স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে বেশি ঘাটতি খুলনায়, কম চট্টগ্রামে
স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে অঞ্চল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি খুলনা বিভাগে, আর কম চট্টগ্রামে। এছাড়া শহরের তুলনায় গ্রামে ঘাটতি বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে।
গবেষণা বলছে, পুষ্টিকর ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার তুলনামূলক কম খাচ্ছে গড়ে সব বয়সের মানুষ মিলে ৪০-৫০ শতাংশ। খাদ্যে বৈচিত্র্যের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য গ্রহণের হার বেড়েছে। শস্য হিসেবে ভাত এখনো সব কিছুর ওপরে আধিপত্য বজায় রেখেছে। সেই তুলনায় ডাল, বাদামসহ বীজজাতীয় খাদ্য এবং ফল গ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম।
গবেষণায় দেখা গেছে, এক টাকা খরচে ফল, শাকসবজি, দুধ ও ডিম থেকে যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়, সেই তুলনায় চিনি, চর্বি, তেল, মাংস, হাঁস-মুরগি ও মাছ থেকে অনেক কম পুষ্টিগুণ মেলে। কলমিশাক, পুঁইশাক, লালশাক, পাটের পাতা, করল্লা পাতা, পালংশাকসহ সবুজ শাক এবং নানা ধরনের মৌসুমি ফলে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি।
সম্প্রতি এই গবেষণার প্রতিবেদন প্রস্তুত করে সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে সহায়তা করেছে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও), ইউরোপীয় কমিশন, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) ও বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে বাজারে থাকা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্যগুলো দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে নেই। সেদিকেও নজর দেওয়া দরকার। আবার কম খরচে কিভাবে দরিদ্র মানুষ খাবার পেতে পারে সেটাও দেখতে হবে।
গবেষণায় পাওয়া তথ্য বলছে, স্বাস্থ্যকর খাবার পরিমাণ মতো খেতে পায় না সবচেয়ে বেশি খুলনা বিভাগের মানুষ। এই হার ৬৫ শতাংশ। সবচেয়ে কম ঘাটতি চট্টগ্রামে ২৫.৫ শতাংশ। এ ছাড়া ঢাকায় ঘাটতি ৩০.৪ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৪৭.৩ শতাংশ, সিলেটে ৪১.২ শতাংশ, রংপুরে ৪৭.৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৪৫.৬ শতাংশ এবং বরিশালে ৩৫.৬ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে ঘাটতি ৪২.৫ শতাংশ এবং শহরে ঘাটতি ৩৯ শতাংশ।
আজ শনিবার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব খাদ্য দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য- 'আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ—ভালো উৎপাদনে ভালো পুষ্টি, আর ভালো পরিবেশেই উন্নত জীবন।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন গণমাধ্যমকে বলেছেন, অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিতে বাংলাদেশ আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তবে এর উল্টোপিঠে অপুষ্টির প্রসার, অনুপুষ্টির ঘাটতি এখনো আছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অপুষ্টি দূর এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন করা জরুরি। এর জন্য স্থিতিস্থাপক খাদ্যব্যবস্থা তৈরি করা দরকার।
২০১৭-১৮ সালের 'নিউট্রিশন সার্ভে অব বাংলাদেশ' এবং ২০১৫ সালের 'বাংলাদেশ ইন্টিগ্রেটেড হাউসহোল্ড সার্ভ'-এর প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে, এর সঙ্গে মিলিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে বাজারমূল্য সংগ্রহ করে এই গবেষণা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।