করোনাকালে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ছিল বিশ্বে অনুকরণীয়
করোনা মহামারির মহাসংকটকালে বিশ্ব অর্থনীতি যখন স্তিমিত তখন শেখ হাসিনা জীবন ও জীবিকার সমন্বয় করে দেশকে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন তা বিশ্বে অনুকরণীয়। শিল্প- কারখানা, গার্মেন্টস সহ অর্থনৈতিক বিভিন্ন সেক্টরে তার সাহসী সিদ্ধান্ত দেশকে স্বল্প উন্নত থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে সাহায্য করেছে। যা ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভ্যাকসিন সংগ্রহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলিসি এবং দক্ষতা সারা দুনিয়ায় প্রশংসিত হয়েছে।
বুধবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ কমিটি আয়োজিত ‘করোনাকালীন শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়নে শেখ হাসিনার ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ কমিটির চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। উপ কমিটির সদস্য সচিব ও আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমানের সঞ্চলনায় বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি ও ডি-৮ সিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমদের প্রধানমন্ত্রী শুধু বাংলাদেশে প্রশংসিত প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি একজন বিশ্বের প্রশংসিত প্রধানমন্ত্রী। একজন রাজনীতিবিদ পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে ভাবে আর শেখ হাসিনা পরবর্তী জেনারেশন নিয়ে ভাবেন।
দেশের অবকাঠামো খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদেক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৩ বছর আগে কি ছিলো বাংলাদেশ? আজ বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন শেখ হাসিনা তার ম্যাজিক্যাল লিডারশিপ দিয়ে। আজকে পাহাড়েও রাস্তাঘাটের চেহারা পাল্টে গেছে। আগামী বছর মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
দেশের ছোট ছোট বিষয় থেকে শুরু করে বড় বিষয়গুলো শেখ হাসিনা ধৈর্য ধরে সিদ্ধান্ত দেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এতো পরিশ্রম উনি কিভাবে করেন তার আমি মাঝে মাঝে ভেবে পাই না। বাংলাদেশের মানুষের জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সেজন্য নিউইয়র্ক টাইমস বলে, দারিদ্র বিমোচন করতে হলে বাংলাদেশের দিকে তাকাও।
এ সময় পাকিস্তানের চেয়ে সব সূচকে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে কাদের বলেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন প্লাস। আর পাকিস্তানের রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন। আজকে আমাদের গড় আয় ৭৩, পাকিস্তানের ৬৭। বাংলাদেশের এক টাকা সমান পাকিস্তানের ১ রুপি ৮৪ পয়সা সমান। কার ম্যাজিক্যাল লিডারশিপে এটা হলো? তিনি শেখ হাসিনা।
শিল্পমন্ত্রী অ্যাড.নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর একমাত্র চাওয়া ছিল দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, যেটা তারই মেয়ে অলরেডি অর্জন করেছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু দেশকে পুনর্গঠন করে যে অর্থনীতির স্বপ্ন দেখেছিলেন করোনার মহাসংকটেও আমরা তা অর্জন করতে পেরেছি। যা সম্ভব হয়েছে একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টায়। আমরা তার নেতৃত্বে করোনার ভয়কে জয় করতে পেরেছি।
মন্ত্রী বলেন, আমরা যখন ভেবেছিলাম রাস্তাঘাটে, কল কারখানায়, অফিস আদালতে প্লেগ রোগের মত লাশ আর লাশ পড়ে থাকবে। কিন্তু না সারা বিশ্বে প্রশংসা পাওয়া নেত্রী একক প্রচেষ্টায় পৌঁছে গেলেন তৃণমূলের মানুষের কাছে, বাড়িয়ে দিলেন সাহায্যের হাত। সরকার এবং দলের সমন্বয় করে মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শুরু করে ছিলেন পথ চলা। সারা দেশে প্রতিটি জেলায় জেলায় খবর নিয়েছেন। কোথায় কি সমস্যা খোঁজ নিয়ে সমাধান করেছেন।
যুবলীগের সাবেক এই সভাপতি বলেন, দেশের বাইরে অন্য দেশে যখন লাশের সারি, চার দিকে হাহাকার তখন আমাদের দেশে সে অবস্থা হয়নি, যা সম্ভব হয়েছে একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর অনুকরণীয় নেতৃত্বের কারণে।
করোনাকালীন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রসংশা করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, করোনার ভয়াবহতায় যখন সবাই গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিগুলো বন্ধ করে দিতে বললেন, তখন তার সাহসিকতা পূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল ‘না’ এখন যদি বন্ধ করি তবে পরে কি হবে। খোলা রাখার চেষ্টা কর। প্রধানমন্ত্রী তখন আমাদের টাকা দিয়েছেন, সাহস দিয়েছেন ফলে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি।
মন্ত্রী আরও বলেন, তখন তার ওই সিদ্ধান্তর ফলে বর্তমানে বিশ্বে আমাদের গার্মেন্টস প্রোডাক্টের বাজার ভালো। আজকে আমাদের বাইরে যখন অন্যদের জিডিপি মাইনাস তখন আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.৪৭ শতাংশ যা সারা বিশ্বের কাছে বিস্ময়।
এফবিআইয়ের সাবেক সভাপতি এবং ডি ৮ সিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, করোনা মহামারিতে শুধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না আমাদের জীবনের ওপরও নেমে আসে আতঙ্ক। প্রধানমন্ত্রী তখন ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ায়, তাদের মতামত গ্রহণ করে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে। সবশেষে সরকার আমাদের ৩০ হাজার কোটি টাকার ৩ বছর মেয়াদি প্যাকেজ ঘোষণা করে।এছাড়াও করোনার সংকট মোকাবিলায় বিদেশে বাজার ধরে রাখাসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে আমরা আজকে এই করোনার মহামারির মধ্যেও জাতিসংঘ ঘোষিত এলডিসি গ্রাজুয়েশন অর্জন করি।
আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন বাধা পেরিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। এই সরকারের কাছে মালিক শ্রমিক সমান। এই সরকার ব্যবসায়ীদের বলেছে তোমরা ব্যবসা করবা, পলিসি সাপোর্ট দিবে সরকার।
তিনি বলেন, আমাদের রিজার্ভ এখন ৪৮ বিলিয়ন ডলার। আমাদের রফতানি খাত এখন ভালো ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য ভালো ভাবে চলছে, এটা প্রধানমন্ত্রীর অবদান। কোনও ব্যবসায়ী যদি কোন কাজে তার কাছে যায়, যত দ্রুত সম্ভব তিনি তা সমাধান করেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেভাবে করোনা মহামারির সময়ে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন অতি শিগগিরই আমরা ডেল্টা প্লান বাস্তব রূপ দিতে পারব। এজন্য ব্যবসায়ীদের আরও গতিশীল হতে হবে মত দেন তিনি।