রাজশাহীতে নিশ্চিত হচ্ছে না আইসোলেশন
রাজশাহী শহরের দেবিশিংপাড়া এলাকার বাসিন্দা আসলাম হোসেন (২২)। গত ১৮ জানুয়ারি নমুনা পরীক্ষায় তার দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আসলাম করোনামুক্ত হয়েছেন কি না জানতে দ্বিতীয়দফা নমুনা পরীক্ষা হয়নি। তবে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে তাঁকে পাড়ার মোড়ে খাবারের হোটেলে দেখা গেছে।
করোনা পজিটিভ অবস্থায় বাইরে বের হওয়া নিয়ে জানতে চাইলে আসলাম হোসেন বলেন, ‘এই কয়দিন বাড়িতেই ছিলাম। এখন ভাল আছি। তাই আজই বের হয়েছি।’ শুধু আসলাম একা নন, রাজশাহীতে এখন যারা করোনা পজিটিভ হচ্ছেন তাদের অনেকেই বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ শহর ছেড়ে গণপরিবহনে চড়ে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে। কেউ তাদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করছে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রথমবর্ষের ছাত্র মশিউল ইসলামের করোনা পজিটিভ হয়েছে ২২ জানুয়ারি। ২৪ জানুয়ারি তিনি রাজশাহী থেকে বাসে চড়ে চলে গেছেন গ্রামের বাড়ি। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়া সদর উপজেলার নারুলি গ্রামে। মশিউল বলেন, ‘হল খোলা থাকলেও ক্যাম্পাস বন্ধ। তাই বাড়ি চলে এসেছি।’
রাবির পরিসংখ্যান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শিমুল রায়ের বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার শিবপুর গ্রামে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ল্যাবে গত ২৩ জানুয়ারি তার করোনা পজিটিভ হয়। সেদিনই তিনি রাজশাহী থেকে বাসে চড়ে গেছেন কুষ্টিয়া। নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার রসুলপুর গ্রামের শিক্ষার্থী ফয়সাল হকও রাজশাহী শহরে মেসে থাকতেন। ২২ জানুয়ারি রামেকের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হলে ২৪ জানুয়ারি বাড়ি চলে যান ফয়সাল। ফয়সাল বলেন, ‘করোনা হয়েছে শুনে বাড়ি থেকে চাপ দিচ্ছিল, যেন আমি বাড়ি চলে যাই। সে কারণে বাসে চড়েই চলে এসেছি। তখন অবশ্য কাউকে বলিনি যে আমার করোনা।’
করোনার প্রথম ধাক্কা এবং ডেলটা ধরনের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় রাজশাহীতে যারা করোনা পজিটিভ হতেন, তাদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করা হত। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও প্রতিটি থানা পুলিশ আক্রান্তদের আইসোলেশন নিশ্চিত করত। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের চিকিৎসারও খোঁজ নিত। কিন্তু দেশে করোনার অমিক্রন ধরণ শনাক্তের পর রাজশাহীতে এত বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছেন যে তাদের আইসোলেশন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে না রোগীদের চিকিৎসারও। সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় আক্রান্ত রোগীরা ঘুরে বেড়ানোর কারণে সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
সবশেষ বুধবার (২৬ জানুয়ারি) জেলার ৪৬৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এতে ২৮২ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনার সংক্রমণের ৬০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ১৬ জানুয়ারি থেকে রাজশাহী জেলায় সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে।
রাজশাহীর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, ‘আমরা কোন সিস্টেমের মধ্যে নাই। স্বাস্থ্যবিধি থেকে শুরু করে কোন কিছুই নাই। প্রতি সেকেন্ডে করোনা বাড়ছে। যারা প্রতিরোধ করবে, তাদের দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম দেখছি না। এবার তো আক্রান্তদের মিনিমাম আইসোলেশন নিশ্চিত করতেও দেখছি না। এখন রাস্তাঘাটে ধরে দুজন মফিজকে ফাইন করে বলছে- আমরা করোনা মোকাবিলায় কাজ করছি। এভাবে তো করোনা মোকাবিলা হতে পারে না।’
করোনা নিয়ে অসহায়ত্ব ফুটে উঠল সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এএফএম আঞ্জুমান আরা বেগমের কথায়। বললেন, ‘কীভাবে করোনা মোকাবিলা করব, আপনারা সাংবাদিকরাই বলে দেন। এবার যাঁকে টেস্ট করছি, তারই পজিটিভ। প্রচুর রোগী। আগে হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করা গেলেও এবার সম্ভব হচ্ছে না।’
রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস এ বিষয়ে কোন মন্তব্যই করতে চাননি। তবে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক দাবি করেছেন, উপজেলা পর্যায়ে হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করা হচ্ছে। আক্রান্ত হয়ে রোগী শহর থেকে গ্রামে যাওয়ার তথ্য তার কাছে নেই। বিষয়টা নিয়ে তিনি করোনা প্রতিরোধে গঠিত জেলা পর্যায়ের কমিটিতে আলোচনা করবেন। তবে করোনা মোকাবিলায় তারা এখন টিকা প্রয়োগেই জোর দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।