গভীর রাতে আসমান আলীর ছাদ বাগানে ফুটলো নাইট কুইন!



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ভালোবাসার প্রতীকের আরেক নাম ফুল। সে যেকোনো ফুলই হোকনা কেন? প্রিয়তমার গলায় মালা কিংবা খোঁপায় ফুল গুঁজে দেয়ার অনুভূতি অনন্য। সব ধরনের শুভ কাজেও ফুলের ব্যবহার রয়েছে আমাদের দেশে।

মানুষভেদে ফুলের পছন্দের তারতম্য দেখা যায়। কেউ গোলাপ, কেউ হাসনাহেনা, কেউবা গ্রামবাংলার মেঠো পথের ধারে ফোটা অজানা ফুলের ভালোবাসায় মুগ্ধ হন। তবে যে ফুল কয়েক বছরে একবার ফোটে, সেই ফুল নিয়ে সবার কৌতূহল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তেমনই একটি ফুলের নাম হলো- নাইট কুইন।

মিষ্টি মনোহরিণী সুবাস, দুধসাদা রং, স্নিগ্ধ ও পবিত্র পাপড়ি আর সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে এই ফুল পরিচিত। রাতের আঁধারে নিজের সৌন্দর্য মেলে ধরে সকাল হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে নাইট কুইন। তাই এই একটি ফুলের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয় ফুলপ্রেমীদের। আমাদের দেশে দুর্লভ প্রজাতির ফুল হিসেবেই গণ্য করা হয় নাইট কুইনকে।

এক রাতে এই দুর্লভ এই নাইট কুইন ফুলের দেখা মিলল কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার ছাদবাগন মালিক ডা. আসমান আলীর লাগানো টবে। কয়েক বছর ধরে টবে লাগানো গাছ পরিচর্যা করেই তিনি এ ফুলের দেখা পেয়েছেন। পঞ্চম বারের মতো এ ফুলের দেখা পেয়েছেন শুক্রবার রাত এগারোটার দিকে।

নাইট কুইন ফুলটির পরিপূর্ণ রূপ দেখতে আগ্রহী ছিলেন আসমান আলীর শুভাকাঙ্ক্ষীরাও। রাত ১১টায় অপেক্ষার অবসান ঘটে। নিজের রূপের বাহার নিয়ে নাইট কুইন পরিপূর্ণভাবে পাপড়ি মেলে দেয়। উপস্থিত সবাই তখন ফুলটি নিয়ে সেলফি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

আসমান আলী বলেন, ‘আমার ছাদে অন্তত শতাধিক ফুল ও ফলের চারা রয়েছে। তবে এই নাইট কুইনের ভীষণ ইচ্ছা থাকলেও সংগ্রহ করতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। নাইট কুইন খুবই দুষ্প্রাপ্য ফুল। সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে কয়েক বছর আগে আমার এক বন্ধু সংগ্রহ করে এই গাছটি দিয়েছিলেন। বহু দিনের সখ ছিল নাইট কুইন ফুল ফোটানো। এ নিয়ে পঞ্চম বারের মতো নাইটকুইন ফুল দেখার সৌভাগ্য হলো।

তিনি বলেন, বছরের মাত্র একদিন এবং মধ্যরাতে পূর্ণ বিকশিত হয়। আর শেষরাতেই জীবনাবসান ঘটবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার এক আত্মীয় বারো বছর ধরেও কোন 'নাইট কুইন' ফুল ফোটাতে পারেনি। আমার কপালে ছিল তাই কয়েক বছরের মধ্যেই বেশ কয়েকবার ফুল ফুটেছে। ফুলের সৌন্দর্য আমাকে খুব আকৃষ্ট করে। শুধু ফুল নয়, আমার বাড়ির ছাদে বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করে আমি নিজেকে তৃপ্ত মনে করি।’

   

পটুয়াখালীতে ৬৫০ টাকায় মাংস বিক্রি করেছে জেলা প্রশাসন



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পটুয়াখালী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে ন্যায্য মূল্যে গরুর মাংস, দুধ ও ডিম বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) শহরের সোনালী ব্যাংক মোড় এলাকায় গেলে দেখা যায় প্রায় শতাধিক মানুষ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ন্যায্য মূল্যে পন্য সামগ্রী ক্রয় করার জন্য অপেক্ষা করছেন। বিক্রয়ের দ্বিতীয় দিনে ন্যায্য মূল্যে ৩৭০ কেজি গরুর মাংস, ২০০ লিটার দুধ ও ২০০০ পিস মুরগীর ডিম বিক্রি করা হয়েছে৷

