সরস্বতী পূজা উপলক্ষে সিরাজগঞ্জে দই মেলা
সিরাজগঞ্জে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বসেছে ঐতিহ্যবাহী দই মেলা। মেলায় দইসহ নানা রসনা বিলাসী খই, চিড়া, মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা, কদমাসহ নানা বিলাসী খাবার বেচা-কেনা হচ্ছে। সকাল থেকে দই মেলায় ভিড় করছেন ক্রেতারা। ব্যস্ততা বেড়েছে বিক্রেতাদের। জেলার সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঘোষদের বানানো মজাদার দই বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও শহরের দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে হরেক রকমের দই মিষ্টি। এখানকার তৈরি দই আকর্ষনীয়। এ সময় দুর দুরন্তর আত্মীয়স্বজন আসেন তাদের কুটুম বাড়িতে। জামাইয়রা দই কেনেন শ্বশুরবাড়ির জন্য।
শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়ক এলাকায় শুরু হয়েছে দই মেলা।
জেলার বিভিন্ন স্থানে থেকে দই ব্যবসায়ীরা এসে এই মেলায়। এখানে খিরখাশা, খিরশাসহ বিভিন্ন প্রকার দই মেলায় উঠেছে। ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা মূল্যের দুই কেজি ওজনের দই বিক্রি হচ্ছে। ভোর থেকে ক্রেতা বিক্রেতাদের পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠেছে দই মেলা প্রাঙ্গন। মেলা চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। একদিন ব্যাপী প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বসেছে।
অপর দিকে তাড়াশে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী দইয়ের মেলা বসেছে। তাড়াশ উপজেলা সদরের মেলায় দইসহ নানা রসনা বিলাসী খই, চিড়া, মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা, কদমা সহ খাবার বেচা-কেনা হচ্ছে। দইয়ের মেলায় আসা এ অঞ্চলের দইয়ের স্বাদের কারণে নামেরও ভিন্নতা রয়েছে। যেমন-ক্ষীরসা দই, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই, শ্রীপুরী দই এ রকম হরেক নামে ও দামের দই বিক্রি হয়। বিশেষ করে বগুড়ার শেরপুর, চান্দাইকোনা, শ্রীপুর,তাড়াশের দইও প্রচুর বেচাকেনা হয়। আর এ দইয়ের মেলাকে ঘিরে ইতি মধ্যেই এলাকায় সাঁজ রব পড়ে গিয়েছে।
শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সারাদিন তাড়াশ উপজেলা সদরের হেলিপ্যাড ময়দানে নামিদামি ঘোষদের দই আসার মধ্য দিয়ে তাড়াশের প্রায় তিনশত বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলা শুরু হয়।
বগুড়ার শেরপুর থেকে আসা দই বিক্রেতা শুকুমার ঘোষ বলেন, প্রতি বছরেই তাড়াশের এই ঐতিহ্যবাহী মেলায় দই বিক্রি করতে আসেন। তবে এ বছর গরুর দুধের দাম বেশি হওয়ায় দইয়ের দামটা একটু বেশি।
রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা থেকে দই বিক্রেতা আজিজুল হক জানান, বাপ-দাদা আমল থেকেই দই মেলায় আসি। নিজেও বেশ কয়েক বছর যাবত দই বিক্রীর সাথে জরিত তাই এ বছর দই বিক্রি করতে এসেছি।
দইয়ের ক্রেতা গৌতম সরকার বলেন, উপজেলার দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা উপলক্ষে এ অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে এক উৎসব মুখর আমেজ তৈরি হয়। প্রতিটা বাড়িতে সরস্বতী পূজা ও দই মেলাকে ঘিরে আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে বিভিন্ন উৎসব পালন করা হয়।
জানা যায়, জমিদারি আমলে তাড়াশের সেই সময়ের জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। তাই জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করতেন। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সামনে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী দই মেলার প্রচলন হয়।
শ্রীপঞ্চমী তিথি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ্য। এই তিথিতে শিক্ষার্থীরা ভক্তিসহকারে মা সরস্বতীকে প্রদান করে পুস্পঞ্জলি। সরস্বতী মায়ের পূজায় ভোগ হিসেবে ফলমূলের পাশাপাশি দেন দই।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সাহা বলেন, শীত মৌসুমের মাঘ মাসে শ্রী পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এ দই মেলা বসে থাকে। সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার এই মেলা প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্য।