চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসের অফিস সহায়ক শফিকুর রহমান ওরফে মাসুমের বিরুদ্ধে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। সেনাবাহিনী, পল্লীবিদ্যুৎ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে চাকরি দেয়ার কথা বলে মানুষের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। অনুসন্ধানে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য মিলেছে। চাকরি প্রত্যাশীদের দেয়া হয়েছে ভুয়া নিয়োগপত্র। প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
গত বছরের ১৬ আগস্ট থেকে তিনি অফিসেও আসছেন না।
প্রতারণার শিকার কলেজ ছাত্র আব্দুল মোমিন বলেন, বাংলাদেশ সিভিল ডিফেন্সে চাকরি দেয়ার নামে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ভুয়া নিয়োগপত্র দেন শফিকুর রহমান। অভিযুক্ত প্রতারকের বিরুদ্ধে উপজেলা কৃষি অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছেন বলেও জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের স্টোর কিপার মো. ভিখু আলী, নাতি এসএম আসাদুল্লাহ আরাফাত কাজলের চাকরির জন্য শফিকুর রহমানকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেন। আরাফাতের মায়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমার ছেলে আসাদুল্লাহ আরাফাতের চাকরির জন্য শফিকুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন আমার বাবা। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরির নিয়োগপত্র দিয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেন। পরে জানতে পারি এ নিয়োগপত্র ভুয়া। এরপর থেকে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। তিনি তার অফিসেও আসছেন না। বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখা থেকেও ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেননি শফিকুর রহমান। ইসলামী ব্যাংকে পাওনা পরিশোধে দেয়া চেক ডিজঅনার হয়েছে। এরপর ইসলামী ব্যাংকের প্যানেল আইনজীবী মো. মাসির আলী তাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন। আইনজীবী মাসির আলী জানান, এনআই অ্যাক্টের মামলার নিয়ম অনুযায়ী শফিকুর রহমানকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে পাওনা পরিশোধ না করলে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করা হবে।
আত্মগোপনে থাকায় অভিযুক্ত শফিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে বিভিন্ন জনকে চাকরি দেয়ার নামে স্বামী শফিকুর রহমানের প্রতারণার কথা শিকার করেছেন তাঁর স্ত্রী শিরিন খাতুন। তিনি বলেন, আমি তাকে নিষেধ করেছিলাম এসব না করার জন্য। কিন্তু আমার কথা শোনেনি। এখন আমার সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কানিজ তাসনোভা বলেন, গত বছরের ১৬ আগস্ট থেকে অফিস সহায়ক শফিকুর রহমান অফিসে আসেননি। অন্তত ৩ বার তাকে অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত গণকর্মচারি শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ ১৯৮২-এর ধারা ৪ এর সুস্পষ্ট লংঘন। তাঁর বিরুদ্ধে কেন চাকরিবিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে না তার জবাব চাওয়া হয়েছে। তারপরও তিনি অফিসে আসেননি এবং অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে কোন জবাবও দেননি। এ জন্য চার মাস থেকে তাঁর বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে। এর আগে তাকে বদলির জন্য সুপারিশও করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন মানুষকে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা, অফিসে না আসা, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে জবাব না দেয়া, বেতন বন্ধসহ সব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আইনগতভাবে এর বেশি করার ক্ষমতা আমার নেই। বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার অতিরিক্ত পরিচালকের। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।