শনাক্তের ২৮ বছর পর আর্সেনিকমুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ!
শনাক্তের প্রায় ২৮ বছর পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অধিকাংশ এলাকা এখন অনেকটাই আর্সেনিকমুক্ত। সরকার নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমানে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে সরকার থেকে ২৬টি করে পানির উৎস দিচ্ছে। ফলে অনেকেই এখন নিরাপদ আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করতে পারছেন।
জানা যায়, জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদফতর ১৯৯৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ইউনিয়নের চামাগ্রাম নামক গ্রামে কয়েকটি কূপে পরীক্ষা চালিয়ে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি পায়। এরপরই সেই গ্রামের মানুষের জন্য ত্রাণকর্তা হিসেবে আসে ‘ব্রতী’ নামের একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে-কিভাবে বাংলাদেশে প্রথম আর্সেনিক শনাক্ত গ্রামের বাসিন্দাদের আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহ করা যায়।
গ্রামবাসীর জন্য আর্সেনিক পানির ভয়াবহতা দূর করতে ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মহানন্দা নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে প্রাকৃতিক উপায়ে ফিল্টার করে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে ব্রতী। বর্তমানে তারা বারোঘরিয়া ইউনিয়নের চামাগ্রাম, লাহারপুর ও লক্ষীপুর গ্রামের প্রায় পাঁচশ পরিবারে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে।
ব্রতী পানি বিশুদ্ধ করতে প্রয়োগ করছে প্রাকৃতিক পদ্ধতি। পাথর ও বালু দিয়ে নদীর পানি বিশুদ্ধ করে সরবরাহ করছে আশেপাশের ৩টি গ্রামে। নদী থেকে সংগ্রহ করা ফিল্টার পানি, গ্রামের মানুষেরা খাবার পানি ছাড়াও রান্না ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করছে। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে নদীর পানি বিশুদ্ধ করে সরবরাহ করায় দেশের প্রথম আর্সেনিক শনাক্ত গ্রামের চিত্র পাল্টেছে। ব্রতীর এই কার্যক্রমের ফলে বর্তমানে গ্রামটিতে কেউ নতুন করে টিউবওয়েল স্থাপন করছে না।
চামাগ্রাম গ্রামের সাইদুর রহমান বলেন, দেশের মধ্যে এই গ্রামে প্রথম আর্সেনিক ধরা পড়ার পর বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক গ্রামের আর্সেনিকের অবস্থা দেখতে আসেন। এরপর তিনি গ্রামবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার উদ্যোগ নেন। মহানন্দা নদী থেকে পাইপ দিয়ে আধা কিলোমিটার দূরে তাদের অফিসের পাশে পানি ফিল্টারের জায়গায় পানি উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর পানি ফিল্টার করার পর বাড়ি বাড়ি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে তারা।
তিনি আরও বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পাওয়া গেছে ব্রতীর সরবরাহ করা পানি ১০০ ভাগ বিশুদ্ধ। তবে আগে পানির বিল ১২০ টাকা ও সংযোগ নিতে ১৫০ টাকা লাগতো। তবে এখন তা বাড়িয়ে পানির বিল ৩৫০ টাকাও সংযোগ ফি ৪০০ টাকা করা হয়েছে। এতে গ্রামবাসীর একটু কষ্ট হচ্ছে।
গত ১০ বছর ধরে ব্রতীর পানি ব্যবহার করে একরামুল হকের পরিবার। একরামুল হকের স্ত্রী আকলিমা বেগম জানান, এই পানি পাওয়ার পর থেকে আমরা টিউবওয়েল বা কুয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আমাদের জন্য খুবই ভালো হয়েছে। যেকোন সময় যেকোন জায়গায় পানি সরবরাহ পাচ্ছি। রান্নাসহ সব কাজে এই পানি ব্যবহার করতে পারি।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা- ব্রতী'র ফিল্ড ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চামাগ্রামে আর্সেনিক শনাক্তের পর থেকেই ব্রতী এই এলাকায় বাড়ি বাড়ি আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে কাজ শুরু করে। এরপর থেকে সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পানি সরবরাহ করছি আমরা। আগামীতে পানি সরবরাহের পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে।
জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার সরকার বলেন, সরকার নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে নানা পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। বর্তমানে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে সরকার থেকে ২৬টি করে পানির উৎস দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে যেই এলাকার জন্য যেমন প্রযুক্তি দরকার, তেমনি প্রযুক্তি সম্পন্ন পানির উৎস দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও প্রত্যেক উপজেলায় পানির উৎস বিবেচনায় একটি করে স্কিম করা হচ্ছে। এতে ওই এলাকার মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় পানির গুণগতমান পরীক্ষা করে সে অনুযায়ী ফিল্টার দেওয়া হয়।
অমিত কুমার সরকার বলেন, আমাদের সাধারণত ইউনিয়ন ভিত্তিক বরাদ্দ আসে। এগুলো উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপিরা দিয়ে থাকেন। তাদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে দেশের প্রথম আর্সেনিক শনাক্ত হওয়া বারোঘরিয়ার চামাগ্রামে বরাদ্দ দেওয়া হয়।