লকডাউনে জেরার ভয়ে রাস্তায় বের হচ্ছে না মানুষ!
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সাতদিনের কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিনে অন্যান্য দিনের চেয়ে রাস্তায় মানুষ ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ও গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও তা খুব বেশি নয়। বের হলেই পড়তে হচ্ছে জেরার মুখে। ফলে বাইরে গাড়ি নিয়ে মানুষজন খুব প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন না।
সরেজমিনে শনিবার (৩ জুলাই) রাজধানীর ফার্মগেট, বিজয় সরণী, জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পাশাপাশি ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষের সংখ্যা একেবারে নেই বললেই চলে।
অপরদিকে, মানুষ যাতে রাস্তায় বিনা কারণে বের না হয় সেজন্য তাদের আটকাতে কিছুদূর পর পর পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পাশাপাশি কিছুক্ষণ পর পর বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনীর গাড়ি টহল দিচ্ছে।
ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া এক ডাক্তার বলেন, সরকার থেকে আমাদের বাইরে বের হওয়ার অনুমতি থাকলেও প্রায় প্রতিটি চেকপোস্টে আমাদের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। তবে এটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ঝামেলা বা হয়রানি বলতে চাচ্ছি না। বরং আমি বলবো তারা ঠিক কাজেই করছে।
অপরদিকে রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়া ইন্টারনেট অফিসে কাজ করা সেলিম বলেন, কারণ ছাড়া বের হওয়ার সুযোগ নেই কারো। পকেটে অফিসের কার্ড থাকার পরও যেভাবে পুলিশ চেক করছেন, তাতে মনে হচ্ছে কার্ড ছাড়া বের হলে নির্ঘাত জেলে যেতে হবে।
মোটরসাইকেল চালক রবিন বলেন, গতকালকে বৃষ্টির মধ্যেও পুলিশ যেভাবে চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করছে, আর আজকে তো কথাই নেই, পাইলেই মামলা। এর ফলে বাইরে কয়েক দিনের মত আর লোকজন নেই। আরও বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের হলেই ১০০০ বা ২০০০ টাকা মামলা দিবে পুলিশ ধরলে। এই ভয়ে অনেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছে। তারপরেও বউ বাচ্চার কথা চিন্তা করে অনেকটা ভয়ে ভয়ে রাস্তায় বের হয়েছি।
মহাখালীতে যাত্রীর আশায় বসে থাকা রিকশাচালক কাদের বলেন, পেটের ভাতের ট্যাহায় হচ্ছে না আবার জমা। হাফ ভাড়ায় যাওয়ারেই লোক নাই। আকাশ ভালো ভাবছিলাম ক্ষ্যাপ হইবো কিন্তু মানুষ রাস্তায় বাইর না হওয়ায় ক্ষ্যাপ নাই।
রাজধানীর ফ্যালকন টাওয়ারের সামনে হেলিপ্যাড চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মামুন বার্তা২৪.কম-কে জানান, লকডাউনের প্রথম থেকে আমরা সরকারের আইন অনুযায়ী রাস্তায় দায়িত্ব পালন করছি। বিনা কারণে মানুষজন যাতে বের হতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখছি। বিশেষ করে জরুরি কারণ ছাড়া মানুষ গাড়ি নিয়ে কিংবা অন্য মাধ্যমে বের হলে আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বাইরে বের হওয়ার কারণ নিশ্চিত হয়ে তারপর ছাড়ছি।
তিনি আরও জানান, আজকে লকডাউনের তৃতীয় দিনে, আকাশ পরিষ্কার থাকায় মানুষজন তাদের প্রয়োজনীয় কাজে বের হচ্ছেন বলে আমাদের কাছে জানাচ্ছেন। বেশির ভাগ মানুষ হাসপাতাল, ব্যাংক, টেলিযোগাযোগ কিংবা করোনা টেস্টসহ প্রয়োজনীয় কাজে বের হচ্ছেন। একজনের কাজে সাথে অন্য একজনকে নিয়ে বের হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সকাল থেকে আমরা এমন লোকও পেয়েছি যে, অসুস্থ মেয়েকে হাসপাতালে নিতে বাবা-মাসহ তিনজন বের হয়েছে। অন্যদিকে আবার বাবাকে হাসপাতালে নিতে ছেলে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীর গেটের সামনে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ ইন্সপেক্টর শাহজাহান আলী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, মানুষজন প্রতিনিয়ত জেরার সম্মুখীন হচ্ছে বাইরে বের হওয়ার জন্য। লকডাউনের তৃতীয় দিনে এসে অনেকে বুঝতে পারছেন যে, বাইরে বের হলেই আমাকে বারবার চেকপোস্টে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, ফলে আবহাওয়া অনুকূল থাকলেও বিনা প্রয়োজনে মানুষ ততটা বের হচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, বিশেষ করে অসুস্থ রোগী, গার্মেন্টস, শিল্প কারখান, ডাক্তার, নার্স, ইন্টারনেট, টেলিযোগাযোগসহ সংশ্লিষ্ট কাজে যারা বের হচ্ছেন তাদের কে আমরা জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিশেষ করে, কাঁচামাল, ওষুধ, শিশুখাদ্য, সরকারের বিধিনিষেধের বাইরে উন্নয়নমূলক কাজের সাথে জড়িতদের নিশ্চিত হয়ে ছেড়ে দিচ্ছি।