নিহতদের পরিবারে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জাফরুল্লাহ’র
নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে হাসেম ফুডস ফ্যাক্টরীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৫২ জন শ্রমিক-কর্মচারীর প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সরকার ও মালিক উভয় পক্ষের কাছে তার এই দাবি।
রোববার (১১ জুলাই) দুপুর ১ টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি এই দাবি করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফত, রাষ্ট্র চিন্তার এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, গণস্বাস্থ্যের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মো. ফরিদ উদ্দিন, যুব অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আতাউল্লা, ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেন, গণসংহতির নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক তরিকুল সুজন প্রমুখ।
এ সময় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যারা আমাদের চলমান রাখে, রাষ্ট্রকে ভালো রাখে তাদেরকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে হবে। তাদের জন্য সঠিক ব্যবস্থা না নিলে যা হয় তাই হয়েছে। এটাকে দুর্ঘটনা বলা যাবে না, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, যদিও কেউ হত্যা করেনি। সরকারের একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিভাগ আছে, তাদের ইন্সপেক্টরদের প্রতিনিয়ত কলকারখানায় এসে দেখার কথা। তারা এখানে আসলে বুঝতে পারত কোথায় কোথায় গাফিলতি আছে। দুর্নীতির ফলে তারা আসে না।
তিনি বলেন, সরকারে অব্যবস্থাপনার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রতি বছর অগ্নিকাণ্ডে যেভাবে মৃত্যু ঘটছে তাতে এই সরকারের ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ততা নাই। ন্যায়নীতি না থাকলে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইন না মানলে এইসব দুর্ঘটনা থামবে না। আমাদের সবার জন্য দুঃখ আছে, জাতীর জন্য দুর্ভোগ আছে। এতগুলো জীবন গেলে তার মূল্য কে দিবে। এই দায়-দায়িত্ব সরকারের।
নির্বাচিত সরকার না হলে জনগণের প্রতি সরকারের দায়-দায়িত্ব থাকে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এখানে এসে সমস্ত এলাকাবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। উনার ব্যর্থতায় এই অগ্নিকাণ্ড, সরকারের কেউ অনিয়ম করলে প্রধানমন্ত্রীর ওপর বর্তায়।
তিনি বলেন, আমরা সম্মিলিতভাবে দাবি করছি, যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারকে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে। টাকা দিয়ে তো জীবনের ক্ষতিপূরণ হবে না। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এই টাকাটা পেলে উপকৃত হবে। যারা বেঁচে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের পরিবারের মধ্যে থেকে কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। আহত শ্রমীকদের যাবতীয় চিকিৎসা খরচ দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে আমাদের জীবন ছেড়ে দেয়া যাবে না। পরিদর্শক কমিটিতে দুইজন নিরেপক্ষ পরিদর্শক থাকতে হবে। তারা সাংবাদিক হতে পারেন, বিশিষ্ট নাগরিক হতে পারেন, মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন। যারা আর্থিক লেনদেনের সাথে জড়িত হবেন না। নিরেপক্ষ পরিদর্শক থাকলে মিথ্যাচারটা কম হবে, এটা সংস্কার হবে, জনগণের জীবন রক্ষা পাবে।
গণসংহতির প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর আমাদের জাতীয় সক্ষমতা তৈরি হওয়ার কথা ছিল। এমন একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি হওয়ার দরকার ছিল, যার মাধ্যমে সমস্ত কলকারখানা নিয়ম মেনে হবে এবং সেখানে যারা কাজ করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। বাংলাদেশ সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান তৈরি করলো না। গার্মেন্টসের বাইরে এদেশে যত কলকারখানা আছে সমস্ত কলকারখানা একই রকম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। সেখেনে যেকোনো মুহূর্তে আগুন, ভবন ধ্বসসহ নানা ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, আমাদের দেশে যে সরকার আছে। তার যে প্রশাসন, তার তদারকি কমিটি, পরিদর্শন কমিটির চরম অবহেলার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। তাদের চরম দুর্নীতির জায়গা এটি। তারা কলকারখানায় আসেন এবং টাকার বিনিময়ে ছাড়পত্র দেন। এই সব দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা গেলে দুর্ঘটনা কমে আসবে।