বেনাপোল স্থলবন্দরে বর্জ্যের স্তুপ, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মানুষ
বেনাপোল স্থলবন্দরে কেমিক্যাল বর্জ্য বছরের পর বছর যেখানে-সেখানে ফেলে রাখা হচ্ছে। এতে জায়গা সংকটে ব্যবসা বাণিজ্যে সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে। তবে বর্জ্য সরানোর তাগিদ নেই বন্দর কর্তৃপক্ষের।
কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি বন্দর থেকে লোকালয়ে প্রবেশ করে গাছপালা, মাছ চাষ ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে। গ্রামবাসী অবরুদ্ধ জীবন যাপন করছে। এছাড়া বন্দরে যারা ২৪ ঘণ্টা পণ্য খালাসের কাজ করছে সেই শ্রমিকরাও নিরাপদ নয়। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীরা গত ৫ বছরে ধরে বার বার বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলেও মেলেনি সমাধান।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, অগ্নিকাণ্ডে সৃষ্টি হওয়া এসব কেমিক্যাল বর্জ্য আইনি জটিলতার কারণে তারা সরাতে পারছেন না। তবে এসব বর্জ্যে যাতে ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতি বা মানুষের দুর্ভোগের কারণ না হয় সে বিষয়ে নজর দিবেন।
বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা আমিনুল হক জানান, দেশে শিল্প কারখানায় ব্যবহারের জন্য কেমিক্যাল জাতীয় যে পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ আসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। এসব আমদানি পণ্যের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের এসিড জাতীয় কেমিক্যাল ও পাউডার জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য রয়েছে। কিছু কিছু কেমিক্যাল বা রাসায়নিক দ্রব্য এত বিপদজনক যে ট্রাকে বা গোডাউনে থাকা অবস্থায় নিজে থেকে তেজস্ক্রিয় হয়ে আগুন ধরে যায়। অগ্নিকাণ্ডের পর সে সব বর্জ্য বন্দর কর্তৃপক্ষ নিরাপদ কোন জায়গায় সরিয়ে না নেওয়ায় বছরের পর বছর বন্দরের জনবসতি এলাকার রাস্তাঘাট ও বন্দর অভ্যন্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এতে মারাত্মক ভাবে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।
ভুুক্তভোগী বেনাপোল বন্দরবাসী বদর উদ্দীন বলেন, বন্দরের নিজস্ব পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এসিড মিশ্রিত পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে যেমন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে তেমনি গাছপালা ও ঘরবাড়ি নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া নিরাপত্তার নামে বন্দর কর্তৃপক্ষ গ্রামবাসীর প্রবেশদ্বার প্রাচীর দিয়ে আটকে দেওয়ায় ছেলে মেয়েদের লেখা-পড়াসহ চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগী মানুষ বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণের দাবি জানিয়ে চিঠি দিলেও সমাধান মেলেনি।
বন্দরে পণ্য খালাসে নিযুক্ত শ্রমিক হাবিবুর রহমান জানান, ময়লা আবর্জনা আর পড়ে থাকা কেমিক্যাল বর্জ্যের মধ্যে তাদের কাজকর্ম এবং চলাফেরা করতে হয়। এতে বারো মাস শারীরিক ভাবে কোন না কোন রোগে অসুস্থ থাকি।
ভারতীয় ট্রাক চালক অরবিন্দ বলেন, বেনাপোল বন্দরে জায়গা সংকটের কারণে পণ্য খালাসের জন্য দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বর্জ্য অপসারণ হলে জায়গা সংকট অনেকটা কমবে।
পরিবেশবাদী সংস্থা গ্রীন ওয়ার্ল্ড এনভাইরনমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আশিক মাহামুদ সবুজ বলেন, কেমিক্যাল বর্জ্য বাতাসে মিশে বিষক্রিয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বছরের পর বছর ধরে বন্দর অভ্যন্তরে প্রচুর জায়াগা জুড়ে কেমিক্যাল বর্জ্য ফেলে রাখায় জায়গা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। তাই ব্যাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে এবং বন্দর ব্যবহারকারীরা পড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। এগুলো নিষ্কাশন করা খুব জরুরি।
বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল বলেন, আইনি জটিলতায় কেমিক্যাল বর্জ্য আপাতত সরানো যাচ্ছে না। তবে খুব দ্রুত যাতে এসব নিষ্কাশন হয় এবং এলাকায় এসিড মিশ্রিত পানি প্রবেশ না করে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
জানা যায়, গত ৫ বছরে বেনাপোল বন্দরে ছোট বড় ৬ টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় দুই হাজার মে. টন কেমিক্যালসহ বিভিন্ন পণ্যের বর্জ্য স্তুপ জমা হয়েছে।