নাচে-গানে কারাম উৎসব উদযাপন করছে ওঁরাও সম্প্রদায়
লাল হলুদ শাড়ি আর খোপায় ফুল, রঙিন সাজে বাদ্যের তালে নাচে-গানে মাতোয়ারা হয়ে নওগাঁয় উদযাপন করা হল আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব। নিজ ঐতিহ্য অনুযায়ী পূজা-আর্চনা শেষে করে, সৃষ্টিকর্তার প্রতি এই নাচ-গান উৎসর্গ করার মাধ্যমে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী নাচ-গানে মেতে ওঠেন এই সম্প্রদায়ের কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতীরা।
মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর বুধরিয়া স্কুল মাঠে এই কারাম উৎসবের আয়োজন করা হয়।
এতে নওগাঁ জেলা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সম্প্রদায় গোষ্ঠীর ১০টি নাচের দল তাদের নৃত্য পরিবেশন করে। এই উৎসবকে ঘিরে সেখানে ভীড় করে আশপাশের গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ। সকল ধর্মের মানুষকেই এই উৎসব উপভোগ করতে দেখা যায়।
বর্ষা শেষে আসে শরৎকাল। খাল-বিল ও নদীনালায় থাকে পূর্ণতা। চোখ জুড়ানো প্রকৃতিতে আসে তারুণ্য। ঝলমলে রোদে খাল-বিলে হাসে শাপলা-শালুক। ঠিক সেই ভাদ্র মাসে আসে ওঁরাও সম্প্রদায়ের অন্যতম বার্ষিক উৎসব কারাম। যা একটি বৃক্ষ পূজার উৎসব।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে কথা হয় আপন কিসপটা, উজ্জল খালকো, বসাক পাহানের সাথে। এসময় তারা জানান, উপোসের মধ্য দিয়ে কারাম পূজা শুরু করেন আদিবাসীর নর-নারীরা। তারা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপোস থাকে। সন্ধ্যার পরে মাদল, ঢোল, করতাল ও ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে এলাকা থেকে কারামগাছের (খিল কদম) ডাল তুলে আনা হয়।
এরপর তারা একটি পূজার বেদি নির্মাণ করেন। সূর্যের আলো পশ্চিমে হেলে গেলে সেই কারামগাছের ডালটি পূজার বেদিতে রোপণ করা হয়। পুরোহিত উৎসবের আলোকে ধর্মীয় কাহিনি শোনান। সেই সঙ্গে চলে কাহিনির অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা। ব্যাখ্যা শেষ হলে বেদির চারধারে ঘুরে ঘুরে যুবক-যুবতীরা নাচতে থাকেন।
এদিকে এই উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার।
এসময় তিনি বলেন, এখানকার নৃ-গোষ্ঠীর নতুন প্রজন্মকে সমাজের মূল স্রোতে আনতে শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। নৃ-গোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েদের শিক্ষায় আগ্রহ বাড়ানোর পাশাপাশি মাদকমুক্ত সমাজ গঠনেও ভূমিকা রাখতে হবে। কারাম উৎসব ভাতৃত্ববোধ তৈরি ও সুষ্ঠু সংস্কৃতির চর্চায় ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, সংস্কৃতির বিকাশ ও লালনে সরকারের নানামsখী উদ্যোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে এখানকার নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ তরুণীদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিকদল গঠন করা হয়েছে। এসময় এ অঞ্চলের নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগীতার আশ্বাস দেন তিনি।