এখনো বাড়ি যাচ্ছেন তাঁরা!



নাজমুল হাসান সাগর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবিঃ বার্তা২৪.কম

ছবিঃ বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

একটু আগের ঝুম বৃষ্টি শেষে দুপুরে কড়া রোদ উঠেছে। রাস্তা-ঘাট ফাঁকা, টুকটাক রিকশা চলছে আর কিছু ব্যক্তিগত যান। এসবের মধ্যে ঢাবির কার্জন হল ঘেষা রাস্তা দিয়ে একদল মানুষ ঘাড়ে,মাথায় বা হাতে ছোট বড় ব্যাগ নিয়ে ঢামেকের দিকে হাটছে। দূর থেকে দেখে আন্দাজ করা যায় এনারা কৃষি শ্রমিক। হয় কাজের সন্ধানে যাচ্ছেন, না হয় কাজ শেষ করে বাড়ির পথ ধরেছেন।

শুক্রবার দুপুরে এগিয়ে গিয়ে তাদের সাথে কথা হয়। ১২ থেকে ১৩ জনের এই শ্রমিকদলের একজন আলতাফ বেপারি। তিনি বার্তা২৪.কম-কে জানান, আমরা ছিলাম রুপগঞ্জে।সেখানে ক্ষেতির কাজ করতাম।এখন কাজ শেষ তাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি।আমরা সবাই বগুড়ার ধুনট থানার বাসিন্দা।সব কিছু বন্ধ এর মধ্যে কিভাবে আসলেন ঢাকা পর্যন্ত? এমন প্রশ্মের জবাবে তিনি বলেন,আমরা রিকশা,অটো, ভ্যান আর পায়ে হেটে রুপগঞ্জের আড়াই হাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত এসেছি।এখন গাবতলী যাব।ওখান থেকে কোন না কোনভাবে বগুড়া যাইতেই পারব।

পায়ে হেঁটে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন তিনি

বৃহস্পতিবার লকডাউনের প্রথম দিন গাবতলী বাসস্ট্যান্ড ও ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা। নাঈম, রাজু ও শাকিল নামে সমবয়সী তিন কিশোরকে ঘাড়ে বিশাল বিশাল ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়। প্রশ্ন করে জানা যায়,তারা কর্মহীন হয়ে ঢাকা থেকে বাড়ির পথ ধরেছেন। হেমায়েতপুরের একটি স্যানিটারি কারখানায় কাজ করতেন নরসিংদীর এই তিন কিশোর। এই সময় কারখানা বন্ধ থাকায় তাদের বাধ্য হয়েই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে বলে জানান তারা।

রাজু বার্তা২৪.কম-কে বলেন, হুট করে কারখানা বন্ধ করে দিয়ে মালিক বললো বাড়ি চলে যাও।আমরাও ব্যাগ নিয়া বাইর হয়ে গেলাম। সেই আটটা থেকে বসে আছি গাড়ির অপেক্ষায় কিন্তু কোন গাড়ি নাই।এতক্ষণ হাইটা গেলেও অর্ধেক রাস্তা চইলা যাইতাম।এই লকডাউন আমাগো চরম বিপদে ফালাইছে।

গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন তারা

ষাটোর্ধ্ব আব্দুল হাই দম্পতি ঘুরছেন গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। গন্তব্য টাঙ্গাইল। কোথায় যাবেন জানতে চাইলে আব্দুল হাই উত্তর দেন, “নাম আমার আব্দুল হাই, বাইত যামু গতি নাই।” ভোগান্তিকে কটাক্ষ করতেই বুঝি তার এমন উত্তর।

কিছুদূর হেঁটে, কিছুদূর রিকশায় কিংবা কিছুদূর প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ট্রাকে বা পিকআপে বাড়ি যাচ্ছেন এসব মানুষ।

শনিবার (০৩ জুলাই) গাবতলীতে দেখা মিলে আরও তিন কিশোরের, পেশায় তারা নির্মাণ শ্রমিক। কাজ করতেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে। গতকাল বিকেলে কাজ বন্ধ হওয়ার পর তাঁরা চাপাইনবাবগঞ্জেরর নাচোলে গ্রামের বাড়িতে যাবেন বলে ঘুরছেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তিন বন্ধু মো. রনি ইসলাম, মো. রাসেল ও মো. জনি মিলে আমিনবাজার ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। রনি বললেন, “গতকাল রাত সাড়ে নয়টা থেকে ঢাকায় ঘুরতেছি, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ী গেছিলাম। রাতে আমরা যাত্রাবাড়ি আমের আড়তে ছিলাম। বাড়ি যাওয়ার কিছুই পাই না।”

গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করেছেন তারা

আরেক বন্ধু রাসেল বলেন, “গতকাল নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসতে, ঘুরতে দুই হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। বাকি পথ ভেঙে বাড়ি গেলে হাতে বিশেষ কিছুই থাকবে না আর। ট্রাক খুঁজতেছি আমরা। ঢাকায় তো আমাদের থাকার জায়গা নেই।”


চলমান সাতদিনের বিধিনিষেধের তৃতীয় দিন আজ শনিবার। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গতকালের তুলনায় মানুষের উপস্থিতি কিছুটা কম দেখা গেছে। রাজধানীর বিশ্বরোড, শাহবাগ, ফার্মগেট, আসাদগেট, টেকনিক্যাল ও গাবতলীতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেকপোস্ট ছিল। এসব চেকপোস্টে প্রশাসনের কড়াকড়ি ছিল। চেকপোস্টগুলোতে যাতায়াতের কারণ জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে।

যাদের রাজধানীতে জীবিকার প্রয়োজনে থাকতে হয়, তারা আজ ঢাকা ছাড়ছেন। রাজধানীর গাবতলীতে বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত অন্তত ১৪ জনকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

আমিনবাজার ব্রিজে কথা হয় হাজারিবাগের রিকশাচালক আলতাফ হোসেনের সাথে। তিনি যাবেন সিরাজঞ্জের চোহালী থানার গ্রামের বাড়িতে। যাওয়ার জন্য তিনি ট্রাক খুঁজছেন। তিনি বলেন, “হাজারিবাগ থেকে রিকশায় এসেছি। এখন হাঁটতেছি। ট্রাক খুঁজতেছি। বাড়ি যেতেই হবে। সেখানে পরিবার আছে। আর বাড়িতে একটা গরু আছে। ওইটাকে এবারের ঈদে বিক্রি করবো। দেখার লোক নাই।”

ছবিঃ বার্তা২৪.কম

গাবতলী রাজধানীতে ঢোকার অন্যতম প্রবেশমুখ। ভোর ছয়টা থেকে এখানে ঢাকায় ঢুকতে ও বের হতে হলে পুলিশের চেকপোস্টের মুখে পড়তে হচ্ছে। জরুরি কারণ দেখাতে না পারলে মামলা দেওয়া হচ্ছে। কাউকে আটকও করা হচ্ছে। এই চেকপোস্টে কাজ করছেন দারুস সালাম ট্রাফিক দারুস সালাম জোনের সার্জেন্ট হারুন অর রশীদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, গাবতলী চেকপোস্ট থেকে কোনোভাবেই কেউ চেক ছাড়া যেতে পারছে না। কেউ যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, মামলা দেওয়া হচ্ছে। অনেকে মোটরসাইকেলে একের অধিক যাচ্ছে। জরুরি হলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, নয়তো মামলা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, “কোনো পিকআপ বা ট্রাকে করে কাউকে গাবতলী থেকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। অনেকে ব্যাগ হাতে হেঁটে সেতু পার হচ্ছেন। পার হয়ে তারপর ভেঙ্গে ভেঙ্গে বাড়ি যাচ্ছেন।”

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আজ মানুষ ও বাহনের উপস্থিতি কম ছিল। তবে বেলা বাড়তে তা কিছুটা চোখে পড়েছে। নগরীর প্রধান সড়কের তুলনায় রাজধানীর অলিগলিতে মানুষের জটলা কিছুটা বেশি চোখে পড়েছে।

সকালে খিলগাঁও বিশ্বরোডে কথা হয় খিলগাঁও থানার ইনসপেক্টর দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, চলমান বিধিনিষেধে গত দুদিনের তুলনায় এ সড়কে মানুষের যাতায়াত আজ কম।

