ঐতিহ্য হারাচ্ছে শতবর্ষের মহাত্মা গান্ধীর অভয় আশ্রম
কুটির শিল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে মহাত্মা গান্ধী ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠা করলেও। বর্তমানে ঐতিহ্য হারাচ্ছে শতবর্ষের মহাত্মা গান্ধীর অভয় আশ্রমটি। পৃষ্ঠপোষকতা ও দিকনির্দেশনার অভাবে ২০৭ শতক জমির অধিকাংশ এখন অব্যবহৃত। অবৈধ দখলের অভিযোগও রয়েছে।
বিশিষ্টজনরা মনে করেন ট্রাস্ট্রি প্রতিষ্ঠানটি পরিকল্পিত পরিচালনাতেই বাস্তবায়ন হবে গান্ধীজীর স্বপ্ন। পূনরায় স্বনির্ভর হবে হাজার হাজার মানুষ।
কুমিল্লার ইতিহাস বিষয়ক একাধিক গ্রন্থের সূত্রমতে, ১৯২১ সালে সবিতা মিশন আশ্রম নামে যাত্রা শুরু করে অভয় আশ্রম। ১৯২৩ সালে মহাত্মা গান্ধী অথবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অভয় আশ্রম নামকরণ করেন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এটি'র অবস্থান ছিল নগরীর ঢুলিপাড়া পিলগ্রামে। বর্তমানে যা আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন কেটিটিসিএল এলাকা হিসাবে পরিচিত।
অভয় আশ্রম ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজির পরিচালক মতিলাল ভদ্র জানান, অভয় আশ্রমের ট্রাস্ট্রে ২০৭ শতক জমি আছে। এখানে মেডিকেল কোর্সে একশ’জন, কিন্ডার গার্টেন স্কুলে ৪০ জন ও ছাত্রাবাসে ২০-২৫ শিক্ষার্থী রয়েছে। করোনাকালে সবগুলো সেবা বন্ধ।
গান্ধীজী, কবি গুরুসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পায়ের ধুলি দিয়েছেন। ৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল স্মৃতি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে মতিলাল বলেন, যেহেতু স্বনির্ভরতার জন্য এ প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে। যুগোপযোগী কিছু প্রকল্প বা কোর্স করা যেতে পারে। অভয় আশ্রমের কমিটি আছে। এ বিষয়ে কমিটির সদস্যদের পরামর্শ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রতিটা ধাপে ধাপে অনেক টাকার প্রয়োজন। দোকান ভাড়াসহ প্রতিষ্ঠানের এখন যা আয়, তা খুবই কম।
অভয় আশ্রমের প্রাক্তন সভাপতির ছেলে বাসব কান্তি নাথ অভিযোগ করে বলেন, প্রতিষ্ঠানের দক্ষিণ পাশের কিছু জায়গা অন্যদের দখলে চলে গেছে। প্রশাসন যদি সহযোগিতা করে বিষয়টির সঠিক সমাধান হবে।
লেখক ও গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, গ্রামভিত্তিক কুটির শিল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার জন্য আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করেন কংগ্রেস নেতারা। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন, চরকা কাটা ও খদ্দের আন্দোলন গড়ে তোলা ছিল অভয় আশ্রমের বিপ্লবীদের কাজ। অভয় আশ্রমের মূল কেন্দ্র লাকসাম রোডে। এছাড়াও চান্দিনা, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে ৮/১০টি শাখা ছিলো। ১৯২৫ ও ২৭ সালে মহাত্মা গান্ধী পুরাতন অভয় আশ্রমে দুইবার আসেন। ১৯২৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অভয় আশ্রমের জন্য ভারতবর্ষে কুমিল্লা ব্যাপক পরিচিতি ও খ্যাতি লাভ করে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে অভয় আশ্রমের ভূমিকা ছিলো অগ্রগণ্য। ১৯৩০, ৩২ ও ৪২ সালে পরপর তিনবার অভয় আশ্রমকে বেআইনী ঘোষণা করে বৃটিশ সরকার। স্বাধীনতা সংগ্রামেও অভয় আশ্রমের ভূমিকা রয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো অভয় আশ্রম কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা বিদ্যাপিঠ নয়। মানবকল্যাণে এ প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন কংগ্রেসের নেতারা।
নগরীর বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, মহাত্মা গান্ধী ও বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য অভয় আশ্রম। তাদের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি। শতবছরের ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠান আজ অবহেলিত। প্রতিষ্ঠানটি পরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। বাস্তাবায়ন হবে গান্ধীজির স্বপ্ন।
গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট বোর্ড সভাপতি চন্দন কুমার রায় বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ছাড়াও তিনটি দেশে এর শাখা ছিলো। আমরা প্রতিষ্ঠানটির নাম টিকিয়ে রেখেছি। এটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানে অনেক কিছু করা সম্ভব। ২০৭ শতক জমি রয়েছে। আরও ৪০শতক জমি কোথায় আছে, তা আমাদের জানা নেই। সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে শতবর্ষে আমরা তাই বাস্তবায়ন করবো।
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, মানবকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট। এ বিষয়ে খবর নিয়ে ট্রাস্ট সদস্যদের পরামর্শে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।