রাজশাহীতে চামড়ার দাম কম, বিপাকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা
সরকারের নির্ধারণ করে দেয়া দামের চেয়ে কম দামে চামড়া কিনেও লোকসানের শিকার হয়েছেন রাজশাহীর মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, আড়তে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা হলে তাঁদের লাভ হতো। কিন্তু অধিক মুনাফার আশায় আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে রাখেন। ফলে তাঁদের লোকসান হয়েছে।
মৌসুমী ব্যবসায়ীরা আরও জানান, যারা নগদ টাকায় চামড়া কিনেছেন, তাঁরা লোকসানের হিসাব কষেছেন। তবে কেউ কেউ আগেই বলে নিয়েছিলেন যে, বিক্রির পর যে দাম পাওয়া যাবে সে অনুযায়ী টাকা দেয়া হবে। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হননি।
রাজশাহীতে এ বছর খাসি, ভেড়া, বকরির চামড়ার তেমন চাহিদা না থাকলেও গরুর চামড়া ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর খাসির চামড়া ১৫-২০ টাকা, বকরি ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এত কম দামে চামড়া কিনেও লোকসানের কথা বলছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দিঘা গ্রামের আকবর আলী প্রতি কোরবানির ঈদেই চামড়া কেনেন। তারপর স্থানীয় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।
আকবর জানান, তিনিও কম দামেই চামড়া কিনেছিলেন। চামড়া বিক্রির পর দিনশেষে তাঁর ৩০০ টাকা লোকসান হয়েছে। সারাদিনের পরিশ্রমটাও বৃথা।
গোদাগাড়ী উপজেলার বিজয়নগর গ্রামের মৌসুমী ব্যবসায়ী সবুর আলী জানান, তিনি আগে থেকেই আঁচ করেছিলেন চামড়ার বাজার থাকবে খারাপ। তাই চামড়া কিনলেও কাউকেই টাকা পরিশোধ করেননি। বলেছিলেন, চামড়া বিক্রির পর যে দাম পাওয়া যাবে সে অনুযায়ী মূল্য পরিশোধ করা হবে। আড়তে চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে দেখেন, যা ধারণা করেছিলেন তার চেয়েও দাম কম। সেই দামেই বিক্রি করেছেন। নিজের সামান্য লাভ রেখে ঈদের পরদিন তিনি সবাইকে চামড়ার মূল্য পরিশোধ করেছেন।
এ বছর ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়া ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এ ছাড়া খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ১২ থেকে ১৪ টাকা। তবে রাজশাহীর কোথাও বর্গফুট হিসাবে চামড়া কেনা হয়নি। এর চেয়ে কম দামে চোখের আন্দাজেই চামড়া কেনা হয়েছে। তারপরও আড়তে চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে লোকসান হয়েছে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের।
তবে জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদের দাবি, চামড়ার দাম ভালই দেয়া হয়েছে। তাঁরা গরুর চামড়া ৬০০-৯০০, খাসির চামড়া ৪০-৭০ এবং বকরির চামড়া ২০-৪০ টাকা দরে কিনেছেন বলেও দাবি করেন মাসুদ।
তিনি বলেন, গত দুই-তিন বছর যে দাম ছিল, সেই তুলনায় এবার রেকর্ড।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইসমাইল হক জানান, রাজশাহীতে কত পশু কোরবানি হয়েছে সেই হিসাব তাঁরা করছেন। ধারণা করা হচ্ছে ১ লাখ ৯৪ হাজারের বেশি ছাগল-ভেড়া এবং ৭২ হাজারের বেশি গরু কোরবানি হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে এবারও চামড়ার দাম তেমন ছিল না। গ্রামে গ্রামে তো চামড়া কেনার সময় ব্যবসায়ীরা টাকা দেননি। বিক্রি করার পর তাঁরা টাকা দিতে চেয়েছেন।