১২ দিনে ২৭৭৬ আক্রান্ত, ঢাকাতেই ২৬০১
দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ রীতিমতো বেড়েই চলছে। এতে বাড়ছে মৃত্যুও। চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ১২ দিনেই (০১ আগস্ট থেকে ০১২ আগস্ট পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৭৭৬ জন। এর মধ্যে ঢাকাতেই আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬০১ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৭৫ জন। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু সন্দেহে ২২ জনের মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৪২ জন। এদের মধ্যে ২২১ জনই ঢাকার আর ঢাকার বাইরের ২১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুসারে, গত ০১ আগস্ট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৭ জন, ০২ আগস্ট ২৮৭ জন, ০৩ আগস্ট ২৬৪ জন, ০৪ আগস্ট ২৩৭ জন, ০৫ আগস্ট ২১৮ জন, ০৬ আগস্ট ২১৪ জন, ০৭ আগস্ট ২০৪ জন, ০৮ আগস্ট ২২৪ জন, ০৯ আগস্ট ২১০ জন, ১০ আগস্ট ২২৬ জন, ১১ আগস্ট ২১৩ জন এবং ১২ আগস্ট ২৪২ জন।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্নতা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, এডিসবাহিত ডেঙ্গু এ বছর আবার অত্যন্ত আশঙ্কাজনক রূপ নিয়েছে। ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুর মহামারি ঘটেছিল। তাই এবার সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৩৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬২ জন আক্রান্ত হয়েছে জুলাই ও আগস্ট মাসে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৪ হাজার ৫১৬ জন। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু সন্দেহে ২২ জনের মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি এখনো মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা শেষ করেনি এবং একটি মৃত্যুও ডেঙ্গু বলে নিশ্চিত করেনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৮৯৬ রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই আছে ৮২৪ আর বাকি ৭২ জন ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ভর্তি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩১, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৩, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ১৩, ধানমন্ডি ইবনে সিনা হাসপাতালে ১৮, স্কয়ার হাসপাতালে ১১, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১৪, ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১৪, আদ-দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন।
এদিকে ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরে নতুন ২১ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে ১৭ ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি ২ জন।
দেশের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইউজিসি অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, ডেঙ্গুতে জ্বর-ব্যথা যেকোনো সমস্যায় প্যারাসিটামলের বাইরে অন্য কোনো ওষুধ খাবেন না। পাশাপাশি পানি-শরবত এগুলো খেতে হবে। অন্য কোনো ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যাবে না। তাতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়তে পারে। জ্বর-সর্দিকাশি-গলাব্যথা হলে ডেঙ্গু-করোনা দুটিরই পরীক্ষা করাতে হবে। ওষুধ-পরীক্ষা সব কিছুই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে। অবহেলা করা যাবে না। শুরুতেই সতর্ক হতে হবে।
তিনি বলেছেন, ঘরবাড়ির আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোথাও যেন তিন থেকে পাঁচ দিনের বেশি জমা পানি না থাকে। ঘরের আনাচকানাচ পরিষ্কার রাখতে হবে। ফ্রিজের নিচে-টবে পানি যেন না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেকে ছাদবাগান করে, সেখানে পানি জমার সম্ভাবনা থাকে। সেখানে সতর্কতার সঙ্গে পানি পরিষ্কার করতে হবে। আর নিজেকে সতর্ক থাকতে হবে।