নদীর স্রোতে দোকান বিলীন, ঝুঁকিতে স্কুলসহ আরও ১৫ দোকান
ঢাকার ধামরাইয়ের সুতিপাড়া ইউনিয়নের গাজী খালি নদীর প্রচন্ড স্রোতের কারণে নওগাঁও বাজারের দুটি দোকান ভেঙে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ৫০নং নওগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বাজারের আরো ১৫টি দোকান ও দুইশত বছরের ঐতিহ্যবহনকারী একটি বটগাছ। এলাকাবাসীর অভিযোগ স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানালেও তিনি কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আরো বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে এলাকাবাসী।
বুধবার (২৮ জুলাই) স্থানীয়রা জানান, ২০১৯ সালের শুরুর দিকে ধামরাই উপজেলার সুতিপাড়া ইউনিয়নের নওগাঁও বাজারের পাশে গাজীখালি নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তখনই এই নদীতে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। সেই রাস্তা দিয়েই দেড় বছরের বেশি সময় ধরে লোকজন চলাচল করছে। এছাড়াও কেষ্টি নওগাঁ এলাকায় রয়েছে নূরুল ব্রিকস, কেবিকো ব্রিকস ও আহাদ ব্রিকসসহ কয়েকটি ইটভাটা। যারা এই নদীতে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা রাস্তা দিয়েই ইট ও ইট তৈরির মাটি আনা নেয়া করে।
নির্মাণাধীন ব্রিজটি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এখনো ব্রিজের ৪০ শতাংশ কাজ বাকি আছে। যার কারণে নদীতে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা রাস্তাটি এখনো রয়ে গেছে। এই বাঁধের মাঝখানে বালু সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা দুটি স্লাব বসানো হয়েছে। যে স্লাব দিয়ে পর্যাপ্ত পানি বের হতে না পারায় স্রোতের তীব্রতা অনেক বেশি হয়ে গেছে। এই স্রোতেই নওগাঁ বাজারের দুটি দোকান নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দুইশত বছরের পুরনো একটি বট গাছ, বাজারের আরো ১৫টি দোকান ও নওগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নদীতে এই বাঁধ থাকলে যে কোন সময় দোকানপাটসহ স্কুল বিলীন হয়ে যেতে পারে নদীতে।
এমন ঘটনায় নদীতে বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরির দায় নিতে চাচ্ছে না কেউ। ব্রিজ তৈরির লোকজন বলছেন ইটভাটার মালিকরা এই রাস্তা তৈরি করেছে। আবার ইটভাটার মিলিকরা বলছে যারা ব্রিজ তৈরি করছেন তারাই তাদের সুবিধার জন্য এই রাস্তা তৈরি করেছে।
এ অবস্থায় নদীর বাঁধ কেটে দিয়ে স্কুলসহ দোকানপাট রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। না হলে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে স্কুলসহ ১৫টি দোকান।
নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া মুরগির দোকানের মালিক আমজাদ হোসেন বলেন, আমার ৬০-৬৫ বছরে দেখি নাই এই নদী দিয়ে এমন স্রোত হয়। এটা তো ছোট একটি খালের মত। যদি ব্রিজের পাশে এই নদী দিয়ে বাঁধ না দিতো তা হলে আমার এত বড় ক্ষতি হতো না। নদীতে বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরির কারণে পানির স্রোত বেশি হয়েছে। আমার মুরগীর দোকান পুরোপুরি ভেঙ্গে পরে গেছে। মুরগীও সব সরাতে পারিনি। একটি মেশিন চলে গেছে নদীতে। এ ঘটনায় আমার প্রায় ৪০/৪৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই টাকা আমাকে কে দিবে এখন? যে যার মত বালি ভর্তি বস্তা দিয়ে নদী ভাঙ্গন ঠেকাচ্ছি। কিন্তু কতটুকু আমরা পারবো? স্কুলসহ আরো ১৫/১৬ টি দোকান ঝুঁকিতে আছে।
৫০নং নওগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রসুল বলেন, হঠাৎ করে গাজীখালি নদীর পানি বেড়ে প্রচন্ড স্রোতের কারণে বাজারের দুটি দোকান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাই আমি বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আর আমরা আমাদের মত বালু ভর্তি বস্তা দিয়ে চেষ্টা করছি ভাঙ্গন থেকে বাঁচতে।
এদিকে নওগাঁও এলাকার গাজীখালি নদীর উপরে ব্রিজ নির্মাণের তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, নদীর উপর দিয়ে ওই রাস্তাটা আমরা করিনি। রাস্তাটি করেছে ইট ভাটার মালিকরা তাদের সুবিধার জন্য। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধান করলে ভালো হয়। তাছাড়া ইউএনও বরাবর লোকজন আবেদন করলে দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে।
তবে ধামরাই ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও ওই এলাকায় কেবিকো ব্রিকসের মালিক মো. নজরুল ইসলাম জানান, নদীর উপর ওই বাঁধ দিয়ে রাস্তা আমরা তৈরি করি নাই। এই রাস্তা ব্রিজ তৈরির লোকজন করেছে তাদের কাজের সুবিধার জন্য। তবে রাস্তাটি হওয়ার পর আমাদের ইটভাটার গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু সুবিধার জন্য রাস্তাটি কেটে দিতে পারে তাতে আমাদের কোন সমস্যা নেই।
এ বিষয়ে নওগাঁও বাজার বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ বলেন, নদীতে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা এই রাস্তাটি ইট ভাটার মালিকরা ভাঙতে দেয় না। তাদের প্রভাব বেশি। দুটি দোকান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একটি মুরগির দোকান আরেকটি ডেকোরেটরের দোকান। রাস্তা কেটে না দিলে বাজারের সব দোকান ও স্কুলটি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এ বিষয়ে আমরা বর্তমান চেয়ারম্যানকে বলেছি একটা ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। কিন্তু তিনি আমাদের দুই দিন ধরে ঘুরাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সুতিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রাজা বলেন, রাস্তা তো ওটা দুই তিন বছরের। আর ব্যবস্থা তো যারা রাস্তাটি করছে তারা করবে। ব্রিজের লোকজন রাস্তাটি করছে। ব্রিজের কন্ট্রাক্টরকে আমি বলছি ফোন করে এবিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
দুটি দোকান নদীর পানির স্রোতে বিলীন হয়ে গেছে এবং একটি স্কুলসহ আরো ১৫টি দোকান ঝুঁকিতে আছে এ ঘটনা শুনে আপনি সেখানে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন কি না এমন প্রশ্নে স্থানীয় চেয়ারম্যান বলেন, আপনি কাউন্সিলে (ইউনিয়ন পরিষদে) আসেন বসে কথা বলবো। আমি কালকে কাউন্সিলে আছি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আইনুল হক জানান, এ বিষয়ে আমাদের কেউ কিছু জানায়নি। আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম। অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।