শাশুড়ির আত্মহত্যা, পুত্রবধূর রহস্যজনক মৃত্যু
পরিত্যক্ত ঘরের আড়ায় ঝুলছে বৃদ্ধ শাশুড়ির মরদেহ। পাশের ঘরে চিকিৎসাধীন রয়েছে একমাত্র পুত্রবধূ হিরা খাতুন ওরফে জোসনা (২৬)। স্বামীর মুখে শাশুড়ির এমন মৃত্যুর খবর শুনে পুত্রবধূর রহস্যজনক মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা শুক্রবার (২৭ আগস্ট) রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামে ঘটেছে।
নিহতরা হলেন- ওই গ্রামের মৃত বসির উদ্দিনের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন (৬০) ও নিহতের পুত্র আব্দুর রহমানের স্ত্রী হিরা খাতুন ওরফে জোসনা (২৬)।
শনিবার (২৮ আগস্ট) সকালে সরেজমিন গেলে নিহতের পরিবার ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত বুধবার নিহত হিরা খাতুন তাঁর দুই বছরের সন্তানকে গালাগালি ও মারধর করেন। এ নিয়ে শাশুড়ি রোকেয়া খাতুনের সাথে গৃহবধূ হিরার বাগবিতণ্ডা হয়। প্রায় তিনদিন ধরে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে বউ–শাশুড়ির চলে মান অভিমান। একপর্যায়ে শুক্রবার রাতে আব্দুর রহমান তাঁর মা ও স্ত্রীর মান অভিমান ভাঙায় এবং স্ত্রী হিরা খাতুন অসুস্থ হলে তাঁকে পল্লী চিকিৎসক ডেকে শরীরে স্যালাইন পুশ করান।
এরপর রাতে হঠাৎ মায়ের খোঁজ নিতে যান ছেলে আব্দুর রহমান। ঘরে মাকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে ছেলে। একপর্যায়ে রাত একটার দিকে বাড়ির পরিত্যক্ত ঘরের আড়ার সাথে ওড়নায় ঝুলতে দেখে প্রতিবেশীদের খবর দেয় ছেলে আব্দুর রহমান। পরে প্রতিবেশীরা এসে মায়ের মরদেহ উদ্ধার করে।
তারা আরও জানায়, স্বামীর মুখে শাশুড়ির গলায় ফাঁস লাগিয়ে মৃত্যু খবর শুনে পুত্রবধূ হিরা রহস্যজনকভাবে মারা যান। পারিবারিক কলহের জেরে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
এ বিষয়ে নিহত গৃহবুধূর মা রাশিদা খাতুন বলেন, চার বছর আগে মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। জামাই খুব ভালো। কিন্তু শাশুড়ি খুব খারাপ ছিল। বিয়ের পর থেকেই অত্যাচার করত। শাশুড়ির সাথে মেয়ের ঝগড়া চলছিল। এ নিয়ে শাশুড়ি গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। শাশুড়ির মৃত্যুর খবর শুনে আমার মেয়ের কিভাবে মৃত্যু হলো তা আমি বুঝতে পারছি না।
নিহত গৃহবধূর স্বামী আব্দুর রহমান বলেন, তিনদিন ধরে বউ-শাশুড়ির ঝগড়া চলছিল। শুক্রবার চাচাতো ভাইয়েরা এসে মিটমাট করে দেয়। রাতে বউ অসুস্থ হলে গ্রাম্য ডাক্তার এনে স্যালাইন দেওয়া হয়। পরে মাকে ডাকতে গিয়ে ঘরে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করি। একপর্যায়ে বাড়ির পরিত্যক্ত ঘরে মায়ের ঝুলন্ত মরদেহ পাই। এরপর মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে বউ স্ট্রোক করে মারা যায়।
পান্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে আব্দুর রহমানের মা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে এবং তাঁর স্ত্রী শাশুড়ির মৃত্যুর খবর শুনে স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে জানতে পেরেছি।
কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রাকিব হাসান বলেন, খবর পেয়ে সকালে শাশুড়ি ও পুত্রবধূর মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। পরে মরদেহ দু’টি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরে এমন ঘটনা ঘটেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।