লাল পতাকায় চিন্তার ভাজ উপকূলজুড়ে
উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও আরও ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ক্রমশ শক্তি সঞ্চার করে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আতঙ্ক বাড়ছে খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে। উপকূলীয় অঞ্চলে বিপদ সংকেতের লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে। সবাইকে সতর্ক করতে চলছে মাইকিং। দমকা বাতাসের সাথে খুলনায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এ যেনো লাল পতাকায় চিন্তার ভাজ উপকূলজুড়ে।
মঙ্গলবার (২৫ মে) সকালেই ঝড়ের পূর্বাভাস জানিয়ে সতর্কতার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে। রেড ক্রিসেন্ট, সিপিপির ২৪ হাজার কর্মী ও বিভিন্ন বেসরকারি এনজিওর ১১০০ সদস্য নদী ও চরাঞ্চলে সতর্কতামূলক মাইকিংয়ের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। একই সাথে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেওয়া হলেই উপকূলের সব অঞ্চলে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।
খুলনার উপকূলীয় এলাকা দাকোপের পানখালি ও ঝপঝপিয়া নদীর আশপাশের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২/৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করার পাশাপাশি লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে শুরু হয়েছে মাইকিং। মজুদ করা হচ্ছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি। সিপিপি ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রতিটি বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকরা।
খুলনার উপকূলীয় অঞ্চল দাকোপ উপজেলার পানখালী গ্রামে সিপিপির কমান্ডার ইকরামুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যারা ঝুঁকিতে আছে তাদের নিরাপদে অর্থাৎ সাইক্লোন শেল্টারে নেওয়ার জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত আছি।
তিনি বলেন, ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেওয়ার সাথে সাথেই লাল পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছি। ঝড়ের পূর্বাভাস পেলেই সবাইকে নিরাপদে নিয়ে আসবো। এছাড়া সব সময়ই মাইকিংয়ের মাধ্যমে সবাইকে সতর্ক করছি। দুর্যোগ মোকাবিলায় এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে আমাদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগকালীন উদ্ধার তৎপরতার জন্যও আমরা প্রস্তুত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দক্ষিণের তিন উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রায় প্রায় সব নদীতে পানির চাপ বাড়ছে। একই সাথে বাতাসের বেগও বাড়ছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, দুপুর পর্যন্ত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা বন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ সর্বোচ্চ ৮৯ কিলোমিটার, যা ঝড়ো হাওয়া বেগে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি ধীর গতিতে এগিয়ে আসছে খুুলনা ও পশ্চিমবঙ্গের দিকে।
এ রিপোর্ট লেখার সময়ে খুলনায় ঝড়ো বাতাসের সাথে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।