বগুড়ায় জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন
ফ্যাক্টরির মালামাল চুরির প্রতিবাদ করে মালিককে বলে দিতে চাওয়ায় বগুড়ায় আব্দুল হান্নান (৪৫) ও সামছুল হক (৬৬) নামের দুই নৈশ প্রহরীকে হত্যা করে একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক ও বর্তমান তিন কর্মচারী। পরে হত্যাকাণ্ড ভিন্ন খাতে চালানোর জন্য তারা মোবাইল ফোনে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান।
তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ও জড়িত ৫ জনের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন হল। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন, বগুড়া শহরের বিসিক শিল্প নগরীর মাছু মেটাল ইন্ডাষ্ট্রির গাড়ি চালক শাজাহানপুর উপজেলার চকলোকমান এলাকার মৃত মিসবাহুল মিল্লাত নান্নার ছেলে হোসাইন বিন মিল্লাত ওরফে নিনজা (৩৪) গাড়ির হেলপার বগুড়া শহরের নারুলী তাল পাট্টি এলাকার বদিউজ্জামনের ছেলে রাহাত (২১) ও প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মচারী নারুলী এলাকার সায়েদ হাসান ব্যাপারীর ছেলে সুমন ব্যাপারী (২৭)। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় গ্রেফতারকৃত তিনজন বগুড়া শহরের শহীদ খোকন পার্কে বসে দুই নৈশ প্রহরীকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
দুই নৈশ প্রহরীকে হত্যার বর্ননা দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেফতারের পর তারা জানায় খোকন পার্কে আড্ডা দেয়ার সময় মাছু মেটালের সাবেক কর্মচারী সুমন ব্যাপারী নিজের আর্থিক দৈনতার কথা অপর দুইজনকে জানিয়ে ১০ হাজার টাকা ধার চায়। এ সময় গাড়িচালক ও হেলপার সুমনকে বলে একটা কাজ করতে ২ লাখ টাকা দিব। কাজটা কি জানতে চাইলে সুমনকে বলে ভোরে ফজরের নামাজের পর বিসিক মাছু মেটালে আসবি। সেই অনুয়ায়ী ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে গ্রেফতারকৃত ৩ জনসহ ৫ জন মিলিত হয়। এরপর ফ্যাক্টরি থেকে মালামাল ডেলিভারী হবে বলে তারা ড্রাইভার হেলপারের সহযোগিতায় ফ্যাক্টরির ভিতরে প্রবেশ করে। এরপর নৈশ প্রহরী আব্দুল হান্নানকে কৌশলে ফ্যাক্টরির পিছনে পানির ট্যাংকির কাছে নিয়ে গিয়ে মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে ট্যাংকির মধ্যে ফেলে দেয়। এরপর অপর নৈশপ্রহরী সামছুল হককে ঘুম থেকে ডেকে তুলে একই কায়দায় হত্যার পর ট্যাংকির পানিতে ফেলে দেয়া হয়। দুইজনকে হত্যার পর নৈশ প্রহরী হান্নানের মোবাইল ফোন সুমন ব্যাপারীকে দিয়ে গাজিপুর চলে যেতে বলে এবং ফ্যাক্টরির মালিক ও নিহতের পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করার পরামর্শ দেন। গাড়ি চালক ও হেলপারের পরামর্শে সুমন প্রথমে গাবতলী ও পরে গাজিপুরে গিয়ে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ফ্যাক্টরির পানির ট্যাংকি থেকে দুই নৈশ প্রহরীর মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে বগুড়া সদর থানায় মামলা হলে তদন্তদের ভার দেয়া হয় ডিবি পুলিশকে। মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে ডিবি ইনচার্জ সাইহান ওলি উল্লাহের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের টিম ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে অভিযান চালিয়ে গাজিপুর থেকে সুমন ব্যাপারীকে গ্রেফতারের পর অপর ২জনকে বগুড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৫ জনের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার রড উদ্ধার করা হয়েছে। জড়িত অপর ২ জনকে শনাক্ত করা গেছে তাদেরকে গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।