সাহিত্যিক ইমাম মেহেদী বলেন, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে তার রয়েছে অসামান্য অবদান। কবিগুরুর দার্শনিক চিন্তাসমৃদ্ধ গভীর জীবনবাদী চিন্তা জাগানিয়া লেখায় অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে বাংলার জল, বাংলার মাটি, বাংলার ফল আর বাংলার আলো-বাতাসে বেড়ে ওঠা মানুষ।
তিনি সারা জীবন হৃদয়ের গহিনে লালন করেছেন মানব মুক্তির দর্শন। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেই দর্শন অন্বেষণ করেছেন। তার কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাসসহ সব সৃষ্টি মানুষকে আজও সেই অন্বেষণের পথে, তার অন্বিষ্ট উপলব্ধির পথে আকর্ষণ করে। তবে এবারের জন্মজয়ন্তীতে একেবারেই ম্লান করে দিয়েছে করোনা দুর্যোগ।
জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ'র কেন্দ্রিয় পরিষদ সদস্য অশোক সাহা বলেন, শিলাইদহে 'পদ্মা' নামে একটি বিলাসবহুল পারিবারিক বজরায় চড়ে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতে যেতেন তিনি।
১৯০১ পর্যন্ত তিনি কাটিয়েছিলেন শিলাইদহে। সেখানে বসেই তিনি লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ সোনার তরী, চিত্রা, ক্ষণিকা ও চৈতালির অসংখ্য কবিতা। গীতাঞ্জলি কাব্যের অনুবাদের কাজও তিনি শুরু করেছিলেন শিলাইদহে। সে সময় প্রজাদের কল্যাণে তিনি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সেখানে থাকাকালে তিনি দেখেছিলেন তাঁদের জমিদারিতেই প্রজারা কীভাবে শোষণের শিকার হয়েছেন। প্রজাদের কল্যাণে তিনি সেখানে একটি দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রও স্থাপন করেছিলেন।
ওই সময় তিনি তাঁর গল্পগুচ্ছ বইয়ের প্রায় ৫০টির মত গল্প লেখেন। এসব গল্পে তিনি মূলত গ্রাম বাংলা দারিদ্র ও বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরেছিলেন।
এদিকে শনিবার সকালে ঐতিহাসিক টেগোর লজে কবিগুরুর আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ কুষ্টিয়া শাখার নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫ বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ অঞ্চলে জমিদারি পাওয়ার পর ১৮৮৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে জমিদার হয়ে আসেন। ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারি পরিচালনা করেন। এ সময় এখানে বসেই তিনি রচনা করেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী, ইত্যাদি, গীতাঞ্জলি কাব্যের অনুবাদও করেন।