ইফতার পর্যন্ত বাঁচার আকুতি জানানো মোরশেদ হত্যায় গ্রেফতার ৭
ইফতার পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখার আকুতি জানিয়েও খুনের শিকার আলোচিত মোরশেদ আলী ওরফে মোরশেদকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ৫ আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) রাত ৪টার দিকে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানায় র্যাব-৭।
মামলার এজাহারে সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা আলাল ও ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জয়নাল আবেদীন হত্যাকাণ্ডের সময় উপস্থিত শত শত মানুষকে উদ্দেশ্য করে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন— তোমরা মোরশেদ বলিকে বাঁচাতে কেউ আসবে না। তাকে মেরে ফেলার জন্য ওপরের নির্দেশ আছে।
র্যাব জানায়, ভিকটিমের পরিবারের লোকজন পিএমখালী ইউনিয়নের ১০ নং পানি সেচ স্কিম পরিচালনা করে আসছিল। হত্যাকারী আসামিরা অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক ১০ নং পানি সেচ স্কিম নিজেদের দখলে নিয়ে চাষিদের নিকট হতে অতিরিক্ত টাকা দাবিসহ অন্যায় অত্যাচার করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকার কারণে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন উক্ত স্কিম ফিরে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকলে আসামিরা তাদের ওপর ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। নিহত মোরশেদ আলী ছিলেন একজন অন্যায়ের প্রতিবাদকারী। মোরশেদ আলী দুষ্কৃতিকারীদের বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদ করায় বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল। এমনকি বিভিন্ন সময় পথে ঘাটে আক্রমণ করতে গেলে স্থানীয় উপস্থিত লোকজনের কারণে সফল হয় নাই। ঘটনার দিন মোরশেদ বাড়ি হতে বের হয়ে ইফতার সামগ্রী কেনার জন্য কক্সবাজার সদর থানাধীন চেরাংঘর স্টেশনের সবজির দোকানের সামনে পোঁছলে দুষ্কৃতিকারীরা দুই দিকের রাস্তাা বন্ধ করে মোরশেদকে মাটিতে ফেলে প্রথমে ধারালো কিরিচ দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় গুরুতর জখম করে। এরপর আসামি আবদুল্লাহ (৩০) এবং আব্দুল আজিজ (২৮) লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মোরশেদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করলে মোরশেদ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আসামি মাহমুদুল হক ধারলো কিরিচ দিয়ে মোরশেদ আলীর ডান হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। রোজাদার মোরশেদ আলী ইফতার পর্যন্ত বাঁচার আকুতি জানালেও আসামিরা তাকে বাঁচতে দেয়নি। আসামি মোহাম্মদ আলী মোরশেদ আলীর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য হাতুড়ি দিয়ে মোরশেদ আলীর অন্ডকোষে উপুর্যপুরি আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
বাজারের লোকজন ভিকটিমকে উদ্ধার করার চেষ্টা করলে আসামি মোহাম্মদ আলী আগ্নেয়াস্ত্র বের করে ১৫/২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। উপস্থিত লোকজন ঘটনার ভিডিও করতে থাকলে আসামিরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়।
র্যাব আরও জানায়, আসামি মাহমুদুল হক এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। মাহমুদুল তার পরিবারের প্রধান হয়ে সকলের সাথে পরিকল্পনা করে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা স্বীকার করে যে, ১০ নং সেচ স্কিম পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে এলাকার প্রতিবাদী যুবক মোরশেদ আলী তাদের পথের কাটা ছিল। তাই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানায় র্যাব।