রাজশাহীতে বাঁধা স্বত্বেও বাইরে মানুষ
প্রতিনিধি, রাজশাহী ঈদের পর শুরু হওয়া লকডাউন বাস্তবায়নে রাজশাহীতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কিন্তু লকডাউনের সপ্তম দিন বৃহস্পতিবার রাজশাহী মহানগরের চিত্র দেখা গেছে অনেকটাই স্বাভাবিক। দোকানপাট বন্ধ থাকলেও শহরে রিকশা-অটোরিকশার চাপ। কোথাও কোথাও তো যানজটও দেখা গেছে।
তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নগরীর মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন আনসার বাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকেও কড়াকড়ি করা হচ্ছে। একের পর এক মামলা দিচ্ছেন সার্জেন্ট। টহল দিচ্ছেন র্যাব, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। এ ছাড়া মহানগর এলাকায় চলছে চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। জরিমানাও চলছে। তারপরও নানা প্রয়োজনে মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন। কোনভাবেই মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না।
পুলিশের চেকপোস্টগুলোতে আটকানো হলে তাঁরা দিচ্ছেন নানা অজুহাত। অনেকেই দেখাচ্ছেন চিকিৎসকের পুরনো ব্যবস্থাপত্র। বলছেন, তাঁরা চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন। ফলে তাঁদের যেতেই দিতে হচ্ছে। এদিকে চলমান লকডাউনের মধ্যেও চলমান আছে উন্নয়ন কাজ। গ্রাম থেকে দল বেঁধে শ্রমিকেরা কাজের সন্ধানে আসছেন শহরে।
নগরীর উপকণ্ঠ কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় দেখা যায়, শ্রমিকদের নিয়ে একের পর এক ভটভটি টেম্পু শহরে ঢুকছে। প্রতিটি ভটভটিতে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক। এদের বেশিরভাগেরই নেই মাস্ক। শহর ঘুরে দেখা গেছে, দোকানের অর্ধেক সাঁটার তুলে ব্যবসায় মন দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নগরীর বিভিন্ন মার্কেটের পেছনের ফটক দিয়েও ঢোকানো হচ্ছে ক্রেতা।
নগরীর রেলগেট এলাকার করিম মেশিনারিজের স্বত্বাধিকারী আবদুল করিম এই লকডাউনের মধ্যেও দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। জেলা প্রশাসনের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে গিয়ে জরিমানা করেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে বললেন, সরকার সবার স্বার্থেই এই লকডাউন দিয়েছে। আবার মাঝে মাঝে ব্যবসা করারও সুযোগ দিচ্ছে। তাই লকডাউন মানতে হবে। জরিমানার টাকা পরিশোধ করার পর দোকানের সাঁটার লাগাতে লাগাতে আবদুল করিম বললেন, ‘আর কতদিন এভাবে থাকা যায়? আমাদেরও তো সংসার আছে। যদি এমন হতো যে, এবার এই ১৪ দিন পর লকডাউন শেষ হয়ে যাবে তাহলে দোকান বন্ধ রাখতাম। কিন্তু লকডাউন কবে শেষ হবে কেউ তো জানে না।’
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ঈদের পর গত ২৩ জুন লকডাউন শুরুর দিনই জেলা ও নগরজুড়ে ২৪টি মামলা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ টাকা। পরদিন জেলা ও মহানগরে মামলা হয় ৭৫টি। জরিমানা আদায় হয়েছে ৪৮ হাজার ৪০০ টাকা। লকডাউনের তৃতীয় দিন রোববার ৬২টি মামলায় আদায় করা হয় ৫১ হাজার ১৫০ টাকা। চতুর্থ দিন সোমবার ৮৪টি মামলায় আদায় করা হয়েছে ৫৫ হাজার ৬০০ টাকা। আর পঞ্চম দিন মঙ্গলবার ৭১টি মামলা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জরিমানা আদায় করা হয় ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা। আর বুধবার ৫৫টি মামলায় আদায় করা হয়েছে ৩৫ হাজার ২৫০ টাকা। বৃহস্পতিবারও অভিযান চলছিল।
মোড়ে মোড়ে রিকশা-অটোরিকশা আটকে চাকার হাওয়া বের করে দিচ্ছে পুলিশ। তারপরও শহরে রিকশা-অটোরিকশার চাপ কমছে না। বুধবার সকালে নগরীর তালাইমারী মোড়ে রিকশাচালক মো. জুলমতের রিকশার চাকার হাওয়া বের করে দেয়া হয়। জুলমত বলেন, ‘ঈদের পর বের হইনি। এখন তো হাড়িচুলা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বসে বসে কয়দিন থাকা যায়? বাধ্য হয়েই রিকশা নিয়ে বের হয়েছি।’ এ দিন নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ের চিত্র একেবারেই স্বাভাবিক দেখা গেছে। এখানেই হাসপাতাল-ক্লিনিক বলে নমনীয় পুলিশ। এ ছাড়া নগরীর সাহেববাজার, সাগরপাড়া ও আশপাশের এলাকা ঘুরে মানুষের চলাচল দেখা গেছে। সাহেববাজার এলাকায় সেনাবাহিনী, আনসার, পুলিশ আর ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতাও চোখে পড়েছে।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, ‘আমাদের এখানে হানড্রেড পার্সেন্ট লকডাউন মানে ইউরোপ-আমেরিকার স্বাভাবিক অবস্থা। সেসব দেশে তো মানুষ কম। কিন্তু আমাদের দেশে মানুষ বেশি। দিনের পর দিন লকডাউনের মধ্যে থাকার মত আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমি চাইলে তিন ঘণ্টার মধ্যেই শহর ফাঁকা করে দিতে পারি। কিন্তু সেটা তো পারছি না।