প্রবেশনে মিলছে মুক্তি
প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন গোলাম রাব্বানীর বোন। মানতে না পেরে বোনজামাই আবুল কালামকে মারধর করেন রাব্বানী। ঘটনাটি মামলা পর্যন্ত গড়ায়। দোষ প্রমাণিত হওয়ায় গোলাম রাব্বানীকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। তবে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠাননি। বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মামলার প্রকৃতি ও গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তাঁর প্রবেশন মঞ্জুর করেন বিচারক।
সাজাপ্রাপ্ত হয়েও গোলাম রাব্বানী বাড়িতে থেকে সংশোধনের সুযোগ পান। শর্ত ছিলো- এলাকার তিনজন নিরক্ষর ব্যক্তিকে অক্ষরদান করতে হবে। গত এক বছরে রাব্বানী সেই কাজটিও করেছেন। গত বুধবার গোলাম রাব্বানীকে চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি দেন রাজশাহীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম। রাব্বানী এখন পুরোপুরি মুক্ত।
রাব্বানীর বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার পানিশাইল গ্রামে। রাজশাহীতে এভাবে ‘দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স’ অনুযায়ী বাড়িতে থেকেই সাজাভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন ছোটখাটো মামলার আসামিরা। তবে থাকছে বাবা-মায়ের সেবা করা, বৃক্ষরোপণ, অক্ষরদান কিংবা সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার শর্ত। তাহলেই এভাবে প্রবেশনের মাধ্যমে মিলছে মুক্তি।
রাজশাহী প্রবেশন অফিসারের কার্যালয়ের তথ্যমতে, রাজশাহী মহানগর এলাকার ১৫ জন আসামি এ পর্যন্ত প্রবেশন সুবিধা পেয়েছেন। জেলার বিভিন্ন এলাকার আরও ৫৫ জন আসামি পেয়েছেন এই সুবিধা। এদের মধ্যে ৩০ জন শর্ত মেনে ঠিকঠাক মতোই প্রবেশনের সময়কাল শেষ করেছেন। তবে দুজন শর্ত মানতে পারেননি। মাদক মামলার এ দুই আসামি আবার মাদক সেবন করায় যেতে হয়েছে কারাগারে।
প্রবেশনে মুক্ত হওয়ার পর রাব্বানী বলেন, তিনি গ্রামের নিরক্ষর তিনজনকে অক্ষরজ্ঞান দিয়েছেন। তাঁরা এখন নিজেদের নাম লিখতে পারেন। শর্ত অনুযায়ী তিনি কয়েকটি গাছও লাগিয়েছেন। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে করোনাকালে এলাকায় বিতরণ করেছেন মাস্ক। জনসচেতনতা গড়ে তুলতে কাজ করেছেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে। এ ছাড়া নানারকম বই সংগ্রহ করে পড়েছেন। কী কী বই পড়েছেন, তার সারাংশ আদালতে জমাও দিতে হয়েছে। এখন তিনি কোন অপরাধ না করার পণ করেছেন।
এদিকে প্রবেশনে যাওয়ার পর রাজশাহীর কাউকে কাউকে সরকারের তরফ থেকে গরুও দেওয়া হয়েছে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য। এদের মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলার ছোট নারায়ণপুর গ্রামের জাকির হোসেন (৩১) ও তাঁর স্ত্রী সায়মা খাতুন (২৮) গরু পেয়েছিলেন। শিল্পী খাতুন (২৮) নামের এক প্রতিবেশীকে মারধরের ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। আদালতে যখন রায় ঘোষণা হয়, তখন সায়মা ছিলেন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এটি বিবেচনায় নিয়ে আদালত এই দম্পতিকে প্রবেশনে থাকার সুযোগ দেন।
এরপর গত ১২ মার্চ ছেলে সন্তানের জন্ম দেন সায়মা। প্রবেশনকাল সফলভাবে শেষ করায় গত বুধবার সায়মা ও জাকিরকে মামলা থেকে চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। সায়মা খাতুন বলেন, প্রবেশনের মাধ্যমে আদালত সুযোগ দিয়েছিলেন বলে আমি বাড়িতেই সন্তান প্রসব করতে পেরেছি। শিল্পী খাতুনও আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে আমাদের একটি গরুও দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন বুঝেছি, সবার সঙ্গে মিলেমিশেই চলতে হয়। কারও সঙ্গে ঝামেলা করা ঠিক না।
রাজশাহী প্রবেশন অফিসার মতিনুর রহমান জানান, আগেও দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স ছিল। তবে এটি তেমন প্রয়োগ হতো না। এখন বিচারের ধরণ পাল্টেছে। তাই এটি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রবেশনে গিয়ে কেউ যেন আদালতের দেওয়া শর্ত না ভাঙে সেটি আমরা দেখে থাকি। কোন আসামি শর্ত ভাঙলে আদালতকে অবহিত করা হয়। তখন তাঁকে ঠিকই কারাগারে যেতে হয়।