সিরাজগঞ্জে বজ্রপাতে ২২দিনে ১৮ জনের মৃত্যু
সিরাজগঞ্জে বজ্রপাতে ২২ দিনে শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমিক ও নারীসহ ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (৭ জুন) বিকেলে এনায়েতপুরের খুকনী বাজার এলাকায় জহির উদ্দিন মোল্লা (৪৫) নামের একজন নিহত হয়েছেন।
এর আগে, গত ৬ জুন বজ্রপাতে ৫জন মারা গেছেন। এসময় আহত হয়েছে অনেকে। নিহতদের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
জেলার শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, তাড়াশ, কামারখন্দ ও রায়গঞ্জে বজ্রপাতে গত ২২ দিনে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে বজ্রপাতে জেলায় আহত হয়েছে ১৫ জন এবং ৫টি গরুর মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন, জেলার শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের চর আঙ্গারু গ্রামের আমানত হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ (২৬), নরিনা ইউনিয়নের বাতিয়া গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে আলহাজ বাবুর্চি (৫০), সলঙ্গা ইউনিয়নের আঙ্গারু বাঘমারা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪৫), উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের আগদিঘল গ্রামের শাহেদ আলীর ছেলে, উধুনিয়া মানিকজান উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ফরিদুল ইসলাম (১৫) ও বেলকুচি উপজেলার চর সমেশপুর গ্রামের লাইলি বেগম (৫০)।
গত ৩ জুন সন্ধ্যায় উল্লাপাড়া উপজেলায় বাঙ্গালা ইউনিয়ন ও বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নে বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন, উপজেলার বাঙ্গালা ইউনিয়নের পাড়মোড়দহ গ্রামের মৃত্যু আব্দুর রহিমের ছেলে সেলিম রেজা (৩০) ও বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের হাওড়া গ্রামের লালচাঁন মিয়ার ছেলে আব্দুল আলিম (৩৭)।
গত ১ জুন সকালে কামারখন্দ উপজেলায় বজ্রপাতে ইসলাম মন্ডল (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার ঝাঐল ইউনিয়নের বড়ধুল গ্রামের ইয়াহিয়া মন্ডলের ছেলে।
গত ৩০ মে বিকেলে শাহজাদপুরে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে দুই কৃষক। উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের ব্রজবালা লেদুরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এসময় আরও এক নারী আহত হন।
নিহতরা হলেন, ওই গ্রামের মৃত্যু নজরুল ইসলামের ছেলে সোহেল রানা (৪২) ও আলম মিয়ার ছেলে জাহিদুল ইসলাম (২৫)। আহত অপরজন একই এলাকার আলম হোসেনের স্ত্রী ফুর্তি খাতুন (২৬)।
গত ২৪ মে বিকেলে শাহজাদপুর উপজেলার চিথুলিয়া, দুগলি ও উল্লাপাড়া উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকায় বজ্রপাতে চারজন মারা যান।
নিহতরা হলেন, শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের দুগলি গ্রামের আজম ব্যাপারীর ছেলে নাজমুল (১৫), কায়েমপুর ইউনিয়নের চিথুলিয়া গ্রামের আজগর আলীর ছেলে হাসেম আলী (২৫) ও সোলাইমান মোল্লার স্ত্রী ছাকেরা বেগম (৫৬) এবং উল্লাপাড়া উপজেলার পশ্চিম কৃষ্ণপুর গ্রামের মো. মোশাররফ হোসেনের মেয়ে মোহনা খাতুন (১৭)। মোহনা খাতুন গয়হাট্টা সালেহা ইসহাক উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও নাজমুল স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
১৭ মে সন্ধ্যায় কাজিপুরে দুর্গম চরাঞ্চল চরগিরিশে রুবেল রানা (২৮) নামের এক কৃষক বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। পরে সন্ধ্যায় সরিষাবাড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
একই দিন রায়গঞ্জে মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে হোমিও মেডিকেল কলেজের এক আদিবাসী ছাত্রের মৃত্যু হয়। বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের বাকাই সিংপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ছাত্র নিরঞ্জন সিং (২১) ওই গ্রামের অধীন সিংয়ের ছেলে।
ওইদিন তাড়াশে বজ্রপাতে হালিমা খাতুন (৫৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের নাড়া তেঘুরি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হালিমা খাতুন ওই গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী।
মঙ্গলবার (৮ জুন) সকালে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় থেকে বজ্রপাতে নিহতদের যে সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। তা পর্যায়ক্রমে নিহতদের পরিবারের মাঝে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এপ্রিল ও জুন মাসে বজ্রপাত বেশি হয়। বজ্রপাত থেকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করা। আকাশে মেঘ দেখা গেলে ঘরে অবস্থান করা, জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় না থাকা, দ্রুত দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেওয়া, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকা, ঘন-কালো মেঘ দেখা গেলে রাবারের জুতা পরে বাইরে বের হওয়া, উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, তার, ধাতব খুঁটি ও মোবাইল টাওয়ার থেকে দূরে থাকা, বজ্রপাতের সময় জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করা, খোলা জায়গা, মাঠ বা উঁচু স্থানে না থাকা, কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা, জলাশয় থেকে দূরে থাকা, বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে থাকলে পায়ের আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙ্গুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়া, এবং বজ্রপাতের সময় মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করার পরামর্শ দেন তিনি।