মুদি দোকানীকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার এক মুদি দোকানীকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তোলা হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী নিউমার্কেটের একটি রেস্তোরাঁয় এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
ভুক্তভোগী এই মুদি দোকানীর নাম গোলাম মোস্তফা। তিনি গোদাগাড়ী পৌরসভার রেলবাজার এলাকার বাসিন্দা। রেলবাজারেই রয়েছে তার ‘মোস্তফা স্টোর’ নামের একটি মুদি দোকান। সংবাদ সম্মেলনে তার ভাই জাইদুল ইসলাম বলেন, তার ভাইকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার নির্দোষ ভাই কারাভোগ করছেন। এটা কেউ মানতে পারছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গোলাম মোস্তফা ১৪ বছর ধরে মুদি দোকান চালান সুনামের সাথে। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি তার ব্যবসায়িক সাফল্যে ঈর্ষান্বিত। দু’দফা তার দোকানে দুর্ধর্ষ চুরি সংগঠিত হয়। তাই গোলাম মোস্তফা কিছু দিন আগে দোকানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা লাগিয়েছেন। গত ১৮ জানুয়ারি কেউ একজন দোকানে হেরোইন সাদৃশ্য বস্ত ফেলে যায় এবং তখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে তা উদ্ধার করে। এ সময় নিরিহ গোলাম মোস্তফাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করে।
এ সব ঘটনা ধরা পড়েছে দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরায়। সংবাদ সম্মেলনে দেখানো হয়, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৬টায় দোকান খোলেন মোস্তফা। এরপর সকাল ৭টা ২ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি মাফলারে মুখ ঢেকে দোকানে ডিম কিনতে আসেন। মোস্তফা তাঁকে ডিম দিতে পেছনে ঘুরলে ওই ব্যক্তি দোকানের সামনে থাকা একটি টেবিলের নিচে মাথা ঢোকান। তিনি ডিম নিয়ে চলে যাওয়ার ৪০ সেকেন্ড পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দোকানটিতে অভিযান চালায়। এ সময় মোস্তফার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেওয়া হয়। পরে ওই টেবিলের নিচ থেকে হেরোইন সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার করা হয়। দোকানেই ওই বস্তুটির ওজন করা হলে সেটি ৫০০ গ্রাম পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করা হয়। সেদিন থেকে মোস্তফা এখন কারাগারে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গোলাম মোস্তফাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যা উদ্ধার করেছে তা হেরোইন নয়। রাসায়নিক পরীক্ষার সঠিক রিপোর্ট এলেই তা বোঝা যাবে। কারণ, প্রায় ৫০ লাখ টাকার ৫০০ গ্রাম হেরোইন দিয়ে কেউ কাউকে ফাঁসাবে না। এ জন্য অল্প কিছু হেরোইনই যথেষ্ট।
সংবাদ সম্মেলনে হেরোইন সাদৃশ্য বস্তুটির সঠিক রাসায়নিক পরীক্ষা, মামলার সঠিক তদন্ত এবং ‘নির্দোষ’ মুদি দোকানী গোলাম মোস্তফাকে মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়। কান্নায় ভেঙে পড়ে মোস্তফার ভাই জাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি একজন গ্রাম্য চিকিৎসক। ২০ বছর ধরে মানুষকে সেবা দিয়ে আসছি। এলাকার কেউ আমাদেরর পরিবারের মাদক সম্পৃক্ততার কথা বলবে না। যদি সামর্থ্য থাকত, তাহলে মাদকপ্রবণ গোদাগাড়ী উপজেলা ছেড়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে যেতাম। এভাবে কষ্ট পেতাম না।’
সংবাদ সম্মেলনে গোলাম মোস্তফার বাবা ইসলাম আলী, ভাই শাহীন আকতার, মামা মাইনুল ইসলাম, স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম, আবুল কালাম, মো. সালাহউদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম, ‘অভিযানটা আমরা পরিচালনা করিনি। অন্য একটা বাহিনী অভিযান করেছে। তবে মামলাটা পুলিশ তদন্ত করছে। সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়ে জানতাম না। যিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, তাঁকে এটা বলে দেব। সবকিছু দেখে ঠিকঠাকমতই মামলাটা তদন্ত করা হবে।’