হাজার কোটি টাকার লোকসানের আশঙ্কা আম চাষিদের
চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার গত ১০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে আমের উৎপাদন হয়েছে। আর গত ২০ বছরেও এবারের মত বিপর্যয় ঘটেনি আম উৎপাদনকারীদের ভাগ্যে। ২৭ জুন সোমবার থেকে সীমিত লকডাউন ও ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণার পরই শুরু হয় দরপতন।
লকডাউনে আড়তদাররা আম কেনা কমিয়ে দেওয়ায় আম চাষিরা তাদের উৎপাদিত আম নিয়ে চরম উৎকণ্ঠা ও বিপাকে পড়েছেন।
ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব ও সংবাদকর্মী আহসান হাবিব জানান, লকডাউনের এ পরিস্থিতিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের সব আমের আড়ত খোলা রাখা ও সরবরাহে সবধরনের সহায়তা কামনা, কুরিয়ার আড়ত বা বাজার থেকে যারা আম বেচা-কেনায় জড়িত ভোক্তা ও খুচরা ব্যবসীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতে বাধা না দেওয়ার সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
তিনি জানান, আম রফতানিতে কার্গো ভাড়া কমানো এবং রফতানিকারকদের প্রণোদনা প্রদানসহ উৎপাদনকারীদের বিমার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে।
তিনি আরও জানান, ল্যাংড়া ও ক্ষীরশাপাতি প্রায় শেষ। বাজারে এখন আম্রপালি, ফজলিসহ আশ্বিনা আমের ন্যায্য দাম ও সরবরাহে সমস্যা না থাকলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার আমের বাম্পার ফলন হলেও করোনা ও লকডাউন আতঙ্কে আম বাজারে ধস নামায় আম চাষিরা তাদের উৎপাদিত আম নিয়ে চরম উৎকণ্ঠা ও বিপাকে পড়েছে। গত বছরের তুলনায় বাজারে এবার আমের দাম অর্ধেকের কম। যা দিয়ে চাষির উৎপাদিত খরচও পাচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা এ বছর এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি। দুই সপ্তাহ আগেও যেখানে কৃষক কিছুটা ভালো দাম পাচ্ছিলেন, সেখানে কঠোর লকডাউন ঘোষণার পরই আমের বাজারে নামে ধস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিআই পণ্য খ্যাত ক্ষীরশাপাতি আম এ মৌসুমের শুরুতে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা মণ দর ছিল। এবার তা অর্ধেকেরও কমে নেমে আসে। তবে মান ভেদে ক্ষীরশাপাতি আম আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন অনেকেই। গত বছর ক্ষীরশাপাতি আমের দাম ছিল তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার। এসময়ে ক্ষীরশাপাতি আমের মণ যেখানে ৫ হাজার টাকা পৌঁছার কথা ছিল সেখানে আমের বড় বাজার কানসাটে শনিবার বিক্রি হয় দুই হাজার সাতশ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। গত বছর এসময়ে ল্যাংড়া আমের দাম ছিল ২,৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা, শনিবার বিক্রি হয় দুই হাজার থেকে দুই হাজার দুইশ টাকা। গত বছর এসময়ে ফজলির দাম ছিল ১,৫০০ থেকে ১,৬০০ টাকা, বর্তমানে এক হাজার থেকে এগারোশ টাকা। আম্রপালি ছিল ৩,০০০ টাকা, শনিবার ছিল ভালো মানেরটা দুই হাজার থেকে দুই হাজার তিনশ টাকা।
গত বছর আমের বাজার ভালো থাকায় চলতি বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় তাদের সর্বস্ব খুইয়ে আম বাগানে অর্থ যোগান দিয়ে আমচাষ করেছিলেন। বর্তমানে আমের যে মূল্য তাতে আম বিক্রি করে উৎপাদিত খরচের অর্ধেকও হবে না। অনেক ঘাটতি থেকে যাবে বলে জানিয়েছে আম চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হবে। ন্যায্য মূল্য আম বিক্রি হলে, যার বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। তবে দেশে করোনাভাইরাসের কঠোর বিধিনিষেধ, লকডাউনে আমের বাজারে বিশিষ্ট আম ব্যবসায়ীরা আম ক্রয় করতে আসছে না। লকডাউনে আমের বাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে আম বিক্রি না হলে এখানে আমের দাম ভালো হবে না। এতে প্রায় এক হাজার কোটি লোকসানের শঙ্কায় ভুগছেন আম উৎপাদনকারীরা।
চাষিরা বলছেন, এবার বেশি গরমের কারণে যে জাতের আম পরে পাকার কথা, সে আমও পেকে যাচ্ছে। করোনার কারণে বাইরের ক্রেতা না আসায় স্থানীয় ক্রেতারা কিছু আম কিনে বাইরে পাঠাচ্ছেন। তারা অল্প দামে আম ক্রয় করছেন। এতে আমের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না চাষি ও ব্যবসায়ীরা। ক্রেতা না থাকায় লাভ তো দূরের কথা, গাছ থেকে আম নামানো ও বাজারজাতের খরচই উঠছে না অনেকেরই।
কানসাটের এক আম আড়ৎদার জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম শুনে আগে মানুষ আগ্রহ নিয়ে বেশি দামে ক্রয় করত। কিন্তু এবছর করোনাভাইরাসের কারণে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না । লকডাউনের কারণে যাতায়াত সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাপারীদের আসা কমে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, চলতি বছরে ৩৫ হাজার ৭৩৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। সেখানে আড়াই লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে। তবে এবার আমের তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা অন্য বছর থেকে কম লাভবান হতে পারে।