কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলায় আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানি এবং পরিবেশ বিষয়ক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মার্সিয়া বার্নিকাটের মধ্যে এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সে বৈঠকে এ প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
বৈঠকটি ছিল ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বৈঠকের একটি ফলোআপ।
এই বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা দু-দেশের মধ্যে চলমান অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং ২০২০ সালের অংশীদারিত্ব বৈঠকে চিহ্নিত সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহে যেসব অগ্রগতি হয়েছে তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তারা দু-দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সরকারের মধ্যে অংশীদারিত্ব গভীরতর করার জন্য বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার ভিতরে এবং বাইরে জড়িত থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন।
জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি বিশ্ব-অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ অতিমারির বিরূপ প্রভাবগুলো বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান কোভ্যাক্স এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ৫.৫ মিলিয়নেরও বেশি ডোজ সরবরাহ করার জন্য মার্কিন সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
মহামারির প্রথম দিন থেকেই কোভিড-১৯ মোকাবিলায় দু-দেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার কথা স্মরণ করে তিনি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য মহামারি-ব্যবস্থাপনা সরঞ্জামাদির বৈশ্বিক উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। এক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশের দক্ষ ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিসমূহের সাথে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহ প্রদানের জন্য মার্কিন সরকারের সহায়তা কামনা করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এ ধরনের অংশীদারিত্বের জন্য ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানিসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত।
রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট দেশে কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পিপিইর পাশাপাশি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এবং থেরাপিউটিক্স উৎপাদন সম্প্রসারণের পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেবে।
বৈঠকে শ্রমিকের অধিকার ও সুরক্ষা, জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতা, বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং ঢাকা থেকে নিউইয়র্কে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট পুনঃস্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে । উপদেষ্টা দেশে শ্রমিকের অধিকার এবং সুরক্ষা আরও উন্নত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গৃহীত বিভিন্ন নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে বার্নিকাটকে অবহিত করেন।
যুক্তরাষ্ট্র পক্ষ এ সেক্টরে বাংলাদেশের নিরন্তর প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে এবং আরও বেশি অগ্রগতি অর্জনে তাদের সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করার সাম্প্রতিক পদক্ষেপের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
উভয় পক্ষই স্বীকার করে যে- ২০২০ সালের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বৈঠক দুটি দেশের মধ্যে চলমান সহযোগিতাকে গতি দিয়েছে এবং তারা এই বছরের শেষের দিকে পরবর্তী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বৈঠক আয়োজনে সম্মত হয়েছে।
বৈঠকে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলাম, বাণিজ্য সম্পাদক তপন কান্তি ঘোষ, ইআরডি সচিব মিসেস ফাতিমা ইয়াসমিন এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।