আমাগো জিগান ক্যান, মেম্বার-চেয়ারম্যান গো জিগান গা
দেশের সবচেয়ে জনবহুল এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া। এখানে অনেক শিল্প কারখানা গড়ে ওঠায় অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এখানকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শিল্প কারখানার শ্রমিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
আশুলিয়ার ডিইপিজেড সংলগ্ন ডিইপিজেড-ভাদাইল সড়কটি দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই কিলোমিটার। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির বেহাল দশা দীর্ঘ ১২ বছর ধরে। বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন হাঁটু পানি ভেঙ্গে কর্মস্থলে যেতে হয় লাখো মানুষকে। পোহাতে হয় অসহনীয় দুর্ভোগ। স্থানীয় এলাকাবাসী নানা জায়গায় এসকল ভোগান্তির কথা জানিয়েও পায়নি কোন প্রতিকার। তবে এবার আশার কথা, নতুন সড়ক নির্মাণে দরপত্র পাস হয়ে ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। কাজ শুরু হবে আগামী মাসে।
রোববার (১৫ মে) সকাল থেকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার ভাদাইল সড়ক প্রায় ২০ ফুট প্রস্থ। সড়কটির বেশিরভাগ স্থানে পানি জমে আছে। বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ ও ভাঙাচোড়া। রিকশা বা মোটরসাইকেলে যাতায়াত করলেও ময়লা পানি শরীরে ছিটকে পড়ছে। অনেকে হেঁটে চরম দুর্ভোগ নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। আবার বাবা ভিজে শিশু শিক্ষার্থী সন্তানকে কোলে নিয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে বাড়ি ফিরছেন। এখানে বসবাসকারী প্রায় লাখো মানুষ নিম্ন আয়ের পোশাক শ্রমিক। রাস্তার বেহাল দশার কারণে পার্শ্ববর্তী দোকানগুলোতে নেই বেচা-বিক্রি। তাদের সবার প্রশ্ন কেন সড়কটির কাজ হচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা সড়কটির দীর্ঘ বেহাল দশায় ক্ষোভ আর আক্ষেপ জানাতেও ভুলে গেছেন। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা এখন বর্ষাকাল। ময়লা পানিই যেন এখন তাদের অপ্রিয় আপনজন।
কত দিন যাবৎ রাস্তার এই অবস্থা? এক দোকানিকে জিজ্ঞেস করতেই রেগে বললেন, আমাগো জিগান ক্যান, মেম্বার-চেয়ারম্যান গো জিগান গা। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর রাস্তার এমন বেহাল দশায় কোনো প্রতিকার না পেয়ে ক্লান্ত-বিরক্ত মানুষগুলো এ ব্যাপারে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। রেগে যাচ্ছেন কেন? বললে দোকানি বলেন, কতজনই আসে, জানতে চায়। কোনো সমাধান তো নাই। এক পথযাত্রী জয়নাল আবেদীন আক্ষেপ নিয়ে বলেন, কী আর বলব ভাই, কাকেই বা বলব। ১২ বছর ধরে রাস্তাটির এমন বেহাল দশা। দেখার যেনো কেউ নেই। রপ্তানিতে চাকরি করি। প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে চলতে হয়। এ রাস্তায় আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। রাস্তাটি চওড়া করা না গেলেও যদি ঠিকমতো পিচ ঢালাই করা হতো আমরা বেঁচে যেতাম।
স্থানীয় বাসিন্দা কুদরত আলী বলেন, এর আগে সড়কটির কাজ করা হয়েছে। তবে আমাদের এলাকার প্রধান সমস্যা হলো নিষ্কাশন ব্যবস্থা। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বারবার সড়কটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে এমন ভোগান্তির মধ্যে আমরা চলাচল করছি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সাভার উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ডিইপিজেড-ভাদাইল সড়কটি প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ। দুই বছর আগে ভাদাইল মোড় থেকে পাবনার টেকের অংশ কাজ করেছে। তবে পরের অংশ ভাদাইল মোড় থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের মুখ পর্যন্ত কাজটি বাকি ছিল। বাকি অংশটুকুর দৈর্ঘ্য প্রায় এক হাজার ২০০ মিটার ও প্রস্থ পাঁচ দশমিক পাঁচ মিটার। ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের আবেদনের ভিত্তিতে সড়কের কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ড্রেন লাইন নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে এলজিইডি থেকে টেন্ডার হয়েছে ও ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। এ মাসের শেষের দিকে বা আগামী মাসের (জুন) শুরুর দিকে সড়কটির কাজ শুরু হবে। প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দে সড়কটি করা হচ্ছে।
ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ দুই বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রায় ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটির সংস্কার কাজ করা হয়েছিল। বাজেট স্বল্পতার কারণে এতো বড় সড়কের কাজ করা পরিষদের জন্য সম্ভব হয়নি। তবে বিভিন্ন সময়ে পরিষদের পক্ষ থেকে সড়কটিতে সংস্কার কাজ করা হয়। মূলত এই এলাকায় আবাসিক এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সড়কে পানি জমে থাকে। বার বার সংস্কার করলেও পানি জমে সড়ক নষ্ট হয়ে যায়। তবে এলজিইডি সড়কের কাজ দ্রুত শুরু করবে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ থেকে করা হবে। এ বিষয়ে সাভার উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামানিক বলেন, সড়কটি এলজিইডির অধীনে। দুই বছর আগে সড়কটির একটি অংশে কাজ করা হয়েছে। মাঝখানে করোনার দুই বছর কোনো ধরনের প্রকল্প পাস হয়নি। প্রস্তাবনা আগেই দেওয়া ছিল। তবে এখন মহাসড়ক থেকে ভাদাইল মোড় পর্যন্ত এক হাজার ২০০ মিটার আরসিসি সড়ক করা হবে। টেন্ডার পাস হয়ে গত ১০ মে ওয়ার্ক অর্ডার হাতে পেয়েছি। আমরা দ্রুতই ঠিকাদারকে সড়ক বুঝিয়ে দেব। আশা করি এ মাসের শেষের দিকে বা জুন মাসের শুরুতেই কাজ শুরু হবে। তবে কেন এত বছরেও কাজ হয়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহ হাসান প্রামানিক বলেন, আড়াই বছর হয়েছে আমি সাভারে যোগ দিয়েছি। ফলে এর আগে কেন হয়নি তা বলা মুশকিল।