শীতের আমেজ বাড়ায় খেজুরের রস

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

শীতের সকালে শিশির ভেজা ঘাস আর ঘণ কুয়াশায় চাঁদর মোড়ানো গ্রামীণ জনপদ। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে সকালের ঘুম ভেঙ্গে যায়। শীতের সকালে এক গ্লাস খেজুরের রস দিয়ে যায় মনে তৃপ্তি। শীতের আমেজকে যেনো বাড়িয়ে দেয় খেজুরের রস। শীত যত বাড়ে খেজুর রসের মিষ্টিও তত বাড়ে।

শীতের মৌসুমে খেজুরের রস দিয়েই গ্রামীণ জনপদ শুরু হয় শীতের আমেজ। সুস্বাদু এই রস আগুনে জ্বাল দিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন রকমের বাটালি ও লালি গুড়। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করা নলের গুড়, ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও বাটালি গুড়ের মিষ্টি গন্ধেই যেন অর্ধভোজন হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের বাসাইল-সখীপুরে খেজুরের রস সংগ্রহকারীরা  প্রতিদিন বিকেলে নলি, কোমরবন্ধ রশি সাথে নিয়ে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় কলসি ও হাড়ি (মাটির পাত্র) বেঁধে রাখে রসের জন্য। পরদিন সকালে রস সংগ্রহ করেন।

কেউ কেউ এই কাঁচা রস বাজারে বিক্রি করেন। অনেকেই আবার এই রস দিয়ে বাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে থাকেন। শীতের সকালে অনেকেই কিনতে আসেন খেজুরের রস।

বিজ্ঞাপন

খেজুরের রস কিনতে আসা সাইদুল ইসলাম দিপু জানান, খেজুরের রস আমার কাছে খুবই পছন্দের। খেতেও দারুণ, সব বয়সী মানুষ খেজুরের রস ও গুড় পছন্দ করে। আমার বাড়ির পাশে থাকায় সকালে ঘুম থেকে উঠেই খেজুরের রস খেতে আসি। বাড়ির জন্য কিনেও নিয়ে যায়।

নাটোর থেকে আসা খেজুরের রস সংগ্রহকারী ওয়াহিদ বলেন, আমি একশত টি খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছি। প্রথম দিকে খেজুরের রস কম সংগ্রহ হলেও শীত বাড়ার সাথে সাথে খেজুরের রস সংগ্রহ বেড়েছে। খেজুরের রস সংগ্রহ করে কড়াইতে জ্বাল করি।জ্বাল করে তারপর খেজুরের গুড় বানায়। প্রতিদিন ১০-১২ কেজি গুড় বিক্রি করি। প্রতি কেজি গুড়ের দাম ৩০০-৩৫০  টাকা। সকালে অনেকেই খেজুরের রস খেতে আসে। প্রতি গ্লাস রস ১০ টাকা করে। কাঁচা রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটে-বাজারে বিক্রি করি। সকালেই এ রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করি।


খেজুরের রস সংগ্রহকারী খশবর আলী বলেন, আমি রাজশাহী থেকে বাসাইলে এসেছি। এবছর প্রথম এই এলাকাতে আসলাম।এলাকায় যাদের খেজুরের গাছ রয়েছে তাদের কাছে থেকে শীত মৌসুমে খেজুর গাছ লিজ নিয়েছি। ছোট বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই আমরা কোমরে রশি বেঁধে গাছে ঝুলে রস সংগ্রহ করি। প্রতিদিন বিকেলে ছোট-বড় হাঁড়ি বাঁধি, সকালে রস সংগ্রহ করি। আমি ৪০ বছর ধরে খেজুরের রস সংগ্রহ করি। এই ৪০ বছরে দেশের বিভিন্ন জেলায় আমি খেজুরের রস সংগ্রহ করেছি। শীতের মৌসুমে এ বছর ৮৫টি খেজুরের গাছ থেকে প্রতিদিন ৭-৮ মণ রস সংগ্রহ করি। তিনদিন পর পর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় হাঁড়ি বেঁধে রস সংগ্রহ করি। সকালে রস সংগ্রহ করে কড়াইতে জ্বাল করি। জ্বাল করতে ২-৩ ঘন্টা সময় লাগে।আর প্রতিদিন ১০-১৫ কেজি খেজুরের গুড় বিক্রি করি। আবার অনেকেই সকালে খেজুরের রস ও গুড় কিনতে আসে।প্রতি কেজি গুড় ৩০০-৩৫০ টাকা করে বিক্রি করি।আর এক গ্লাস রস বিক্রি করি ১০ টাকা করে।