বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নির্ধারিত দরে এলপি গ্যাস মিলছেনা অনেক জায়গাতেই। বরগুনা, বরিশাল, বগুড়া ও রাজশাহীতে বাড়তি দরে বিক্রি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারদর কমে যাওয়ায় আমদানি নির্ভর এই জ্বালানির দাম কমিয়ে নির্ধারণ করে বিইআরসি। নভেম্বর মাসে সিলিন্ডার প্রতি (১২ কেজি) ১ হাজার ৩১৩ টাকা থাকলে ২ ডিসেম্বর কমিয়ে ১ হাজার ২২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। নভেম্বর মাসে সৌদি সিপি ছিল প্রোপেন ৮৭০ ডলার ও বিউটেন ৮৩০ ডলার। যা চলতি মাসে কমে টন প্রতি হয়েছে ৭৯৫ ও ৭৫০ ডলার।
বিইআরসি ঘোষিত সেই দর খুব একটা কার্যকর হতে দেখা যাচ্ছে না। এখনও বিক্রেতারা খেয়ালখুশি মতো দর আদায় করছেন বলে খবর দিয়েছেন বার্তা২৪.কম এর প্রতিনিধিরা।
উপকূলীয় জেলা বরগুনার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট জেলা সদর ও তালতলী উপজেলা ঘুরে বেশি দরে বিক্রির কথা জানিয়েছেন। জেলা সদরের জননী টেলিকমে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস ১ হাজার ২৭০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে অন্যান্য কোম্পানির সিলিন্ডার ১ হাজার ১৮০ থেকে ১২’শ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন জননী টেলিকমের মালিক নাসির উদ্দিন। অপরূপা টেলিকমেও একই দরে বেচা কেনা হতে দেখা গেছে। তালতলী উপজেলা সদরের ডিলার মল্লিক ট্রেডার্সের মালিক আব্দুল মান্না মল্লিক বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন, পাইকারি ক্ষেত্রে বসুন্ধরার সিলিন্ডার ১ হাজার ২৫০ টাকা ও অন্যান্য কোম্পানির ১ হাজার ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যে দরে পেয়েছি সেভাবে বিক্রি করছি আমরা। নতুন দর পেলে নিশ্চয় কমে বিক্রি করা হবে।
বার্তা২৪.কম এর স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (বগুড়া) গণেশ দাস জানিয়েছেন, বগুড়াতে শনিবার (৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ১২ কেজি সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩২০ টাকা দরে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন দাম কমেছে তবে তাদের আগের দামে কেনা থাকায় ১ হাজার ২২৮ টাকার স্থলে ১ হাজার ২৫০ টাকায় সিলিন্ডার বিক্রি করছেন। শহরের বউ বাজার এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুদী দোকানদার বলেন গ্রাহকের বাড়ি ফোন করার ১০ মিনিটের মধ্যে সিলিন্ডার পৌছে দিয়ে থাকি। একারনে সরকারি নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে ৫০ টাকা বেশী নেয়া হয়।
বগুড়া শহরের উপশহর এলাকার শুভ সেনেটারির মালিক আবু ওবায়েদ বলেন তার দোকানে যমুনা ১ হাজার ২৩০ টাকা, বসুন্ধরা ১ হাজার ২৫০ টাকা, ওমেরা ১ হাজার ২৫০ টাকা, বেঙ্গল ১ হাজার ২৩০ টাকা, জেএমআই ১ হাজার ২৩০ টাকা, ফ্রেশ ১ হাজার ২৩০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। শহরের খান্দার এলাকার মাহবুব চাউল এন্ড এলপি গ্যাস ঘরের মালিক মাসুদুর রহমান বলেন পুর্বে ১ হাজার ৩২০ টাকা করে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করলেও শনিবার থেকে তারা নির্ধারিত মুল্যে বিক্রি করছেন।
বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে সরকার নির্ধারিত মূল্যে মিলছে না এলপি গ্যাস। পাইকাররাই বিক্রি করছে সরকার নির্ধারিত খুচরা দর। আর খুচরা বিক্রেতারা আরও বেশি দর আদায় করছেন। নগরীতে বসুন্ধরা ও ওমেরা এলপি গ্যাসের ১২ কেজির মূল্য ১ হাজার ২৬০ টাকা, বিএম ১ হাজার ২৩০ টাকা, যমুনা, লাফস ও বেক্সিমো ১ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেঙ্গল হার্ডওয়্যারের কর্ণধার মো. মামুন বলেন, আমরাই ১ হাজার ২২৮ টাকায় কিনছি, পরিবহন খরচ থেকে শুরু করে আরও অন্যান্য খরচ আছে। তাই ওই দামে ভোক্তাকে দেওয়া সম্ভব নয়। ওমেরা গ্যাসের পরিবেশক আকাশ সাহা বলেন, ‘আমরা পাইকারি হিসেবে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ১ হাজার ২২৮ টাকায় গ্যাস বিক্রি করছি। খুচরা বিক্রেতারা কত টাকায় বিক্রি করছেন তা জানি না, সেটা আমাদের জানার দরকারও নেই। পটুয়াখালী ও বরিশাল থেকেও বাড়তি দরে বিক্রির খবর পাওয়া গেছে।
তবে ভিন্ন চিত্র পাওয়া গেছে রংপুর জেলায় খোঁজ নিয়ে। জেলার খালাশপীর বাজারে বিইআরসির নির্ধারিত দরের চেয়ে কিছুটা কম দরেই বেচাকেনা হচ্ছে। এখানে ১ হাজার ১৮০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গত ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এলপি গ্যাসের দর ঘোষণা করে বিইআরসি। তখন বলা হয়েছিল আমদানি নির্ভর এই পণ্যটির সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো ঘোষিত দরকে প্রতি মাসের ভিত্তি মূল্য গণ্য হবে। সিপি উঠা-নামা করলে এলপিজির মূল্য উঠা-নামা করবে। আমদানিকারকের অন্যান্য কমিশন ও খরচ অপরিবর্তিত থাকবে।
বিইআরসি ঘোষিত কমিশনের বিষয়ে আমদানিকারকদের আপত্তির মুখে অক্টোবরে কমিশন বাড়িয়ে করা হয় ৪৪১ টাকা করা হয়েছে। ডিলার এবং খুচরা বিক্রেতার কমিশন বাড়িয়ে যথাক্রমে ৩৪ ও ৩৮ টাকা করা হয়। আর এই ৩৮ টাকা নিজের পকেটে রেখে অনেক জায়গায় বিক্রি করছেন ডিলাররা।
বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বার্তা২৪.কমকে বলেন, দর মনিটরিং করার জন্য সরকারের বিভিন্ন এজেন্সিকে বলা হয়েছে। বিইআরসি একার পক্ষে মনিটরিং করা সম্ভব না। বেশি দরে বিক্রি করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, কোনো নিউজ হলে ডিসি এবং ভোক্তা অধিদফতরকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে। পাশাপাশি বিইআরসির কোনো কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। কোনো অবস্থাতেই বেশি দর আদায় করতে দেওয়া হবে না।