তিনি আরও বলেন, মানুষ এখন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মূল সড়কে কম আসছেন। বেলা ১১টা পর্যন্ত তিনি তিনজনকে মামলা দিয়েছেন। একজনের অপরাধ মোটরসাইকেলে ভাড়ায় চলছিলো। বাকি দুজন যাতায়াতের যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারেননি।

   

বগুড়ায় শিশুকে গলা কেটে হত্যা, আসামী কারাগারে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, বগুড়া
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বগুড়ায় মায়ের সাথে হরিবাসর অনুষ্ঠানে বেড়াতে আসা শিশু বন্ধন (৬) হত্যার সাথে জড়িত সুকুমার দাসকে (২৫) কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) তাকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাতে নিহত বন্ধনের বাবা রবি দাস বাদী হয়ে সকুমার দাসকে আসামী করে সদর থানায় মামলা করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তয়ন কুমার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গ্রেফতার সুকুমারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কেও সুকুমার মুখ খুলছে না। বারবার বলছে আমার ভুল হয়ে গেছে। সুকুমারকে অনেকে মানসিক রোগী বলে দাবী করলেও তার স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এদিকে রবিদাসের দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে তার স্ত্রী কাকলী দাসের মামা সুকুমার। মামা-ভাগ্নির পারিবারিক বিরোধের জের ধরে সুকুমার এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। তবে পারিবারিক বিরোধের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আরো জানান, বৃহস্পতিবার হত্যাকাণ্ডের পরপরই সুকুমারকে পুলিশ আটক করে এবং তার দেখানো মতে বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধান কাটা কাঁচি জব্দ করা হয়।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে বগুড়া সদরের শশিবদন গ্রামে মায়ের সাথে হরিবাসর অনুষ্ঠানে বেড়াতে আসা শিশু বন্ধনকে তার মায়ের মামা সুকুমার ঘরে ডেকে নিয়ে কাঁচি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে।

;

এসি বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত ধারণা ফায়ার সার্ভিসের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর আগারগাঁও শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউতে থাকা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বিস্ফোরণে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিক ধারণা ফায়ার সার্ভিসের।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিটের ৪০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

আগুন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন।

তিনি বলেন, দুপুর ২টা ২৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এরপর আমাদের ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে অনুসন্ধান চালায়। তবে আমরা কোনো ভুক্তভোগীকে পাইনি। আগুন লাগার পরপরই আইসিইউতে থাকা সবাইকে সরিয়ে নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বজনরা।

আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা ধরণা করছি আইসিইউর ভেতরে এসি ছিলো। সেটা থেকে হয় তো আগুন লেগেছে। তবে তদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে।

তিনি আরও বলেন, আগুনের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু ভালো আছে। পাশাপাশি আইসিইউ রুমে যে অক্সিজেন সংযোগ ছিলো সেটি আগুনের কারণে পুড়ে যায়। ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা সময় লেগেছে। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় অক্সিজেন লাইনটি বন্ধ করা হয়েছে।

;

গাংনীতে ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ ৫ মাদক কারবারি আটক



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,মেহেরপুর
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

মেহেরপুরের গাংনী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৫ মাদক কারবারীকে আটক করেছে। এদের কাছ থেকে ১১৫ বোতল ফেনসিডিল ও ৪০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সাথে জব্দ করা হয়েছে নগদ ১৫০০ টাকা ও মাদক কারবারে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল। 

বৃহষ্পতিবার রাতে পুলিশের পৃথক পৃথক টীম কয়েকটি অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে।

আটককৃতরা হচ্ছেন- গাংনী উপজেলার করমদি গ্রামের ছাদের আলীর ছেলে স্বপন (৩৮) ও আয়ুব আলীর ছেলে লিটন (৪০), পলাশী পাড়ার মৃত সুজা উদ্দীনের ছেলে টেফেন ওরফে খালিদ মাহমুদ (৩০), আলমডাঙ্গার নগর বোয়ালিয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মামুনর রশীদ (৩০) ও ছাতিয়ান গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে স্বজল (২৭)। এদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু সাপেক্ষে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে মেহেরপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়।

গাংনী থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, মাদক পাচার রোধে গাংনী থানা পুলিশ অভিযানের অংশ হিসেবে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের নামে মাদকের মামলাসহ আদালতে সোপর্দ করা হবে।

