নেই বাঁশের তৈরি পণ্যের দাম ও চাহিদা
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে বাঁশ ও বেত শিল্পের তৈরি মনকারা বিভিন্ন জিনিসের জায়গা করে নিয়েছে স্বল্প দামের প্লাস্টিক ও লোহার তৈরি পণ্য। তাই বাঁশ-বেতের পণ্য এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। অভাবের তাড়নায় এই শিল্পের কারিগররা দীর্ঘদিনের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে আজ অনেকে অন্য পেশার দিকে ছুটছে।
অপরদিকে বাঁশ আর বেতকেই জীবিকার প্রধান বাহক হিসাবে আঁকড়ে রেখেছেন ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের ৫০টি পরিবারের কিছু মানুষ। এই বাঁশ আর বেতই বর্তমানে তাদের জীবিকার প্রধান বাহক। কিন্তু দিন দিন বাঁশ আর বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। জীবন জীবিকার তাগিদে তবুও বাবা-দাদার এই পেশাকে এখনও ধরে রেখেছে কিছু সংখ্যক পরিবার।
ছবি তুলতে গেলে ক্ষোভের সাথে একজন বলেন, ছবি তুলেছেন কেনেহ, করোনার আগতও কয়েকজন সাংবাদিক ছবি তুলে নিয়ে গেইছিল। কোন সহযোগিতা পায়নি হামরা। হাট-বাজার সব বন্ধ। কত কষ্টে করোনার সময়টা কাটিছে। সেলা কুন্ঠে ছিলেন তোমহরা। ছবি তুলে হামার জীবন বদলাবে নাই।
ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের রায়পাড়া এলাকায় বাঁশমালী দিপ্তী রাণীর বাঁশের পণ্য তৈরি করার ছবি তুলতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি ওই এলাকার বাঁশমালী গোলাপ রায়ের স্ত্রী।
জানতে চাইলে দিপ্তী রাণী জানান, ওই এলাকার ৫০টি পরিবার বাঁশের তৈরি চাটাই, খাঁচা, বিটে, পলও, আন্টা, কুলা, পাখা, ডালি, ভাড়, ঝাড়ু, হাসঁ-মুরগি রাখা খাঁচাসহ নানা পণ্য তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনাকালীন সময়ে লকডাউন হওয়ায় পণ্য তৈরি পর বাজারে বিক্রি করতে পারেনি কেউই। ফলে খুব কষ্টে দিন পার করতে হয়েছে তাঁদের। এছাড়াও সরকারী কোন সহযোগীতাও পান নাই তারা।
৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা বাঁশমালী নিরলা রানী বলেন, আগে বাঁশের দাম কম ছিল। পাঁচশত টাকার বাঁশ কিনে সেই বাঁশ দিয়ে পণ্য তৈরি করে দেড় হাজার টাকা বিক্রি করা যেত। কোন কোন সময় তার দু-হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন আর সেদিন নেই। বাঁশের দাম বাড়ার কারণে এখন পাঁচশত টাকার বাঁশ কিনে সেই বাঁশ দিয়ে পণ্য তৈরির পর ১ হাজার টাকার বেশি বিক্রি করা যায় না।
গোলাপ রায় বলেন, আমন ধান, আলু তোলার মৌসুমসহ বিভিন্ন ফসলাদি উত্তোলনের সময়গুলোতে ডালি, কুলা, ঝাড়ুসহ বিভিন্ন বাঁশের পণ্যের চাহিদা থাকে। এ সময় ব্যস্ততা থাকে আমাদের রায়পাড়ার ৫০টি পরিবারে। স্বামী-স্ত্রীর পাশাপাশি সন্তানদেরকেও এ কাজে সহযোগিতা করতে হয়। বাঁশের তৈরি পণ্য বিক্রি করেই ছেলে মেয়েকে পড়ালেখা করাচ্ছেন গোলাপ রায়, তাঁর স্বপ্ন পড়ালেখা শেষ করে একটা চাকুরি হবে ছেলের। আমাদের পূর্ব পুরুষদের থেকে পাওয়া এ পেশা থেকে আমাদের মুক্তি দিবে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, পুর্ব পুরুষদের কাছে পাওয়া বংশ পরম্পরাই এ পেশায় গত ৫ বছরে আগে বেশ সফলতা ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বাজারে আসার কারণে কমে গেছে বাঁশের তৈরি পণ্যের চাহিদা। অন্যদিকে প্লাস্টিক পণ্যের দাম বাঁশের তৈরি পণ্যের চেয়ে অনেক কম।
ওই এলাকার বাঁশমালি খুদিরাম সাহা জানান, বাঁশের তৈরি পণ্য ছাড়া অন্য কোন কাজ জানা নেই। তাই পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে এটা করতে হচ্ছে। সরকারি ভাবে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দিলে এ এলাকার পরিবারগুলো আরও ভালো পণ্য তৈরি করে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে ধারণা করেন তিনি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন জানান, প্রতিটি পেশার মানুষকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। বাঁশমালীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।