পাওনা টাকার জেরে অটো ভ্যান চালক খুন, আটক ২
নওগাঁর মহাদেবপুরে পাওনা টাকার জেরে অটোভ্যান চালক মহসিনকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত বন্ধু সাখাওয়াত হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে মহাদেবপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর দক্ষিণপাড়া তার নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক মহসিন একই গ্রামের আবু তালেবের ছেলে। আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন মহসিন।
বৃহষ্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত ১৩ জানুয়ারি দুপুরে অটোভ্যান নিয়ে ভাড়া মারার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় মহসিন আলী। কিন্তু রাতে বাড়ি না ফেরায় ১৪ জানুয়ারি মহসিনের বড় বোন মর্জিনা বেগম থানায় একটি জিডি করলে ২১ জানুয়ারি বিকেলে উপজেলার এনায়েতপুরে একটি হলুদ ক্ষেত থেকে মহসিনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ২২ তারিখে মহাদেবপুর থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়। মামলা তদন্তকালে পুলিশ ধারণা করে তার বন্ধু সাখাওয়াত হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে। পরে স্থানীয় সোর্স ও প্রযুক্তি মাধ্যমে বুধবার রাতে তার নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।
পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, মহসিনকে আটকের পর জানা যায় দুই মাস আগে মহসিনের বিয়ের সময় সাখাওয়াত হোসেনের নিকট থেকে তিন হাজার টাকা ধার নেয়। আসামি সাখাওয়াত হোসেন সেই টাকা সুদের উপর নিয়েছিলেন। পরে মহসিন ১ হাজার টাকা পরিশোধ করলে অবশিষ্ট ২০০০ টাকা দুই মাস পার হয়ে গেলেও ফেরত দেয়নি। এদিকে সমিতির লোকজন সাখাওয়াত হোসেনকে টাকা পরিশোধ করতে চাপ দিতে থাকে। এরইমধ্যে সাখাওয়াত হোসেনের ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে দু:শ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। তখন সাখাওয়াত ১৩ জানুয়ারি বেলা ২টার দিকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা আছে বলে মহসিনকে ডেকে নেয় মাতাজির মোড়ে। সেখান থেকে অটোভ্যান যুগেই এনায়েতপুর ইউনিয়নের মহিষবাথান যাওয়ার কথা বলে নিয়ে যায় তাকে। সন্ধ্যায় মহিষবাথান মোড়ে আসলে সেখান থেকে কৌশলে রাত ৯টার দিকে মহিষবাথান বালু পয়েন্টের দিকে নিয়ে যায়। বারু পয়েন্টের ব্রিজের উপর অটোভ্যানটি দাড় করে পাওনা টাকার বিষয়ে কথা হতে থাকলে এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় সাখাওয়াত হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে পাশে পড়ে থাকা ইট ও সিমেন্টের ঢালাই টুকরো দিয়ে সজোরে মহসিনের মাথায় আঘাত করলে মহসিন জ্ঞানশুন্য হয়ে পড়ে। পরে সেখান থেকে তাকে ২০০ গজ দক্ষিণে একটি হলুদ ক্ষেতের ভেতর নিয়ে গিয়ে পুনরায় কয়েকবার মাথায় আঘাত করে মহাসিন মৃত্যু নিশ্চিত করে অটোভ্যান নিয়ে পালিয়ে যায়। পরদিন ঘুম থেকে উঠে অটোভ্যানটি চালিয়ে বগুড়ার সান্তাহারে তার পরিচিত প্রদীপ চন্দ্রের রেলওয়ে ড্রাইভার ইয়ার্ড কলোনীর বাড়িতে নিয়ে যায় এবং তার নিকট সাড়ে ৮ হাজার টাকা দিয়ে অটোভ্যানটি বিক্রি করে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, মহসিনকে আটকের পরে তার দেয়া তথ্য মতে সান্তাহার থেকে চার্জারের খণ্ড খণ্ড অংশ উদ্ধার করা হয় এবং আলামত নষ্ট করার অভিযোগে প্রদীপ চন্দ্রকে গ্রেফতার করা হয়। আজ তাদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম মামুন খান চিশতি ও গাজিউর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার সুরাইয়া আকতারসহ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।