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিক্রয়ের প্রথম দিনে ২০০ কেজি গরুর মাংস, ১২শ পিস ডিম এবং ৫০ লিটার দুধ বিক্রি করা হয়েছে। এই বিক্রয় কার্যক্রম চলবে শেষ রমজান পর্যন্ত ।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে পটুয়াখালী শহরের সোনালী ব্যাংক মোড়ে জেলা প্রশাসক মোঃ নূর কুতুবুল আলম এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

পটুয়াখালী জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, এখান থেকে গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি, মুরগির ডিম প্রতি পিস ৯ টাকা এবং গরুর দুধ প্রতি লিটার ৬৫ টাকা দরে যে কেউ কিনতে পারবেন। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ২ কেজি গরুর মাংস, ২ দুই লিটার গরুর দুধ ও ১ ডজন মুরগীর ডিম সংগ্রহ করতে পারবেন।

মাংস কিনতে আসা মোঃ আব্বাস হাওলাদার নামের এক ক্রেতা বলেন, 'এখানে আমি ব্যাংকে আসছিল একটা কাজে। এসে দেখি ডিসি স্যারের নির্দেশে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। ৯ টাকা পিস ডিম আর ৬৫০ টাকা করে গরুর মাংস ক্রয় করলাম, ইনশাআল্লাহ ভালোই লাগলো। যদি ন্যায্য মূল্যটা সব যায়গায় থাকতো তাহলে যদি আমাদের ক্রয় করতে সুবিধা হতো।'

পেশায় অটো চালক মোঃ আবুল বাসার বলেন, আমার পক্ষে সম্ভব না মাংস কিনে খাওয়ার মতো কারন বাজারে তো ৮'শ থেকে সাড়ে ৮'শ টাকায় মাংস বিক্রি হচ্ছে। আমি দুই দিনে যা ইনকাম করি তা দিয়াও এক কেজি মাংস কেনা সম্ভব না। কিন্তু এখানে ৬৫০ টাকায় মাংস বিক্রি হচ্ছে শুনে আসলাম এবং ১ কেজি মাংস কিনলাম। যদি পুরো রমজানের শেষ পর্যন্ত এভাবে বিক্রি করতো তাহলে আমরা অন্তত এই কয়দিন গরুর মাংস খাইতে পারতাম।

জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের বিক্রয় প্রতিনিধি মোঃ খায়রুল ইসলাম বলেন, আমরা এখানে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস, ৬৫ টাকায় ১ লিটার দুধ ও ৯ টাকা পিচ মুরগীর ডিম বিক্রি করছি। এক্ষেত্রে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ২ কেজি গরুর মাংস, ২ লিটার দুধ ও ১ ডজন মুরগীর ডিম সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া আমাদের স্যারদের নির্দেশ আছে যদি কেউ ২০০ গ্রাম মাংসও কিনতে চায়, তাকেও যাতে মাংস দেওয়া হয়। আমরা সেভাবেই বিক্রি করছি।

পটুয়াখালী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ডাঃ মোঃ ফজলুল হক সরদার বলেন, সরকারের নির্দেশনা হচ্ছে বাজার ক্রয় ক্ষমতা নিম্ন আয়ের মানুষের সহনশীলতার মধ্যে থাকে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা সাধ্য মতো চেস্টা করছি। আশা করছি আমাদের এমন উদ্যোগে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। এখানে যে গরু জবাই করা হয় তা আমাদের ডাক্তার দ্বারা পরিক্ষা নিরিক্ষা করে সুস্থ থাকলেই জবাই করা হয়। আমাদের উদ্যেশ্য জনগণের হাতে নিরাপদ আমিষ পৌঁছে দেয়া।

