গরুর মাংসের আচারে আজ স্বাবলম্বী মাসুমা

করোনাই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে মাসুমার সংসারের
করোনার প্রভাবে অনেকের ব্যবসা বাণিজ্যে ধস নেমে পথে বসেছে। আবার করোনাই অনেকের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। করোনার প্রভাবে নিজেই নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পেরেছেন বগুড়া শহরের কৈগাড়ি পুর্বপাড়ার বাসিন্দা মাসুমা ইসলাম নামের একজন গৃহিনী। করোনার প্রভাবে স্বামী রাজিবুল চাকরি হারানোর পর স্ত্রী মাসুমা নিজেই ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পেরেছেন। গরুর মাংসের আচার তৈরি করে তিনি আজ স্বাবলম্বী। মাসুমার তৈরি গরুর মাংসের আঁচার দেশের গন্ডি পেরিয়ে ১৭টি দেশে সুনাম অর্জন করেছে।
গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের মেয়ে মাসুমা ইসলাম। ২০১০ সালে এসএসসি পাস করেই বিয়ে হয় বগুড়ার ছেলে রাজিবুলের সাথে। রাজিবুল বগুড়ার একটি চার তারকা হোটেলে হিসাব বিভাগে কাজ করতেন। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে বেকার হয়ে পড়েন রাজিবুল। স্ত্রী, দুই সন্তান,বৃদ্ধ মাকে নিয়ে পাঁচ জনের সংসার চালাতে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। এ অবস্থায় স্ত্রী মাসুমা তার বোনের কাছ থেকে ১৩ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর হাট থেকে তাঁতের তৈরি শাড়ি কিনে আনেন। এরপর ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু একদিকে করোনার প্রভাব অন্যদিকে অসংখ্য নারী অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসায় জড়িত থাকায় মাসুমা মার্কেট ধরতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে শ্বাশুড়ি পারুলের মুখে গল্প শোনেন গ্রামে যখন ফ্রিজ ছিল না, সেই সময় কোরবানির মাংস জ্বাল করে ঘরে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতেন। মাসুমা সেই গল্প শুনে জ্বাল করা মাংস দিয়ে আচার তৈরির পরিকল্পনা করেন। এরপর এক কেজি গরুর মাংস কিনে আচার তৈরি করে ফেসবুক পেজে প্রচার করেন।

শুরুতেই অনলাইনে ব্যাপক সাড়া পান।পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরুর মাংসের অর্ডার আসতে থাকে মাসুমার ফেসবুক পেজে। মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে দেশের গন্ডি পেরিয়ে আমেরিকা,লন্ডন, সিঙ্গাপুর, দুবাই সৌদি আরবসহ ১৭ টি দেশে মাসুমার তৈরি গরুর মাংসের আচারের মার্কেট গড়ে উঠেছে।
মাসুমা বলেন, এখন প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ কেজি গরুর মাংসের আচার বিক্রি করেন তিনি।
প্রতি কেজি আচার ১২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। গরুর মাংসের আঁচারের পাশাপাশি মাসুমা এখন রসুন, জলপাই থেকে শুরু করে বিভিন্ন মৌসুমি ফলের আঁচার ছাড়াও ঘি তৈরি করে বিক্রি করে অনলাইনে বিক্রি করছেন। এখন সংসারে তার অভাব নেই। স্বামীকেও আর চাকরির পিছনে ঘুরতে হচ্ছে না। করোনাই তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলেছে। আর এম ফুড কর্নার নাম দিয়ে ঘরে বসেই ব্যবসা পরিচালনা করছেন মাসুমা ইসলাম নামের এই নারী। গৃহিনী থেকে সফল উদ্যোক্তা মাসুমার পাশে দাড়িয়েছেন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। ব্যাংকের কর্মকর্তারা তার কার্যক্রম পরিদর্শন করে বিনা জামানতে ঋন দিয়েছেন।
মাসুমা বলেন, জাপানে বসবাসরত একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী তার সাথে যোগাযোগ করেছেন। তিনি সেখানে গরুর মাংসের আচার ও ঘি জাপানের মার্কেটে বিক্রি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আগামী মাস থেকে জাপানে মাসুমার তৈরি আচার ও ঘি বিক্রি হবে।