‘বিএনপি তাদের মেয়াদে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কলুষিত করেছে’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির নির্বাচন নিয়ে কথা বলার কোনো অধিকার নেই। কারণ, তারা তাদের মেয়াদে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কলুষিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘আজকে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে কিন্তু তাদের নির্বাচনের ইতিহাস এতটা কলুষিত যে তাদের এই নিয়ে কথা বলার কোন অধিকারই নাই। কোন মুখে তারা বলে।’
বুধবার (১৮ মে) রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভায় যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা-১০ এ ফালু (মোসাদ্দেক আলী ফালু) ইলেকশন করেছিল যে ইলেকশনের চিত্র সবার নিশ্চই মনে আছে। মাগুরা ইলেকশন হয়-যে ইলেকশন নিয়েই আন্দোলন করে আমরা খালেদা জিয়া উৎখাত করেছি। মিরপুর ইলেকশন-প্রত্যেকটা নির্বাচনের চিত্রই আমরা দেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৭ সালের ‘হ্যাঁ-না’ ভোট, ’৭৮ এর রাষ্ট্রপতি এবং ’৭৯ এর সাধারণ নির্বাচন, ’৮১ এর নির্বাচন প্রত্যেকটা নির্বাচনই আমাদের দেখা। পাশাপাশি, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটার বিহীন নির্বাচনেরও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমানে নির্বাচন ব্যবস্থার যে উন্নয়ন সেগুলো আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত এবং চিন্তা চেতনার বাস্তবায়ন। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন ব্যবস্থার আধুনিক ও যুগোপযোগিকরণে ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ইভিএম ব্যবস্থা বলবৎ করারও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ সবের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটের অধিকার আবার জনগণের কাছেই ফিরিয়ে দিয়েছে।
আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেলেও দেশ নিয়ে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেনীর মিডিয়াতে ঢালাও সমালোচনার ও উত্তর দেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪১তম ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে ছিল এই সভার আয়োজন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। এসময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পান। পরবর্তী সময়ে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এরপরেই ৬ বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হওয়া শেখ হাসিনা সে সময়কার সামরিক জান্তার রক্তচক্তু উপেক্ষা করে একরকম জোরকরেই ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন।
১৯৮১ সালে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে গেলে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিল বিচারপতি সাত্তার, সে প্রার্থী। সেই নির্বাচনের যেই চিত্র আমরা দেখেছিলাম, সেখানে কোন ভোটের দরকার ছিল না, কোন ভোট হয়নি। নির্বাচন মানেই হচ্ছে সিল মারা,বাক্স ভরা এবং ফলাফল ঘোষণা দেয়া উল্লেখ করে সেই সময়ের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে যে কয়টা নির্বাচন হয়েছে, প্রতিটি নির্বাচনে এটাই হয়েছিল। সংবিধান লঙ্ঘন এবং সেনা আইন ভঙ্গ করে ক্ষমতা দখল করার পর, একদিকে সেনাপ্রধান তারপর স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি এরপরে আবার রাষ্ট্রপতি প্রার্থী। প্রথমে ‘হ্যাঁ,না’ ভোট, এরপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং তারপরে দলগঠন শুরু। প্রথমে জাগো দল,তারপর ১৯ দফা বাস্তবায়ন কমিটি এবং এরপরে তৃতীয় ধাপে এসে সে বিএনপি গঠন করে।
বিএনপিতে স্বাধীনতা বিরোধী,খুনী এবং আওয়ামী লীগের কিছু ‘বেইমান’ও সেখানে যুক্ত হয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খন্দকার মুশতাকও চেষ্টা করেছিল এই দল (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) ভাঙতে। কিন্তু সেও খুব বেশি একটা সুবিধা করতে পারেনি, এরপর করেছে জিয়াউর রহমান।
সরকার প্রধান বলেন, নির্বাচন নিয়ে যে খেলা এবং প্রহসন করা এবং নির্বাচনকে কলুষিত করা এটা জিয়াউর রহমানই শুরু করে। সেই ৭৭,৭৮,৭৯ সাল, সেই সময় এটা শুরু হয়। অর্থাৎ মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া, মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া,গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়া এবং ‘মার্শাল ল’ দিয়ে রাষ্ট্র চালানো। প্রতি রাতে থাকতো কারফিউ। ৭৫ এর পর যে কারফিউ দেয়া শুরু হয়েছিল, সেটা ৮৬ সালে এসে প্রত্যাহার হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ থাকতো। এটাই ছিল বাংলাদেশের চিত্র। কোন মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরার অধিকার ছিল না, কথা বলার অধিকার ছিল না।
