আজিম মামার বাহারি স্বাদের আগুন পান
যদি সুন্দর একটা মুখ পাইতাম মহেশখালীর পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম কিম্বা পালের লাও পালের লাও পান খেয়ে যাও, ঘরে আছে ছোট বোনটি তারে নিয়ে যাও। পান নিয়ে এমন আরও অনেক গান, কবিতা ও প্রবাদ আছে যা আমাদের সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধ।
ঢাকার সদর ঘাটের বিখ্যাত পানের কথা শোনা গেলেও এখন নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের বজ্রপুর বাজারে আজিম মামার মনকাড়া বাহারি স্বাদের আগুন পান দিন দিন উপজেলাবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাহারী রংয়ের মসলাযুক্ত এ পান মানুষের নজর কাড়ছে।
প্রায় অর্ধশত পদের উপকরণ দিয়ে তৈরী মিষ্টিযুক্ত আগুন পানের স্বাদ নিতে পানপ্রেমীদের আগ্রহ বাড়ছে। মুখে দেওয়ার আগে পানে আগুন জ্বেলে দেওয়া হয় বলে এর নামকরণ হয়েছে আগুন পান।
বাঙ্গালী অতিথি পরায়ন জাতি। খাবারের পর পান দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন বাঙালি জাতির প্রাচীন ঐতিহ্য। সময়ের সঙ্গে হরেক রকম নামে নামকরণ হয়েছে পানের। যেমন- বেনারসি পান, শাহি পান, কাশ্মীরি পান, জামাই-বউ পান, প্রেমিক-প্রেমিকা পান, ভালবাসার পান, হানিমুন পান আরও কত কী।
যে নামেই ডাকা হয়না কেন পান তো পানই। পানে এখন আর কেবল চুন, সুপারি আর খয়েরই ব্যবহৃত হয়না। নানা রকম মসলা হিসেবে দোকানের সামনে কাচের কৌটায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে পানের উপাদান। এর মধ্যে আছে চকলেট, বাদাম, নারকেল, গুলতান চাটনি, চকলেট ক্রিম, ভ্যানিলা ক্রিম, স্ট্রবেরি ও অরেঞ্জ জেলি, পেঁপে ভাজি, টুটিফুটি মোরব্বা, কোরমা, সুইট বল দানা, কালিজিরা, তবক, সুপারি, লবঙ্গ, একাঙ্গী, চুনসহ অর্ধশতাধিক উপাদান।
স্থানীয় বজ্রপুর গ্রামের তাসের হোসেনের ছেলে ৩৫ বছর বয়সী যুবক আজিম হোসেন প্রায় ১৫ বছর থেকে পানের দোকান দিয়ে নানা স্বাদের পান বিক্রি করে আসছেন। গত ১বছর থেকে শুরু করেছেন আগুন পানের ব্যবসা।
আজিম হোসেন জানান, এক বছর আগে ঢাকার সদরঘাটের একটি পান স্টল থেকে আগুন পানের জন্য সাঁচি পান ব্যবহার করা শেখেন। এই বিশেষ জাতের পান বগুড়া থেকে আনা হয়। আর মসলা আসে ভারত থেকে।
কিন্তু পানে আগুন জ্বালিয়ে পরিবেশন এর বিষয়ে জানতে চাইলে আজিম বলেন, পানের উপাদানগুলোতে আগুন দিলে উপাদানগুলো ভালোভাবে মিশে যায়। ‘স্মোকি ফ্লেভার’ তৈরি হয়। এই স্বাদ অন্যান্য পান থেকে আলাদা। সাধারণ আগুন পানের দাম ২০ টাকা আর মসলা ভেদে বিশেষ পানের দাম ৪০ টাকা।
প্রতি খিলি পানের দাম ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। শাহজাদী ১৫ আর বোম্বে মাসালা খিলি বিক্রি হয় ২৫ টাকা। তবে আগুন পান বর্তমানে ভালো বিক্রি হচ্ছে।
কেমন বেচা বিক্রি হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালোই বেচা-বিক্রি হয়। পান স্টলের দোকান দিয়ে বউ, সন্তান, মা-বাবাকে নিয়ে সংসার চলে। তবে মাসিক কেমন লাভ হয় এটা সঠিকভাবে বলা যাবেনা। আর ব্যবসার লাভের কথা বলা ঠিক না।
নওগাঁ শহর থেকে ব্যক্তিগত কাজে বজ্রপুর বাজারে এসেছেন মোশারফ দেওয়ান। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে আজিম মামার দোকানে থেকে একটি আগুন পান কিনে মুখে দিয়েছেন। এসময় মোশারাফ বলেন, পান আমি প্রায় ২০-২২ বছর ধরে খাচ্ছি। তবে আগুন পান এর আগে কখনো খাওয়া হয়নি। এই প্রথম আগুন পানের স্বাদ নিলাম। অন্যরকম একটি স্বাদ অনুভব করলাম। সত্যি আগুন পানের স্বাদের প্রেমে পড়ে গেছি। ভাবছি মাঝে মাঝে এই পান খাব।
নওগাঁ সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. আশিষ কুমার সরকার জানালেন, আগুন পান মূলত গ্লিসারিন পার পটাশিয়াম ও পানির মিশ্রণে তৈরি হয়। আর মানুষের শরীরের ভেতরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে আগুন পানের তাপ বেশি থাকবে। সে ক্ষেত্রে মুখের ভেতরের কোষগুলো পুড়ে যেতে পারে। নিয়মিত খেলে ক্যানসার হতে পারে খাদ্যনালিতে। তাই আগুন পান মুখে দিতে সাবধান থাকতে হবে।