জেলা প্রশাসক মোঃ নূর কুতুবুল আলম বলেন, ‘বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার। আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও পাশপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার পাশাপাশি ব্যাবসায়ীদের সচেতন করছি। আজ থেকে চালু হওয়া এই ন্যায্য মূল্যের স্টল থেকে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ডিম, দুধ এবং গরুর মাংস কিনতে পারবেন। আমরা উদাহরণ সৃষ্টি করলাম, ভবিষ্যতে এই পরিসর বড় করতে চাচ্ছি।’

;

বাঁশির গ্রাম নওগাঁর দেবীপুর



শহিদুল ইসলাম , ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাঁশির গ্রাম হিসেবে পরিচিত নওগাঁর দেবীপুর, কারণ গ্রামটিতে সারা বছরই বাঁশি তৈরী হয়। নওগাঁ শহর থেকে উত্তরে ৩ কিলোমিটার দুরে তিলকপুর ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রা গ্রামে প্রবেশে দেখা মিলবে রাস্তার দুইপাশে বাঁশি তৈরির উপকরণ নল এর গাছ। এ গ্রামের প্রায় দুইশ'টি পরিবার বাঁশি তৈরির কাজে জড়িত। আর এটিকে পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন এ গ্রামের বাসিন্দারা। গত ৫২ বছর আগে এ গ্রামের বাসিন্দা মরহুম আলেক মন্ডলের হাত ধরে বাঁশি তৈরির যাত্রা শুরু হয়। এরপর গ্রামের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এ কাজ।

জানা যায়, বছরে এ গ্রাম থেকে প্রায় ২০ কোটি পিস বাঁশি উৎপাদন হয়। যার উৎপাদন খরচ ২০ কোটি টাকা হলে পাইকারি মুল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। আগামীতে বাঁশি রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে ব্যবসায়ীদের। বড় ধরনের মেলা যেমন বৈশাখের মেলায় এক মাসে প্রায় ২ কোটি টাকার বাঁশি উৎপাদন হবে এ গ্রাম থেকে। ক্ষুদ্র এই কুটির শিল্পকে এগিয়ে নিতে সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এসব কারিগররা আর্থিক দিক থেকে আরো উন্নতি করতে পারবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাঁশি নিয়ে খেলছে শিশুরা

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষেত/জমি থেকে বাঁশি তৈরির প্রধান কাঁচামাল নল কাটার পর পরিস্কার করে সাইজ মতো কেটে রোদে শুকিয়ে অন্তত ১৫ ধাপে তৈরি হচ্ছে বাঁশি। বলা যায় বাঁশি তৈরিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে নারীরা। আর পুরুষরা বাজারজাত করে। প্রতিটি বাঁশি তৈরিতে (সাধারণ/সাদা বাঁশি) উৎপাদন খরচ পড়ে ১ টাকা ৫০ পয়সা। যা পাইকারিতে বিক্রি হয় ২ টাকা পিস। আর বাঁশির সৌন্দর্য বাড়াতে বেলুন ও রঙিন কাগজ (জরি) পেচিয়ে উৎপাদন খরচ পড়ে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। যা পাইকারিতে বিক্রি হয় প্রতি পিস ৬ টাকা ৫০ পয়সা। খুচরা পর্যায়ে সাদা বাঁশি বিক্রি হয় ১০-১৫ টাকা এবং রঙিন বাঁশি ১৫-২০ টাকা পিস। বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরাও এ গ্রাম থেকে বাঁশি কিনে যান। এ গ্রামের নারীরা সাংসারিক কাজের পাশাপাশি বাঁশিতে রঙিন কাগজ জড়িয়ে বাড়তি আয় করে।

বাঁশির কারিগর গৃহবধু হালিমা বেগম বলেন, সংসারে কাজের পাশাপাশি বাঁশিতে জরি পেচানো হয়। প্রতি হাজার বাঁশিতে জরি ও বেলুন লাগানো মজুরি ১৬০ টাকা। দুই দিনে এক হাজার কাজ করা যায়। যা আয় হয় সংসারের কাজে ব্যয় করা হয়। এছাড়া নিজেদের ব্যবসার জন্যও তৈরি করা হয়।

