বরিশালে স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙা উল্লাস
দীর্ঘ ১৭ মাস অপেক্ষার পর সারা দেশের ন্যায় বরিশালেও খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তের পর থেকেই শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস বইতে শুরু করে।
রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে বরিশাল বিভাগে এই আনন্দ-উচ্ছ্বাস রূপ নেয় বাস্তবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্যতা।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৭ মাস পর স্কুল খোলার প্রথম দিনে বরিশাল বিভাগের প্রাথমিক বিভাগে প্রায় দশ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ বিদ্যালয়ে ক্লাস করেছে। তেমনিভাবে মাধ্যমিকেও এই হার এক তৃতীয়াংশ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্কুলগুলোতে লাইনে দাঁড়ানো ও বেঞ্চে মোটা দাগ দিয়ে চিহ্নিত করে দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের প্রবেশ পথে প্রথমেই সকলের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয় এরপর হ্যান্ড স্যানিটাইজ করে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হয় সকলকে। একটি বেঞ্চে দুইজন শিক্ষার্থীকে বসিয়ে পাঠদান করা হয়েছে। পাশাপাশি সকল শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আব্দুল্লাহ নামে এক শিক্ষার্থী জানান, কবে স্কুলে গেছি মনে নেই। রোববার স্কুলে যাবো বলে কাল সারারাত তেমন ঘুম হয়নি। ভাবছি কখন সকাল হবে। কখন স্কুলে যাবো। সব মিলিয়ে স্কুলে যাওয়া ছিলো বাঁধ ভাঙা আনন্দের।
শিক্ষকরা জানান, শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করাই তাদের কাছে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।
নলছিটির পাওতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা ও বরিশালের একে ইন্সটিটিউটের সহকারি শিক্ষক জসীম উদ্দিন জানান, শ্রেণিকক্ষ জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতও স্যানিটাইজ করা হয়েছে। তারপর সকলকে মাস্ক পরা অবস্থায় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া এবং শ্রেণিকক্ষে তিন ফুট দূরত্ব রেখে শিক্ষার্থীদের বসানো হয়েছে।
আরও জানান, রোববার পঞ্চম ও তৃতীয় শ্রেণির তিনটি ক্লাস হয় । একইভাবে একই সময়ে তৃতীয় শ্রেণির পর্যায়ক্রমে বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের পাঠদান অনুষ্ঠিত হয়।
মঙ্গলবার হবে পঞ্চম ও প্রথম শ্রেণির ক্লাস। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় ক্লাস শুরু। ১০ মিনিট কোভিড-১৯ সচেতনতা শেষে সকাল ৯টা ৪০ মিনিট থেকে মূল পাঠদান শুরু হবে। ক্লাস শেষ হবে দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে।
বৃহস্পতিবারও সকাল সাড়ে ৯টায় ক্লাস শুরু। ১০ মিনিট কোভিড-১৯ সচেতনতা বিষয়ে অবহিত করে ক্লাস শুরু হবে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে। শেষ হবে দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে।
তারা জানান, সকালে প্রথম শিফটে করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে শ্রেণিকক্ষের চেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলে দ্বিতীয় শিফট দুপুরের পর শুরু হবে। দ্বিতীয় শিফট প্রতিদিন বেলা ১টা ১৫ মিনিট থেকে বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত চলবে।
নতুন ক্লাস রুটিনে জানানো হয়েছে যে, ২০২১ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার চারটি করে ক্লাস নেওয়া হবে।
২০২২ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের শনিবার ও রোববার চারটি ক্লাস হবে। এছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস সোমবার, সপ্তম শ্রেণির মঙ্গলবার, অষ্টম শ্রেণির বুধবার ও নবম শ্রেণির ক্লাস বৃহস্পতিবার নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। কয়েক দফা উদ্যোগ নেওয়া হলেও করোনা পরিস্থিতি ‘অনুকূলে’ না আসায় দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়।