সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সাভার উপজেলার বহু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এরমধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বিশমাইল জিরাবো ও বাইপাইল আব্দুল্লাহপুর মহাসড়ক। প্রতিনিয়ত এই দুটি সড়কে দুর্ঘটনার পাশাপাশি অনেক মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করছে। দুই দশক ধরে এই দুটি সড়কের বেহাল দশা হলেও মেরামত করার যেন কেউ নেই। গার্মেন্টস শ্রমিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন কারখানার বায়ারসহ সাধারণ মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে। কাঁদা পানিতে হাঁটার কারণে বিভিন্ন বয়সী মানুষের জামা কাপড় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই দুটি সড়কের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়কে পিচঢালাই উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো সড়ক কাঁদা পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। এসব রাস্তা দিয়ে হাঁটাও ভীষণ কষ্টকর। ইয়ারপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক, আশুলিয়া, শিমুলিয়া, সাভার সদর, বিরুলিয়া, পাথালিয়া ইউনিয়নের বিশমাইল-গকুলনগর সড়ক সহ বিভিন্ন সড়কের বেহাল দশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেরামত করার যেন কেউ নেই।
বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, প্রায়ই সড়কের কাজ করা হয়। সড়ক সংস্কারের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ এলেও দায়সারাভাবে কাজ করা হয়। তাই কিছুদিন যেতে না যেতেই রাস্তা-ঘাট আবারও খানাখন্দে ভরে যায়। এছাড়া পরিকল্পিত পয়োনিষ্কাশন (ড্রেনেজ) ব্যবস্থা না থাকায় পানি জমে সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
এলাকাবাসী ও সড়ক ব্যবহারকারীরা দ্রুত রাস্তাগুলো মেরামত করে যানচলাচলের উপযোগী করে তোলার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
দ্রুত সিরাজগঞ্জে যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও খাল-বিলের পানি কমছে। ফলে জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। কিন্তু চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পানিবন্দি অসংখ্য মানুষ। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবের পাশাপাশি বাড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ। চরাঞ্চলে রয়েছে গো-খাদ্যের সংকট।
রোববার (২৬ জুন) সকালে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২ সেন্টিমিটার কমে শহরের হার্ডপয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পানি কমা অব্যাহত থাকবে।
জানা যায়, দুই সপ্তাহ ধরে বন্যার্থদের বাড়িতে পানি ওঠায় অধিকাংশ সময় পানিতেই থাকতে হচ্ছে তাদের। তলিয়ে গেছে রান্নার মাটির চুলা, গবাদি পশু রাখার স্থান, টয়লেট, টিউবওয়েলসহ চরাঞ্চলের নানা ধরনের ফসল ও সবজিক্ষেত। পরিবারগুলো উঁচু স্থানে আশ্রয়ের জন্য চলে গেছে অন্যত্র। এতে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। বাড়ি-ঘরে পানি ওঠায় নৌকায় ও মাচায় দিনে একবেলা রান্না করে তিন বেলা খেতে হচ্ছে। বন্যার কারণে আয়-রোজগার বন্ধ তাদের। বন্যাকবলিত এলাকায় শিশুখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। দোকান থেকে অতিরিক্ত দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। বন্যার পানিতে ক্ষেত তলিয়ে যাওযায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা।
যমুনা নদীর সঙ্গে জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ইছামতি, ফুলজোড়, হুড়াসাগর, বড়াল ও চলনবিলেও পানি কমছে। চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের কিছু বসতবাড়ি এখনো পানিতে নিমজ্জিত থাকলেও অধিকাংশ এলাকার বতসবাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। ফলে বাড়ি ফিরছে সেখানকার বসতিরা। চলতি বন্যায় জেলায় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমির আমন বীজতলাসহ উঠতি ফসল নষ্ট হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুড়ী গ্রামের খামারি মুক্তা হোসেন বলেন, গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় আমরা নেপিয়ার ঘাস আবাদ করে গরুকে খাওয়াই। কিন্তু জমি তলিয়ে থাকায় এখন কেনা খাদ্য গরুকে খাওয়ানো ছাড়া উপায় নেই।
আরেক খামারি আবুল কালাম বলেন, সবুজ ঘাস গরুকে খাওয়ালে বেশি দুধ হতো। বন্যার পানি আসায় মাঠ তলিয়ে গেছে। যার কারণে আমাদের খামারের গরুগুলোকে খড়, ভুসি, খৈল, সয়াবিনসহ দানাদার খাবার দিতে হচ্ছে। ঘাস না খাওয়ার কারণে দুধ হচ্ছে কম।
তিনি আরও বলেন, রাউতারা রিং বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ফসলের মাঠ ও গো-চারণ ভূমি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঘাসের জমি ডুবে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। মাঠে নেপিয়ার ঘাসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামের কাঁচা রাস্তা বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে।
জেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ কুমার জানান, জেলায় ৯ লাখ গরু, সাড়ে ৩ লাখ ছাগল ও ২ লাখ ভেড়া রয়েছে। বন্যায় পানি বাড়ায় গোচারণ ভূমি বন্যা কবলিত হওয়ায় কৃষক ও খামারিদের ঘাসের অভাব দেখা দিয়েছে। বিষয়টি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানিয়েছে। সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে কৃষক ও খামারিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
এদিকে, বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে ৯ হাজার ১০৬ হেক্টর জমির রোপা আমন, তিল, মরিচ, বাদাম, রোপা আমন, শাক-সবজি, বীজতলাসহ উঠতি ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকরা। অন্যদিকে জেলার নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চল এলাকার ৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
ফরিদপুরে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে লাশ উদ্ধার
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফরিদপুর
ফরিদপুরে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে লাশ উদ্ধার
জাতীয়
ফরিদপুরের কৃষ্ণনগরের ইউনিয়নের গাবির বিলের কলাবাগান থেকে এক কাঁচামাল ও গরু ব্যবসায়ী লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রোববার (২৫ জুন) সকালে ৯৯৯ নম্বর থেকে ফোন পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠায়।
নিহত ব্যক্তির নাম শরীফ শেখ (৩৫)। তিনি একই ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের নিমাই শেখের পুত্র। নিহত শরীফ নিজ বাড়ির অদূরের স্থানীয় বাজারে কাঁচামাল ব্যবসায়ী ছিলেন এবং কোরবানির ঈদের সময় গরু কেনাবেচার ব্যবসা করতেন।
পরিবারের দাবি, তার কাছে গরু কেনা বেচার কয়েকলাখ টাকা ছিলো, ওই টাকার জন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, শরীফ গত রাত দশটার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন, সকালে স্থানীয়রা কলা বাগানের পাশের মরিচ ক্ষেতে গিয়ে তার লাশ দেখতে পেয়ে পরিবাররের সদস্যদের ও ৯৯৯ নম্বরে জানায়।
কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম মোস্তফা জানান, নিহত শরীফের মাথা কুপিয়ে তিনটি খণ্ড করা হয়েছে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার জানান, ৯৯৯ নম্বরে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করি। হত্যাকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে এবং হত্যার সাথে সম্পৃক্তদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি আবার কিছুটা খারাপের দিকে এজন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আহবান জানানো হচ্ছে।
রোববার (২৬ জুন) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ ২০২২-এ সেরা মেধাবীদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেধা অন্বেষণের মাধ্যমে অনেক সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয়। এর আয়োজনে যারা রয়েছেন সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ সময় তিনি নতুন প্রজন্মকে ভবিষ্যত বাংলাদেশকে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। বিজ্ঞান চর্চা ও প্রযুক্তি জ্ঞানের মাধ্যমে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। আমরা বীরের জাতি। আমরা কখনও কারো কাছে মাথা নত করি না।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব বক্তব্য রাখেন। এ সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পদ্মা সেতু সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে উৎসবমুখর পরিবেশে সেতু পার হতে শুরু করেছেন অসংখ্য মানুষ।
রোববার (২৬ জুন) সকাল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়। মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া প্রান্ত ও শরিয়তপুরে জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজা দিয়ে প্রায় সমহারে যান চলাচল করতে দেখা গেছে।
প্রথম পদ্মা সেতু পারাপার হওয়ায় অনেকেই আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে এসেছে কালের সাক্ষী হতে। উচ্ছ্বাস করতে দেখা গেছে। দীর্ঘ দিনের নদী পথের ভোগান্তির শেষ পদ্মা সেতুকে সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে দেখছেন যাত্রী ও পরিবহন চালকরা। নির্ধারিত মূল্যে টোল দিয়ে সেতু পার হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল উৎসব। অনেকেই মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা নদী পার হচ্ছেন।
গণপরিবহনের আগেও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের পরিবহন আনুষ্ঠানিক পদ্মা সেতু পার হলেও এবারই প্রথম যাত্রী পারাপার শুরু হয়েছে।
সাইফুর নামে এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, আমি রাত থেকে অপেক্ষায় ছিলাম, মোটরসাইকেল নিয়ে সেতুতে ওঠার জন্য। ভোরে এসে টোল প্লাজার সামনে দাঁড়াই। সাড়ে ৬টার দিকে টোল দিয়ে সেতুতে পদ্মা পাড়ি দিলাম। বোঝাতে পারব না কতটা ভালো লাগা কাজ করছে। দীর্ঘ দিন ধরে ফেরিতে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তার সমাপ্ত হলো আজকে।
সোহেল রহমান নামে এক যাত্রী জানান, সেতু দিয়ে পাড় হলাম। অসাধারণ অনুভূতি। এবার ঈদে মানুষের কষ্টের লাঘাব হবে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলী (তত্ত্বাবধায়ক) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে উৎসুক মানুষের আগ্রহ বেশি। এজন্য সকালে চাপ ছিল গাড়ির। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। দক্ষিণবঙ্গগামী ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ বেশি আছে।
এর আগে শনিবার (২৫ জুন) মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় ১২টায় এক বণার্ঢ্য অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিকসহ হাজার হাজার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী টোলপ্লাজায় প্রথম টোল দেন এবং তার গাড়িবহর নিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দেন।
৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হয়েছে স্বপ্নের এ সেতু। খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৪ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পদ্মা সেতু খুলে দেয়ায় সম্ভাবনা আর প্রত্যাশার নতুন দিক উন্মোচিত হলো।