নির্বাহী বিভাগে তিন শতাধিক বিচারক
নির্বাহী বিভাগে বর্তমানে তিন শতাধিক বিচারিক কর্মকর্তা প্রেষণে বদলি হয়ে কর্মরত আছেন। তারা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন। আরও বিচারককে প্রেষণে বদলির প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সূত্রমতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, সংসদ সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রায় ৩শ’বিচারিক কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। এর মধ্যে কিছু কর্মকর্তাকে স্বল্প সময়ের জন্য বিচারকাজে আদালতে দেওয়া হলেও পরবর্তীতে পুনরায় তাদের নির্বাহী বিভাগে ফিরিয়ে নেয়া হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে পৃথক দু’টি আদেশে চার জন জেলা ও দায়রাজজসহ সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজ পর্যায়ের ১২৬ জন বিচারককে বদলি করা হয়। তাদের মধ্যে ২০ জনকে প্রেষণে বদলি করা হয়েছে। এরমধ্যে লিগ্যাল এইড অফিসার হিসাবে ১৭ জন, আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে একজন, নিম্নতম মজুরি বোর্ডে একজন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা হিসাবে একজনকে প্রেষণে বদলি করা হয়।
বদলির আদেশে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারির কথা উল্লেখ রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে এসব বিচারককে বদলির আদেশ দেওয়া হলো।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথককরণের পর বিচারিক আদালতে বিচারক নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিসহ সব ক্ষেত্রেই সুপ্রিম কোর্টের একক এখতিয়ার থাকার কথা। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় না হওয়ায় বিচারক নিয়োগ-বদলি ও পদোন্নতিতে নির্বাহী বিভাগের আদেশের সুযোগ রয়েছে।
এদিকে করোনা মহামারীর কারণে নিয়মিত বিচারকার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় দেশের উচ্চ ও নিম্ন আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার ১৮৬টি। কারোনাভাইরাসের কারণে অতিরিক্ত দুই লাখ ৪৪ হাজার মামলা যুক্ত হয়েছে। তবে একই সময়ে অর্থাৎ ২০ মাসে ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে ৩ লাখ ২৩ হাজার মামলার এপ্লিকেশন নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, গত এক দশকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে অধস্তন সব আদালতে মামলার সংখ্যা বাড়লেও বিচারকের সংখ্যা বাড়েনি। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বিচারকের সংখ্যা অনেক কম। ফলে মামলা বাড়ছে। ন্যায়বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। তাই মামলার সংখ্যা কমাতে প্রেষণে বদলি বন্ধ করে উচ্চ ও নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগ এবং ছুটি কমিয়ে আদালতের কর্মঘণ্টা বাড়ানো যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী জেড আই খান পান্না দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, একজন বিচারকের দায়িত্ব বিচারকার্য সম্পাদন করা। কিন্তু বছরের পর বছর বিচারকাজের বাইরে রাখা হলে তাঁদের দক্ষতা হ্রাস পাবে। অন্যদিকে অধস্তন আদালতে বিচারক সংকট দেখা দেবে। যার ফলে মামলাজট বাড়বে।
তিনি বলেন, বিচারিক কর্মকর্তা অতিরিক্ত থাকলে প্রেষণে অন্য মন্ত্রণালয়ে দেয়া যেতে পারে। যেহেতু অতিরিক্ত নেই। তারওপর আদালতগুলোতে বিচারক সংকট রয়েছে। তাই অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোনো আদালত থেকে মন্ত্রণালয়ে প্রেষণে বদলির প্রয়োজন পড়বে না।
সম্প্রতিক সময়ে আইন মন্ত্রণালয় ব্যাপকহারে প্রেষণে বিচারিক কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক কাজে নিয়োগ দিচ্ছে। এমন উদ্যোগ বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলার মুল স্প্রিটকে দুর্বল করে দিচ্ছে।