;

মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়, জনজীবন বিপর্যস্ত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চুয়াডাঙ্গা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

টানা চার দিন ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। প্রতিদিনই যেন তাপমাত্রার পারদ ক্রমেই উপরে উঠছে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বেলা তিনটায় এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৭ শতাংশ। বৃষ্টি না হওয়ায় এ তাপপ্রবাহ চলছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। 

এদিকে, তীব্র তাপদাহে প্রাণীকূল ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিও যেন তীব্র গরমে বিপর্যস্ত। তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শে সচেতনতামূলক মাইকিং করছে জেলা প্রশাসন।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পরদিন ১২ এপ্রিল থেকেই চুয়াডাঙ্গা জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই তাপমাত্রা বেড়ে চলতি মৌসুমের রেকর্ড ভাঙছে। আজ শুক্রবার দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ১৯ শতাংশ। বেলা তিনটায় তাপমাত্রা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৭ শতাংশ।

মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়, জনজীবন বিপর্যস্ত
 

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) এ জেলায় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার (১৭ এপ্রিল) ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তামপাত্রা রেকর্ড করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, আজ চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চলমান এ তাপপ্রবাহ থাকবে আরও কয়েকদিন। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় গড় তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছে। আর চুয়াডাঙ্গা জেলার অবস্থান কর্কটক্রান্তি রেখার কাছাকাছি হওয়ায় প্রতি বছর মার্চ ও এপ্রিলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে।

তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা হ্রাস পাবে। তবে আপাতত স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে কালবৈশাখী ঝড় হলে তার সাথে বৃষ্টি হতে পারে। এটা আগে থেকে বলা সম্ভব নয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, এ জেলার ওপর দিয়ে কয়েকদিন ধরেই তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই গরমে হিট স্ট্রোকের ঝু্ঁকি থাকে, তাই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শে আমরা জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে সচেতনতামূলক মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করেছি।

গরমে স্বস্তি নিতে ও শরীর ভালো রাখতে ডাবের পানি পান করছেন

এদিকে, টানা তাপপ্রবাহে কাহিল হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে স্থবিরতা।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, কড়া রোদ ও গরম থেকে বাঁচতে অনেকে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউবা আবার নির্জন পরিবেশ খুঁজে বাতাসের জন্য প্রকৃতির দিকে চেয়ে আছেন। তবে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ তীব্র গরম উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েছেন।

আলমডাঙ্গা পৌর শহরের পুরাতন মোটরসাইকেলের হাটে বাইক বিক্রি করতে আসা জসিম উদ্দীন নামের এক যুবক জানান, বাইক নিয়ে হাটে এসে পড়েছি বিপাকে। একে তো খোলা মাঠে হাট, মাথার ওপর সূর্য দাউদাউ করে জ্বলছে। রোদ আর গরমে মনে হচ্ছে শরীর একেবারে পুড়ে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে ছাতাও নিয়ে আসা হয়নি।

চুয়াডাঙ্গা সদরের ডাব বিক্রেতা শমসের মন্ডল জানান, এই তীব্র গরমে তার ডাবের চাহিদা ও বিক্রি দুটোই বেড়েছে। প্রতিদিন যে পরিমাণ ডাব তিনি বাজারে নিয়ে আসেন, সবই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। মানুষ একটু স্বস্তি নিতে ও শরীর ভালো রাখতে ডাবের পানি পান করছেন।

এদিকে, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বেড়েই চলেছে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. উম্মে ফারহানা বলেন, গরমের সাথে হাসপাতালে বেড়েছে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ঈদের পর থেকে এখন পর্যন্ত শয্যা সংখ্যার বিপরীতে অতিরিক্ত রোগী বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। শয্যা সংকুলান না হওয়ার রোগীরা বারান্দা ও করিডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এই চিকিৎসক পরামর্শ হিসেবে বলেন, তীব্র গরমে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি রোগাক্রান্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বেশি করে পানি পান করতে হবে। ঠান্ডাজাতীয় পানীয় বিশেষ করে লেবুর শরবত, ডাবের পানি বেশি করে পান করতে হবে। এসময় তাপ এড়িয়ে ঠান্ডা স্থানে থাকতে হবে।

;