লকডাউন যেন ঢিলেঢালা হয়ে না পড়ে
নতুন করে শুরু হওয়া দুই সপ্তাহের লকডাউনকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ঈদের আগে শেষ হওয়া দুই সপ্তাহের লকডাউন তেমন কোনো কাজে আসেনি। তার ওপর ঈদকে কেন্দ্র করে সবকিছু সাত দিনের জন্য শিথিল করে দেওয়ায় সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে চলমান লকডাউন সফল না হলে দেশের করোনা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। এসময় সরকারের ২৩ দফা নির্দেশনা যাতে পুরোপরি কার্যকর হয় সেটাই চান তারা।
গত ৫ এপ্রিল থেকে একটানা বিধি-নিষেধের আওতায় রয়েছে দেশ। কখনো কঠোর আবার কখনো শিথিল। এরই মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিথিল বা স্বাভাবিক পরিবেশ ছিল গেল ১৪-২২ জুলাই পর্যন্ত। আর তখন আবার গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণ চলছিল। সর্বোচ্চ মৃত্যু ঘটে এই সময়ের মধ্যে। দৈনিক সংক্রমণের হারও ৩০ শতাংশের ওপরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঈদের আগে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধে তেমন প্রভাব দেখা যায়নি। তবে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ কমেছে। গতকাল থেকে যে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে, সেটা কয়েক দিন গেলে বোঝা যাবে। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। আমাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তবে এটা আমি জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই, সরকারের ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট ভালো আছে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে দুই সপ্তাহের এই বিধিনিষেধ কষ্ট করে হলেও সবাইকে মানতে হবে বলে মনে করছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, চলমান বিধিনিষেধ কষ্ট করে হলেও মানতেই হবে। কারণ এখন ডেঞ্জার লেভেলের অনেক ওপরে আছি। সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে নামতে হবে ও মৃত্যু দৈনিক ৫০ জনের নিচে নামতে হবে। তা না হলে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে না। এখন যদি বিধিনিষেধ মানি, তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে ১৪ দিনের বেশি লাগতে পারে।
কোরবানির ঈদের বন্ধের তিন দিনসহ গত চার দিনে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মারা গেছে ৭২৬ জন। এ সময়ে শনাক্ত হয়েছে ২৯ হাজার ২৫৪ জন। সুস্থ হয়েছে ৩৭ হাজার ২৭৩ জন। চার দিনে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ২৬৬ জনের। এখন পর্যন্ত দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৬৪। আর আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মোট ১৮ হাজার ৮৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ১৬৬ জন। এ সময় ২০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ছয় হাজার ৩৬৪ জন। সুস্থ হয়েছে ৯ হাজার ছয়জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপদেষ্টা ও রোগতত্ত্ববিদ ড. মুশতাক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, যেখানেই সংক্রমণ বেশি দেখা যাবে দ্রুত সেখানে পরীক্ষা, শনাক্ত, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। কোনোবারেই আমরা পরিপূর্ণভাবে এ কাজটি করতে পারিনি। তাই এবারের বিধি-নিষেধের সময়ে এই বিষয়কে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতেই হবে। কারণ গত কয়েক দিনে সংক্রমণের যে যোগসূত্র ঘটে গেছে তার প্রভাব দেখা যাবে এ মাসের শেষে বা আগস্টের প্রথম থেকে। আর মৃত্যু ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠবে আগস্টের মাঝামাঝি থেকে।