ঈদ যাত্রায় সড়কে ঝরেছে ৩২৩ প্রাণ
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারের দেওয়া কঠোর লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বিদায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরে যাতায়াতে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সম্মিলিতভাবে ৩২৩টি দুর্ঘটনায় ৩৩১ জন নিহত ও ৭২২ জন আহত হয়েছে। এছাড়া দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত ও ৬২২ জন আহত হয়েছে। আর শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা।
রোববার (২৩ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে সংগঠনটি আয়োজিত ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২১ প্রকাশ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব তথ্য জানান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
মোজাম্মেল হক বলেন, লকডাউনের কারণে মানুষের যাতায়াত সীমিত হলেও গণপরিহন বন্ধ থাকার সুযোগে সড়কে ব্যক্তিগতযান বিশেষ করে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যানে গাদাগাদি করে যাতায়াতের কারণে এবারের ঈদে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি দুটোই বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদের ছুটি শুরুর দিন ৭ মে থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ২১ মে পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত, ৬২২ জন আহত হয়েছে। উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ২টি ঘটনায় ২ জন নিহত হয়েছে। নৌ-পথে ৩টি দুর্ঘটনার ৬ জন নিহত ও ১০০ জন আহত হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে যৌথভাবে ১২৩টি দুর্ঘটনায় ৩৩১ জন নিহত ও ৭২২ জন আহত হয়েছে। অথচ দেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি শিকার করে লকডাউনের মতো কঠিন কর্মসূচি ও বিপুল অর্থ খরচ করে ও বিশাল কর্মযজ্ঞের কারণে একই সময়ে করোনার ভয়াল থাবা প্রতিরোধ করে সংক্রমণে মৃত্যু ৫১৪ জনের মধ্যে সীমিত রাখতে সক্ষম হয়েছে। অথচ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় সমসংখ্যক প্রাণহাণি ও ক্ষয়ক্ষতি হলেও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কোন কর্মসূচি বা অর্থ বরাদ্দের লেশমাত্র ছিল না।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৪৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩৯ জন নিহত, ১৯৯ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, নিহতের ৪৩ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং আহতের ৩১.৯৯ শতাংশ প্রায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৩১ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন র্যাব সদস্য, ০১ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ২ জন বিজিবি, ৩৫ জন নারী, ৩৩ জন চিকিৎসক, ২২ জন শিশু, ১৩ জন শিক্ষার্থী, ৩৭ জন শিক্ষক, ৯৬ জন চালক, ৩১ জন পরিবহন শ্রমিক, ০১ জন প্রকৌশলী, ৬৯ জন পথচারী, ০২ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায় মোট যানবাহনের ৩৬.৯৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২.৩৭ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান লরি, ১৩.২৪ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৭.৫৩ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর- লেগুনা- মাহিন্দ্রা ৭.০৭ শতাংশ অটোরিকশা, ৬.৮৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক ভ্যান-সাইকেল, ও ৫.৯৩ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
ছয় বছরে ঈদযাত্রায় সর্বাধিক মৃত্যু
যাত্রী কল্যাণ সমিতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ছয় বছরের মধ্যে এবারই ঈদযাত্রায় (ঈদুল ফিতর) সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সংগঠনটির দেওয়া হিসাব অনুযায়ী ২০১৬ সালে ১২১ জন, ২০১৭ সালে ২০৫ জন, ২০১৮ সালে ২৭৭ জন, ২০১৯ সালে ২৩২ জন, ২০২০ সালে ১৪৯ জন এবং ২০২১ সালে ৩১৮ জন মারা গেছেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরা বলেন, লকডাউনে দেশে গণপরিবহন বন্ধ ও মানুষের যাতায়াত অত্যন্ত সীমিত থাকার পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, সড়কে নিরাপত্তার দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করার ফলে মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ মানুষের যাতায়াতে এত বেশি সংখ্যক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ৭ দফা সুপারিশ জানানো হয়।
সুপারিশগুলো হলো— জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা; দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ এবং যানবাহনের ত্রুটি সারানোর উদ্যোগ গ্রহণ; ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা; সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কমঘণ্টা সুনিশ্চিত করা; সড়কে রোড সাইন রোড মাকিং স্থাপন করা। সড়ক পরিবহন আইন যথাযতভাবে বাস্তবায়ন করা। ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ রোধ করা; গণপরিবহন বিকশিত করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিজারটিএর অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা।