দিবাযত্ন কেন্দ্রে শিশু হারালে দশ বছরের কারাদণ্ড
কর্মজীবী ও পেশাজীবী মায়েদের শিশুর জন্য মানসম্মত উপযুক্ত স্থানে নিরাপদ ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যার লক্ষ্যে শিশুর দিবাকালীন অবস্থানের জন্য শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র-২০২১ বিল পাস করেছে জাতীয় সংসদ। বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা।
বুধবার (১৬ জুন) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে বিলে জনমত যাচাই ও সংশোধনী প্রস্তাব দেন বিরোধী দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য। তাদের প্রস্তাবের পক্ষে আলোচনা করলেও জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে প্রেরণের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে বাতিল হয়।
এর আগে গত ৩ এপ্রিল বিলটি উত্থাপন করেন প্রতিমন্ত্রী। পরে বিলটি অধিকতর যাচাই- বাছাই করার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
সংসদে পাস হওয়া বিলটি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন-২০২১ নামে অভিহিত হবে। উত্থাপিত বিলে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন সম্পর্কে বলা হয়েছে- এই আইন প্রবর্তনের পর সরকারি আধাসরকারি স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থাপনায় নির্ধারিত শ্রেণির কেন্দ্র স্থাপন করতে পারবে। (২) তবে শর্ত থাকে যে সরকার সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত কোন কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে নিবন্ধন গ্রহণের প্রয়োজন হবে না।
বিলে কর্তব্যে অবহেলার দ্বন্দ্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে- কোন ব্যক্তির কর্তব্য অবহেলার কারণে কেন্দ্রে অবস্থানকালে কোনো শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ হলে বা স্বাস্থ্যহানি ঘটলে উহা হবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনূর্ধ্ব (২) বছর কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
শিশুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের দণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে: কোন ব্যক্তি কেন্দ্রে শিশুর সাথে নির্ধারিত নিষ্ঠুর আচরণ করলে হবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য ২ মাসের কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
কেন্দ্র হতে শিশু নিখোঁজ বা হারিয়ে যাওয়ার দণ্ড: কোন কেন্দ্র হতে কোন শিশু নিখোঁজ বা হারাইয়া গেলে উহা হবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
বিলে অভিভাবকের সাথে মত বিনিময় সম্পর্কে বলা হয়েছে- কেন্দ্র পরিচালনাকারী ব্যক্তি প্রত্যেক তিন মাসে অন্যুন একবার করে সেবাগ্রহণকারী অভিভাবকের সঙ্গে নির্ধারিত পদ্ধতিতে মতবিনিময় সভার আয়োজন করবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যৌথ পরিবার প্রথা ব্যবস্থার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে এবং একক পরিবারের সংখ্যা দেশে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে দিন দিন কর্মজীবী ও পেশাজীবী মায়েদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সরকারি আধাসরকারি স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিকে দিনের বেশিরভাগ সময় নিজ গৃহের বাইরে অবস্থান করতে হয় এবং তার শিশুর জন্য মানসম্মত উপযুক্ত স্থানে নিরাপদ ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যার লক্ষ্যে শিশুর দিবাকালীন অবস্থানের জন্য শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র এর প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সেই পেক্ষাপটে শিশুদের মানসম্মত পরিচর্যার জন্য বিশ্বস্ত সহায়ক সেবাকারীর অভাব পরিলক্ষিত হয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন-২০২১ প্রণয়নকল্পে বিলটি আনা হয়েছে।