বাঁশি তৈরির কারিগর বাচ্চু মন্ডল বলেন, আমি প্রায় ৩০ বছর থেকে এ বাঁশি ব্যবসার সাথে জড়িত। নিজের জমি না থাকায় অনেক দুর থেকে নল কিনে নিয়ে এসে বাঁশি তৈরি করি। এ বছর প্রায় ৮০-৯০ হাজার পিস তৈরি করা হবে। খুলনা ও সিলেট থেকে পাইকার এসে কিনে নিয়ে যায়। আবার কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া নিজেও বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করা হয়। বৈশাখ ও ঈদ উপলক্ষে প্রায় ২০ হাজার পিস বাঁশি তৈরি করা হবে। যা থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকা লাভ হওয়ার আশা করছেন তিনি।

৫০ বছর ধরে বাঁশি তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন দেবীপুর গ্রামের বাসীন্দা ৭৩ বছরের আমজাদ হোসেন

গত ৫০ বছর থেকে বাঁশি তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন দেবীপুর গ্রামের বাসীন্দা ৭৩ বছরের আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, মরহুম মামা আলেক মন্ডলের হাত ধরেই এ গ্রামে বাঁশির কাজ শুরু হয়। সেসময় প্রতিটি বাঁশির দাম ছিল ২৫ পয়সা। আর এখন ২টাকা পিস। সারা বছরই বাঁশি তৈরি হলেও বৈশাখে বাঁশির চাহিদা বেড়ে যায়।

বৈশাখের বিভিন্ন মেলাকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৫ হাজার পিস বাঁশি বিক্রি করার ইচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, এসব বাশি নিয়ে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরসহ কয়েকটি জেলায় চলে যাবো। সারা মাস সেখানে বিভিন্ন মেলায় বিক্রি হবে। মোটামুটি ভাল লাভ হবে আশা করছি।

স্থানীয় পাইকারি বাঁশি ব্যবসায়ি খলিল বলেন, এ বছর বৈশাখে হচ্ছে রমজান মাসে। এ মাসে ঈদ। এতে আনন্দের মাত্রা আরো একধাপ বেড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মেলা ও রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করে এ এক মাসে এ গ্রাম থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার বাঁশি উৎপাদন হবে। এসব বাঁশি রংপুর, সিলেট, খুলনা, ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরসহ আরো কয়েকটি জেলার ব্যবসায়ীরা কিনে নেয়। এছাড়া স্থানীয়রা বিভিন্ন জেলায় মেলায় গিয়ে নিজ হাতে বাঁশি বিক্রি করে।

নওগাঁ বিসিক এর উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের আওতায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়। বাঁশির সাথে সম্পৃক্ত উদ্যোক্তারা যদি কোন ধরণের সহযোগীতা নিতে চায় নারীদের জন্য ৫ শতাংশ এবং পুরুষদের জন্য ৬ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়ে সহযোগীতা করা হবে। এছাড়া তারা যদি দলবদ্ধ (গ্রুপ) ভাবে নেয় সেক্ষেত্রেও সুবিধা দেওয়া হবে। শিল্পকে এগিয়ে নিতে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থাসহ সরকারি সুবিধা প্রদান করা হবে।

;

এমপির দম্ভ, এমপির ঘোষণা দিয়ে দুর্নীতি



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নির্বাচনে সোয়া কোটি টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে জাতীয় সংসদের একজন সদস্য ঘোষণা দিয়েছেন তিনি তার খরচের এই টাকা তুলবেন। যেভাবেই হোক তুলবেন। মাননীয় সংসদ সদস্য বুঝতে পারছেন এটা অন্যায়, এবং এই অন্যায়টুকু করতে চান তিনি। এটুকু করে এরপর আর কোন অন্যায় না করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।

নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ গত মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) যখন উপজেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানে অন্যায় করার এই ঘোষণা দিচ্ছিলেন তখন ওই মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন নাটোরের লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আখতার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসাহাক আলী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেনসহ অনেকেই। এমপির এই ঘোষণা সত্ত্বেও বিব্রত হওয়া ছাড়া তাদের করার কিছু ছিল না। ইউএনও পরে গণমাধ্যমকে নিজের বিব্রত হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। মাঠপ্রশাসনের একজন কর্মকর্তা একজন সংসদ সদস্যের প্রটোকলের অনেক নিচে অবস্থান করেন বলে আসলে তার করারও কিছু নেই। একই কথা প্রযোজ্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং অন্যদের ক্ষেত্রেও।

অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য আবুল কালাম বলেছেন, ‘আমার পাঁচটা বছরের বেতন–ভাতার টাকা ছাড়া আমার কোনো সম্পদ ছিল না। আগামী দিনেও আমার থাকবে না। তবে এবার (সংসদ নির্বাচনে) ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এইটা আমি তুলব। যেভাবেই হোক। এটুকু অন্যায় করব, আর করব না।’ ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এমপি ছিলেন আবুল কালাম। ওই সময়ের কথা তুলে ধরে সংসদ সদস্য বলেন, ‘ওই সময় কিন্তু এক টাকাও খরচ হয়ছিল না আমার। শুধু ব্যাংকে ২৫ লাখ টাকা জমা রাখতে হয়, ওটা রেখেছি। এক টাকাও খরচ নাই, ২৫ লাখ টাকা তুললাম। ২৭ লাখ টাকার গাড়ি কিনেছিলাম, ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি। চাইলে ১ কোটি টাকা দিয়ে কিনতে পারতাম। আমার যখন টাকা নাই, তখন ২৭ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। এবার আমি কিনব, ওই টাকা দিয়ে কিনব। ওই যে টাকা, ওই টাকা তুলে নিব আমি। খালি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা তুলব।’

সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে তিনি গণমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। অবস্থা বেগতিক দেখে এখন বলতে চাইছেন 'মজা করে বলেছেন কথাগুলো'। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি সিরিয়াস কোনো কথা বলিনি। কথার কথা বলেছি। এটা মজা করেও বলা যেতে পারে। আমি নির্বাচনী খরচের কথা তুলে ধরতে গিয়ে বোঝাতে চেয়েছি, আগামী দিনে আমি টাকার পাহাড় গড়তে চাই না, আমি শুধু খরচের টাকা তুলতে চাই। এটা অন্যায়ভাবে না কিংবা কারও কাছ থেকে অবৈধভাবে না। আমার সম্মানী থেকে উপার্জন করতে চাই। এই কথাকে বিকৃতভাবে চিন্তা করার কোনো কারণ নাই।’


অনুষ্ঠানের ব্যানারে ৬৭ বছর বয়স্ক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের নামের আগে 'বীর মুক্তিযোদ্ধা' লেখা দেখছি। ১৯৭১ সালের ১৫ বছর বয়েসি এই রাজনীতিক জীবনে দুইবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। প্রথমবার ২০১৪ সালে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি, নির্বাচনও করেননি। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি, তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন।

তিনি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, এবং এই আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য মমতাজ উদ্দিনের ছোট ভাই। মমতাজ উদ্দিন আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন, ছিলেন একবারের সংসদ সদস্য। ২০০৩ সালে সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এছাড়া ২০২৩ সালে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদকপ্রাপ্ত ছিলেন প্রয়াত এই রাজনীতিক। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্যে রাষ্ট্র মরণোত্তর সম্মাননা দেয় প্রয়াত মমতাজ উদ্দিন আহমেদকে।

আবুল কালাম আজাদ এমপির দুর্নীতি করার প্রকাশ্য ঘোষণার সাহস কোথা থেকে আসে, প্রশ্নটা রাখতে চাই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি না হলেও আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে 'ডামি প্রার্থী' ছিলেন। নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ ছিল, অভিযোগ ছিল সহিংসতার। এছাড়া নির্বাচনের পর এই আসনের ভোট পুনরায় গণনা এবং আসনটিতে বিজয়ী প্রার্থীর নামে গেজেট প্রকাশ বন্ধ রাখার জন্য আবেদন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুল। আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর অভিযোগ ছিল, সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি, সেইসঙ্গে অন্তত ২১টি ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ফলাফল নিজের অনুকূলে নেওয়ার। ৭ জানুয়ারির ওই নির্বাচনের জয়-পরাজয়ের ব্যবধান ছিল ১ হাজার ৯৯৬ ভোট; যেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৯৪৩ ভোট এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুল পেয়েছিলেন ৭৫ হাজার ৯৪৭ ভোট।

অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ যে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা যেকোনো মূল্যে তুলতে চান সেটা তিনি নির্বাচনের সময়ে খরচ করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা খরচ করতে পারেন। নাটোরের এই এমপি নিয়মের অন্তত ৫ গুণ বেশি অর্থ খরচ করেছেন নির্বাচনে, এবং নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরাও অভিযোগ করেছেন তিনি টাকা দিয়ে ভোট কেনার। প্রতিদ্বন্দ্বীদের অভিযোগ, নিজের খরচের হিসাব এবং নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নির্দেশনার কিছুই একটার সঙ্গে অন্যটা মেলে না। এখানে পরিস্কার তিনি নির্বাচন করতেও অন্যায় করেছেন, এবং নির্বাচনে জিতে এসে দুর্নীতি করার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে দেশের আইনকানুন, রীতিনীতি, শিষ্টাচার, জবাবদিহি সবকিছুকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছেন।

দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নামের একটি প্রতিষ্ঠান আছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে সরকার-দলের কারো প্রতি ততটা কঠোর না হওয়ার। পুরোপুরি না হলেও কিছুটা হলেও অবিশ্বাস করতে চাই এই অভিযোগকে। এখানে তাই তাদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে আবুল কালাম আজাদকে নিয়ে কিছু করার। তিনি সরকার-দল আওয়ামী লীগের সরাসরি এমপি নন বলে কিছুটা সাহস তাদের কাছ থেকে আশা করতেই পারি!

এমনিতেই অনেক রাজনীতিকের সততা নিয়ে মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রশ্ন। ব্যবসাবাণিজ্য, সিন্ডিকেট, অর্থ পাচারের নানা গুঞ্জন, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি—নেই কী অভিযোগ! এমন অবস্থায় আবুল কালাম আজাদ এমপির অনিয়ম-দুর্নীতি করার প্রকাশ্য ঘোষণা রাজনীতিকদের ভাবমূর্তি সংকটের অন্যতম উদাহরণ হয়ে গেছে। এই ঘোষণা, এবং ঘোষণার পর কোন রাষ্ট্রীয় কোনো সংস্থা-প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোন বার্তা না আসায় জনমনে জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্কে বিরূপ ধারণা জন্মাচ্ছে।

ভাবমূর্তি সংকটে রয়েছেন রাজনীতিকরা, সময়ে-সময়ে আবুল কালাম আজাদরা দিচ্ছেন এর নেতৃত্ব। দুর্নীতির প্রকাশ্য ঘোষণা দেওয়া এই এমপিকে আইনের আওতায় আনা জরুরি।

;

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: লড়বেন সাড়ে ৩ লাখ চাকরি প্রত্যাশী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে লিখিত পরীক্ষা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আজ। ৬ হাজার ২০২টি আসনের বিপরীতে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা তিন লাখ ৪৯ হাজার ২৯৩ জন। এ পরীক্ষায় মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪১৪টি।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে চলবে বেলা ১১টা পর্যন্ত।

এদিকে, শেষ ধাপে ঢাকা বিভাগের যে জেলাগুলোতে পরীক্ষা হবে, সেগুলো হলো—গাজীপুর, ঢাকা, নরসিংদী, শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর।

চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলো হলো—কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, ফেনী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, বান্দরবান।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, এ নিয়োগ পরীক্ষায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই চাকরি হবে। অর্থ লেনদেন বা অন্য কোনো অনৈতিক উপায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত স্বাক্ষরিত এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই পরীক্ষা সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়। প্রার্থীদের রোল নম্বর, আসনবিন্যাস, প্রশ্নপত্র পাঠানো ও মুদ্রণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল প্রস্তুতসহ যাবতীয় কাজ সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় পরীক্ষাকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। এ অবস্থায় দালাল বা প্রতারক চক্রের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে কোনো প্রকার অর্থ লেনদেন না করা এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে কোনো প্রকার অসদুপায় অবলম্বনের জন্য কোনো দালালচক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করাসহ অনুরোধ করা হলো

কেউ অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখালে তাকে নিকটবর্তী থানায় সোপর্দ করা অথবা থানা বা গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করেছে অধিদপ্তর।

ডিপিই জানিয়েছে, এই দুই বিভাগের মৌখিক পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ৫ থেকে ২০ মে, চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে ১০ জুন।

;