লালন শাহের ১৩১তম তিরোধান দিবস: এবারও নেই অনুষ্ঠান
বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩১তম তিরোধান দিবসে এবারো কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে না। প্রতি বছর ১৭ অক্টোবর লালনের তিরোধান দিবস। এ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় লালনের মাজার প্রাঙ্গণে আয়োজন থাকে তিনদিনের নানা অনুষ্ঠানের।
স্থানীয় প্রশাসন মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে জারি করা এ বিষয়ে আগের নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছে। নিষেধাজ্ঞা প্রথম জারি করা হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে লালনের ১৩০তম তিরোধান দিবসে। এরপর এ বছরের ২৮ মার্চ (১৪ চৈত্র) লালনের জন্মদিন ও দোল উৎসবের অনুষ্ঠানও বন্ধ ছিল।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে এখনো গণজমায়েতের ক্ষেত্রে সরকারি বিধিনিষেধ বহাল রয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক এক সংবাদ সম্মেলন করেন লালন একাডেমিতে। তিনি জানান, এর আগে ৭ অক্টোবর লালন একাডেমির কার্যকরী পরিষদের সভায় করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ দিবস পালন না করার বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
লালন একাডেমি হলো লালন মাজার ও এর সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার একটি নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান, যেখানে স্থানীয় জেলা প্রশাসক পদাধিকারবলে সভাপতি থাকেন। বর্তমানে এ কমিটির নির্বাচন না হওয়ায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি অ্যাডহক বডি কাজ করছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, লালনের আখড়ায় যেকোনো অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা বাউল ভক্ত, অনুরাগী, গবেষক ও সাধারণ দর্শকসহ চার-পাঁচ লাখ লোকের সমাগম হয়ে থাকে। বর্তমান পরিস্থিতি এত বিশাল সমাগম ধারণ করার অনুকূলে নয়।
লালব গবেষক হৃদয় বলেন, আমরা এই ধামে বছরে দুইবার আসি। এই পহেলা কার্তিকে তিরোধান দিবস এবং দোল উৎসবে। গেলো অনুষ্ঠানে প্রধান ফটক তালা দেওয়া থাকায় আমরা ভেতরে ঢুকতে পারিনি। এবারও তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান না হলেও আমরা ভক্ত সাধকরা হাজির হয়েছি।
লালন মাজারের খেলাফতধারী বাউল ফকির আলাউদ্দিন শাহ মনে করেন লালনের মাজারের বা বাউল দর্শনের সঙ্গে মেলার কোনো সম্পর্ক নেই। মাজার হলো বাউলদের সাধন-ভজনের জায়গা। মেলা হলো সাধারণের পণ্য কেনা-বেচার জায়গা। সেক্ষেত্রে লোক সমাগমের আশঙ্কায় মেলা করা যাচ্ছে না বলে বাউলদের মাজারে প্রবেশ বন্ধ করে দিতে হবে এটা ঠিক হচ্ছে না।
লালন একাডেমির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সেলিম হোসেন বলেন, যত দিন যাচ্ছে ফকির লালন সাঁইয়ের জীবন ও গানের ব্যাপ্তি ততই প্রভাব বিস্তার করছে মানুষের মাঝে। ১১৬ বছর বেঁচে ছিলেন, মৃত্যু হয়েছে ১৩১ বছর আগে। এই দীর্ঘ সময়ও বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাননি। বরং তার সৃষ্টির ঔজ্জ্বল্য বেড়েছে, বেড়েছে পরিধি। ফকির লালন শাহ শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে এক ঐন্দ্রজালিক মোহময়তা বিস্তার করে চলেছেন। দিনদিন তার সে ঐন্দ্রজালিক বলয়ের বিস্তৃতি ঘটছে। অগণিত মানুষ তার বিশাল সৃষ্টি জগতে প্রবেশ করে সন্ধান করছেন যেন লালনেরই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, বাউল ফকিরদের সংখ্যাও কয়েক হাজার। সবার মাজারে প্রবেশ অনুমোদন করলে সেটাও হবে বড় ধরনের জমায়েত। এটা মাথায় রাখতে হচ্ছে বলেই মাজার বন্ধের সিদ্ধান্ত চলে আসছে।