কুড়িগ্রামে তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান স্থগিত
ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে প্লাবিত এলাকার পরিধি, বাড়ছে দুর্গত মানুষের সংখ্যা। প্রশাসনের দেওয়া তথ্য মতে, চলমান বন্যায় জেলায় ৯ উপজেলার ৪৯ ইউনিয়নের ৩৫ হাজার ৪০৩ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় ২৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৩২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান স্থগিত রাখা হয়েছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জেলায় প্রতিটি উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকল দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্গত এলাকায় সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে বিতরণের ধীর গতিতে এখনও অনেক দুর্গত এলাকার মানুষ সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি সামন্য কমে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ব্রহ্মপুত্র নদ নুনখাওয়া পয়েন্টে স্থিতিশীল থাকলেও চিলমারী পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদনদীর পানি বেড়ে জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে পাউবো।
এদিকে জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের বরাত দিয়ে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠ ও আশেপাশের এলাকা প্লাবিত হওয়ায় জেলার ৯ উপজেলার ২৯৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান স্থগিত রয়েছে। এছাড়াও ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭ টি মাদরাসা ও ১টি কলেজের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে নাগেশ্বরী উপজেলায় ৭৯টি। এরপরেই রয়েছে রৌমারী ৬৮টি। এছাড়াও উলিপুরে ৫৮, চিলমারীতে ৩৮, সদরে ১৮, রাজীবপুরে ১৭, ভূরুঙ্গামারীতে ৭, ফুলবাড়ীতে ৬ এবং রাজারহাটে ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।
চলমান বন্যায় মানুষের সাথে গবাদি পশু পাখিও চরম ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে প্লাবিত এলাকায় প্রায় ৪২ হাজার গরু, মহিষ ও ভেড়া বন্যা কবলিত হয়েছে। আর মৎস্য বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে জেলায় ১৩৩ দশমিক ৭৯ হেক্টর পুকুর ও জলাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৬৬ দশমিক ৬১ মেট্রিক টন মাছ এবং ৬ দশমিক ৫৫ মেট্রিক টন মাছের পোনা ভেসে গেছে। এ খাতে এ পর্যন্ত প্রায় কোটি টাকার ওপর ক্ষতি হয়েছে বলে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, বন্যা মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যাদের ঘরবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে তাদেরকে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা বিদ্যালয় ভবনে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।