নওগাঁয় সাংবাদিকের ওপর হামলা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁয় জমি রেজিষ্ট্রিতে অতিরিক্ত ফি আদায়, প্রতিবাদ করায় সাংবাদিকের ওপর হামলা

নওগাঁয় জমি রেজিষ্ট্রিতে অতিরিক্ত ফি আদায়, প্রতিবাদ করায় সাংবাদিকের ওপর হামলা

নওগাঁর মান্দায় জমি রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদ করায় প্রসাদপুর দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা এক সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে তিনি আহত অবস্থায় মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মঙ্গলবার (৮ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রসাদপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, মান্দা উপজেলার ভারশোঁ গ্রামের আসাদ আলী জমি রেজিস্ট্রি করতে প্রসাদপুর দলিল লেখক সমিতিতে আসে সাংবাদিক আব্বাস আলীর বড় ভাই আসাদ আলী। তিনি সমিতির এক দলিল লেখকের সঙ্গে আলোচনা করেন একটি দলিল ১২ লাখ টাকা মূল্যে করতে চান। পরে দলিল লেখক ১০ দশমিক ৫ টাকা হারে ১২ লাখ টাকার দলিলে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানানো হয়। বিষয়টি আসাদ আলী তার ছোট ভাই সাংবাদিক আব্বাস আলীকে জানায়। এরপর আব্বাস দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কিছুটা কম খরচে করার অনুরোধ জানায়।

এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আব্বাস আলী দলিল লেখক সমিতিতে স্বশরীরে গিয়ে সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তারের সঙ্গে দেখা করে আবারও কিছুটা কম করার অনুরোধ জানায়। কিন্তু বাবুল আক্তার তেমন গুরুত্ব না দিয়ে নিজের কাজ করেন। তিনি আবারও বাবুল আক্তারের কাছে জানতে চান সরকারি খরচ আসলে কত? এতে বাবুল আক্তার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দেওয়ালে টাঙানো কাগজ থেকে দেখে আসতে বলেন।

বিজ্ঞাপন

দেখে আসা এবং বিষয়টি বুঝতে পারা সময় সাপেক্ষ এজন্য আবারও তার কাছে জানার অনুরোধ করেন। বুঝতে হলে সমিতিতে ভর্তি হতে হবে এবং ক্লাস করতে হবে বলে বাবুল জানান। এতে আব্বাস আলী মনোক্ষুন্ন হয়। পরে এক পর্যায়ে সমিতি থেকে তাকে জোর পূর্বক বের করে দেয়। পরে সাংবাদিক আব্বাস প্রসাদপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে অফিসের ভেতর থেকে বের করে দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার ও সাংগঠনিক সম্পাদক আলামিন রানার নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে। পরে কয়েকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়।

আহত সাংবাদিক আব্বাস আলীর বড় ভাই আসাদ আলী বলেন, জমির রেজিষ্ট্রি করতে অতিরিক্ত ফি চাওয়ার প্রতিবাদ করায় আমার সামনে ১০- ১২জন দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা ঘিরে রেখে সংঘবদ্ধভাবে আমার ছোট ভাইয়ের ওপর হামলা ও মারপিট করে। আমি বাঁধা দিতে গেলে আমাকেও চড়-থাপ্পর মারে। আমি জড়িতদের কঠিন শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। 

প্রত্যক্ষদর্শী শরিফুল ইসলাম বলেন, আমিও জমি রেজিষ্ট্রি করতে গিয়েছিলাম। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ করে দলিল লেখক সমিতির ১০-১২ সদস্যরা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের ভিতরে সাংবাদিক আব্বাসকে মারপিট করতে লাগলে আমি তাকে উদ্ধার করতে গেলে নিজেও আঘাতপ্রাপ্ত হই। এঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

আহত সাংবাদিক আব্বাস আলী জানান, দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তারের কাছে দলিলের সরকারি খরচ জানতে চাইলে তিনি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দেওয়ালে টাঙানো কাগজ থেকে দেখে আসতে বলেন। এরপর আমি জানায় দেখে আসতে সময়ের ব্যাপার যেহেতু আপনি জানেন একটু বলেন। এতে তিনি আমাকে সমিতিতে ভর্তি হতে বলেন এবং ক্লাস করতে বলেন। এতে আমি মনোক্ষুন্ন হয়। এ সময় সাধারণ সম্পাদকের বাম পাশে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক আলামিন রানা আমার ওপর রেগে গিয়ে সমিতি চত্বর থেকে বের করে দেয়। এরপর আমি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে যায়। সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে প্রবেশ করামাত্র ঘর থেকে বের করে নিয়ে বাবুল আক্তার ও আলামিন রানা সহ ১০ থেকে ১২জন চারদিক থেকে ঘিরে রেখে অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারপিট করে জমি রেজিস্ট্রি বাবদ নগদ তিন লাখ টাকা, প্যানাসনিক ৪ কে ক্যামেরা যার মূল্য এক লাখ ত্রিশ হাজার, একটি ল্যাপটপ যার মূল্য পঞ্চাশ হাজার, এন্ড্রয়েড মোবাইল ছিনতাই করে অফিসে থেকে বের করে দেয়। পরে স্থানীয় কয়েকজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। আমি হামলাকারীদের নামে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

মান্দা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার সিরাজুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি যখন ঘটে তখন আমি অফিসে ছিলাম না। বিষয়টি জানার পর আমি উভয় পক্ষকে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেছি। তারা কেউ বসতে রাজি হয়নি। তবে আমি বিষয়টি তদন্ত করছি।

মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) শাহিনুর রহমান জানান, ঘটনাটি আমি মৌখিকভাবে জানার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি তদন্তের জন্য। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।