প্রধানমন্ত্রীকে আক্রান্ত এলাকায় যেতে বললেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশের চলমান ধর্মীয় সহিংসতায় আক্রান্ত এলাকাগুলোতে যেতে বললেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আপনি কি একটি কথার উত্তর দিবেন? আজ সাত দিন হয়ে গেছে আপনি এই জায়গাগুলো পরিদর্শন করতে যাননি কেনো। আপনি যদি যেতেন দেখতেন, ১৫ আগস্টের জন্য যত কান্না করেন, যে দুঃখ-বেদনা আমরা পাই তার থেকে কম বেদনা আপনার হত না। অনুগ্রহ করে আজই আক্রান্ত এলাকায় ছুটে যান। প্রথমদিন যদি কুমিল্লা যেতেন তাহলে আজ এ ঘটনা ঘটতো না।
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) ধানমন্ডিতে অবস্থিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। কুমিল্লায় ও দেশের বিভিন্ন জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামণ্ডপ ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আবেদন করছি আপনি বেরিয়ে যান, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিতকে সঙ্গে নেন। আলেম ওলামাদের সঙ্গে নেন। প্রত্যেক জায়গায় যেয়ে বলেন এটা অনৈসলামিক কাজ। আমরা ভাই বোন, আমরা মিলিতভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছি।
তিনি বলেন, ফেনীর হাজীগঞ্জে হিন্দুরা জেলখানায় আছে। দেখতে যেয়ে দেখি মন্দিরে তালা লাগানো। আমরা তাদের সহমর্মিতা জানাতে গিয়েছি, আমাদের দেখে তার দেওয়াল টপকে পালানোর চেষ্টা করেছে। মানুষ কতটা ভয়-ভীতিতে থাকলে এমন করতে পারে। হাজীগঞ্জের সাংবাদিকরা সহিংসতা ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। তাদের গায়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। তারা যখন সহিংসতা ঠেকাতে পারেনি তখন মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিল। হাজীগঞ্জ পুলিশ যদি রাবার বুলেট ব্যবহার করতো তাহলে হয়তো আহত বেশি হত, কিন্তু নিহত হতো না।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য আরও বলেন, উনার একটাই বক্তব্য। কাউকে ছাড় দিব না, কঠিন শাস্তি দেব। এটা বলে পুলিশের আয়ের ব্যবস্থা করেছেন। এই কথার মানে হচ্ছে যাকে পারো তাকে ধরো। জাফরুল্লাহকে বেশি ধরো না। জেলখানাতে মরে যেতে পারে। এজন্য মামলা দিছে, মাছ চুরির মামলা। কোর্টের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকুক। কোর্টের দরজায় প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে জেলে যাওয়া ভালো। আমি হাঁটতে পারি না, আমাকে জেলে যাওয়ার চেয়ে বেশি শাস্তি দিয়েছে তারা।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাগুলোকে সংগঠিত ও পরিকল্পিত। এর ফলে সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। অবিলম্বে এই হামলাগুলো বন্ধ করতে হবে। এরপর আর একটা হামলা মানে হচ্ছে এই সরকার পতনের আন্দোলন।
তিনি বলেন, প্রতিটি হামলার ক্ষেত্রে সরকার ও প্রশাসনের যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল তা তারা নেননি। একটা দুইটা ঘটনাকে আকস্মিক বলে চালিয়ে দেওয়া গেলেও বার বার সেগুলোকে জায়েজ করার সুযোগ নেই। পরিষ্কার হয়ে গেছে যে এই ঘটনাগুলো সৃষ্টি করা হচ্ছে, ঘটতে দেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলন ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চোধুরীর সভাপতিত্বে এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ৬৯‘ গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আসাদের ছোট ভাই ডা. নূরুজ্জামান, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান। আরও উপস্থিত ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য আক্তার হোসেন, হাবিবুর রহমান রিজু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।