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরও নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়েছে জানিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন,
তিনি বলেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় এবং ২১শে অগাষ্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া। ২০০৭ এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে তারেক মুচলেকা দিয়েছিল যে, জীবনে কোনদিন রাজনীতি করবে না। এই মুচলেকা দিয়েই কিন্তু দেশ ছেড়ে চলে যায় সে। সেই বিচারের মামলার রায়ে সে সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের অর্থ আতœস্মাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া।
যাই হোক, কারাগার থেকে এখন তাকে বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছি,অসুস্থ সেজন্য। এইটুকু মানবিকতা দেখিয়েছি। যে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, বারবার তাকেই আমি করুনা ভিক্ষা দিয়েছি, যে কারনে সে এখন বাসায় থাকতে পারে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেও এইটুকু সুযোগ তাকে আমরা দিয়েছি। এটা নির্বাহী আদেশেই দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি দিয়ে নির্বাচন করে জেতা যায় না। আর নির্বাচনে পরাজয় হবে জেনেইতো তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। কলুষিত করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু নতুন আঁতেল আবার জুটেছে, একজন অর্থনীতিবিদ তো বলেই দিল, রুপপুরে তাঁর সরকার যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছে, সেটা নাকি অর্থনৈতিক ভাবে ভীষণ ক্ষতিকর। আর বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়নটা বাইরের লোক দেখলেও তারা চোখে দেখে না। তিনি বলেন, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটা হচ্ছে সবথেকে পরিবেশ বান্ধব। আর তাঁর সরকার গ্যাস ভিত্তিক, তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছে- যেগুলো অনেক ব্যয় বহুল এবং গ্যাসের রিজার্ভ এক সময় নি:শেষ হয়ে গেলে, এই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রইতো বিদ্যুতটা দেবে। এটা দেশের অর্থনীতিতেও অনেক বেশি অবদান রাখবে।
এক সময় ‘কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট’ এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নিয়েও অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের করে দেয়া বেসরকারি টেলিভিশন এবং অবাধ তথ্য প্রবাহের সুযোগ নিয়েই আজকাল ‘টক শো’ সহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে সরকারের সমালোচনা চলছে। যে সুযোগ জিয়া,এরশাদ বা খালেদা জিয়া কারো আমলেই ছিল না। প্রধানমন্ত্রী এসময়ে আক্ষেপ করে বলেন, নানা ‘টক শো’তে ঢালাও সরকার বিরোধী সমালোচনা করা হয়, যেখানে তাদের কেউ কন্ঠ রোধ করেনা। কিন্তু তারপরেও সব কথা শেষে তারা এটাও বলে যে, তাদেরকে কথা বলতে দেয়া হয়না। প্রধানমন্ত্রী এই শ্রেনীর লোকজনের দেশ পরিচালনার খায়েস থাকলে তাদের ভোটের মাঠে নেমে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসারও আহবান জানান। দিনরাত কথা বলার পরেও বিএনপি নেতৃবৃন্দের আহবানে জনগণ সাড়া না দিলে, দোষটা কার সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি’র পদে থাকা না থাকাকে কেন্দ্র করে, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে অর্থনীতিবিদ ড. ইউনুস এবং একটি ইংরেজী জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকের কর্মকান্ডেরও সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে আজ পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করতে পারাকে ‘শাপে বর’ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে, এখন আর সেটা নিয়ে কথা বলে লাভ নেই বিধায় এখন পদ্মা সেতুর রেললাইন নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এ বাবদ ঋণের টাকা কিভাবে শোধ হবে, কারণ দক্ষিণ বঙ্গের কেউতো রেলে চড়বে না। তারা লঞ্চে যাতায়াত করে থাকে। কাজেই এটা ভায়াবল হবে না, এমনই তাদের বক্তব্য।
আবার বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া একটার পর একটা স্প্যান বসানোকে বলেছিল, ‘জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু করা হচ্ছে, ওখানে চড়া যাবেনা। চড়লে ওটা ভেঙ্গে পড়বে।’ তার সাথে আবার তথাকথিত কিছু বু্দ্ধিজীবী যোগ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী এগুলোকে ‘অর্বাচীনের মত কথা’ বলে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের জন্য ভাল কিছু করলেই তাদের গায়ে লাগে। কেন? সে প্রশ্নও করেন প্রধানমন্ত্রী এবং এরা ’৭১ এর পরাজিত পাকিস্তানীদের পদলেহনকারি কিনা সে কথাও জানতে চান।