ঈদের চারদিনে পঙ্গু হাসপাতালে আট শর বেশি রোগী
মহামারি করোনার কারণে গেল দুই বছর ঈদ উদযাপনে অল্প মানুষই ঢাকা ছেড়েছেন। কিন্তু এবার বিধিনিষেধ না থাকার কারণে চিরচেনা রূপে মুসলিম উম্মাহর বড় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে দেশবাসী। তবে এই আনন্দের মধ্যে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। ঈদের আগে ও পরে মোট চারদিনে শুধু ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালেই আট শর বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হাসপাতালে বেশ কয়েক জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। যার বেশির ভাগই অন্য হাসপাতাল থেকে পাঠানো। দেশের প্রায় সব জেলা থেকেই এখানে ভর্তি হচ্ছে। এই রোগীদের কেউ বাইক দুর্ঘটনার শিকার, কেউ গাড়ি দুর্ঘটনায় বা অন্য কোনো কারণে আহত হয়েছেন। কোনো কোনো রোগীর হাত-পা কেটে ফেলার মতো অবস্থাও রয়েছে। সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে তিন ও দুই চাকার যানবাহনে। আহতদের বেশিরভাগই বয়সে তরুণ। মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৫ শতাংশের পরবর্তীতে বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হবে।
করিম নামে এক অটোরিকশাচালক জানান, তিনি ঈদের আগের দিন কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে অটো চালানোর সময় বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তার অটোরিকশা দুমড়েমুচড়ে যায়। আর করিমের ডান হাত ও বাঁ পা ভেঙে যায়। ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু এই হাসপাতালে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চাপ এত বেশি যে একটি শয্যা তিনি পাননি। তাই তিনি পঙ্গু হাসপাতালে এসেছেন।
পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন আরিফ হোসেন । তিনি জানান, শুক্রবার নরসিংদীর পাঁচদোনায় মোটরসাইকেল থেকে পড়ে তার হাত ভেঙেছে। এখন চাচার সঙ্গে ঢাকায় এসেছেন চিকিৎসার জন্য।
আরিফের পাশেই দেখা যায় হাতে এলবো গার্ড, হাঁটুতে নি-গার্ড পরা তরুণ সিয়াম আহমেদকে। তিনি মাঝবয়সী নাসিরুল ইসলামকে নিয়ে জরুরি বিভাগে এসেছেন। সিয়াম জানালেন, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি বাসের পেছনে তিনি বাইক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পথচারী নাসিরুল হঠাৎই তার বাইকের সামনে এসে পড়ায় তিনি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। দুজনই পড়ে যান। এতে নাসিরের থুঁতনি ও ঠোঁট কেটে গেছে, হাতেও আঘাত লেগেছে।
পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসক জাহাঙ্গীর বলেন, এবার ঈদের সময় পঙ্গু হাসপাতালে রোগী ভতি সংখ্যা একটু বেশি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে। এমনিতে এখানে দিনে গড়ে ২০০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তাঁদের একটি অংশ থাকেন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত। তবে এবার ঈদের আগের দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী তিন দিন প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী এসেছেন গড়ে ২০০ জনের বেশি। ঈদের পরদিন বুধবার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আড়াই শতাধিক রোগী এসেছেন। তাদের মধ্যে ৮৫ জনের অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।
পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার রিপন ঘোষ বলেন, আমার দায়িত্ব পালনকালে কয়েক দিন ধরে জরুরি বিভাগে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি এসেছে। এর মধ্যে ছোট পরিবহন দুর্ঘটনায় বেশি-যাদের অনেকের পা কেটে ফেলার মতো অবস্থাও ছিল।