মফস্বলে করোনা নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য
করোনাভাইরাস রয়েছে এমনটা মানতেই নারাজ মফস্বলের মানুষ। বিশেষ করে শ্রমজীবী খেটে-খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে এমন ধারণা। এদের একটাই কথা- কিসের করোনা? করোনা বলতে কোন রোগ-বালাই নেই। এমন ভ্রান্ত ও ভুল ধারণার কারণেই মফস্বলের মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।
আর গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই করোনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোয় সফল হচ্ছে না সরকারের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধিপালনের নিষেধাজ্ঞা। গ্রামের কেউই মানছেন না সামাজিক দূরত্ব। এমনকি মাস্ক পরা তো তারা ভুলেই গেছেন। করোনার শুরুর দিকে গ্রামের মানুষের মধ্যে কিছুটা ভয়-ভীতি কাজ করলেও এখন কোন ভয়-ভীতিই নেই নবললেই চলে। ওমিক্রনও যেন তাদের মাঝে বিন্দুমাত্র ভয়ের সঞ্চার ঘটায়নি।
রাজবাড়ীর কয়েকটি গ্রামে ঘুরে প্রায় শতাধিক মানুষের সাথে করোনা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে কথা বললে বিভিন্ন ধরণের মতামত প্রকাশ করেন তারা। তারা মনে করছেন- সব কিছুই স্বাভাবিক রয়েছে। এটা সরকারের একটা বাহানা। তবে এদেরকে যখন বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বোঝানো হয় তখন তারা বোঝার চেষ্টা করেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে সরকার ঘোষিত ১১ দফার প্রথম নির্দেশনা ছিল দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা ও হোটেল, রেস্তোরাসহ সকল জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু মফস্বল পর্যায়ে মাস্ক পরিধানের বিষয়ে একদমই উদাসীন জনগণ।
বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষেরই মাস্ক নেই মুখে। কেউ কেউ পড়লে তাও আবার থুতনিতে ঝুলছে। কেউবা পরিবারের সদস্যদের চাপেও মাস্ক পড়ে বাজারে এসেছেন। তবে সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই।
সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বারবার। কিন্তু নিয়ম মানছেন না বেশির ভাগ মানুষ। অসচেতনতার কারণে নারী, পুরুষসহ শিশুদের মধ্যেও দিন দিন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
এর মধ্যে সচেতন মানুষেরা বলেন, আমাদের নিজেদের সুরক্ষা যদি আমরা না বুঝি সরকার চেষ্টা চালিয়ে কি করবে? আমাদের সাধারণ মানুষের সচেতন হওয়া খুবই দরকার। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকায় থাকতে হবে। আর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
মাস্ক না পরার বিষয়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব আলী হোসেনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ আমাগো করোনা হইবো না। আমরা মাঠে কাজ কইরা খাই। এই শরীরে করোনা ঢুকবো ক্যামনে?
রহমত মোল্লা নামের এক ব্যক্তি বলেন, মাস্ক ছিলো কিন্তু বাজারে আসার সময় ছিঁড়ে গেছে। বাজারে শেষে বাড়ি যাওয়ার সময় কিনবো। বাজার করার সময় করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখেন করোনা তো হতেই পারে। আমি যেসব খাওয়া দাওয়া করি, তাতে আমার করোনা হবে না।’
মাস্কবিহীন ঘুরে বেড়ানো এক পথচারীকে বিনা মাস্কে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরতে অস্বস্তি লাগে।’ করোনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার আশপাশে কারো করোনা হয়নি এখন পর্যন্ত। আর করোনা ধরলে, মাস্ক পরলেও ধরবে।’
রাজবাড়ীর স্বাস্থ্যবিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। আগামী ১ মাসের মাঝে করোনার বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশকে কাঁপাতে পারে। তাই সাধারণ মানুষের মাস্ক পরার কোন বিকল্প নেই। সরকারের একার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করে যেতে হবে। নইতো ভয়ঙ্কর রূপ দেখতে হতে পারে।